X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন স্থগিত: এক বছরেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন

জাকিয়া আহমেদ
১৩ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৪১আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ২২:০১

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন স্থগিত: এক বছরেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ চার কারণ দেখিয়ে ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারিতে হতে যাওয়া ভিটামিন ‘এ প্লাস’ ক্যাম্পেইনের কার্যক্রম আগের রাতেই স্থগিতের ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর ওই ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা.  এএইচএম এনায়েত হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিলেও গত এক বছরেও তা আলোর মুখ দেখেনি। প্রতিবেদন প্রকাশ না করা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করার মতো নয়। তাই প্রকাশ করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ জানুয়ারি দেশজুড়ে ভিটামিন ‘এ প্লাস’ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হওয়ার ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই আগের রাতে ওই ক্যাম্পেইন স্থগিত করা হয়। ওই সময় বলা হয়েছিল, চার কারণে  এই ক্যাম্পেইন স্থগিত করা হয়। কারণগুলো হলো—ক্যাপসুলের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা, ছত্রাকের বিস্তার, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব ও শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি।
ওই সময় জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মো. ইউনুস বলেছেন, ‘মাঠপর্যায়ে কয়েক জায়গা থেকে লাল ক্যাপসুলের একটির সঙ্গে আরেকটির লেগে থাকার অভিযোগ আসায় ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ কারণেই ওই ক্যাম্পেইন স্থগিত করা হয়েছিল।’

একই কথা বলেছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। তিনি বলেছিলেন, ‘মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন স্থগিত করা হয়।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘ভারতীয় ওই কোম্পানির কোনও সুনাম নেই, এক অখ্যাত কোম্পানি আদালতে মামলা করে নিম্নমানের ভিটামিন এ প্ল্যাস ক্যাপসুল কিনতে তাদের বাধ্য করে।’ এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি বলেছিলেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালে এই ক্যাপসুল কেনার কাজ শুরু হয়। তখন প্রথমে একটি দেশি ওষুধ কোম্পানিকে ক্যাপসুল সরবরাহের কাজ দেওয়া হলে একটি বিদেশি কোম্পানি আদালতে যায় সরবরাহ কার্যাদেশের বিরুদ্ধে। আদালত পরে ওই বিদেশি কোম্পানিকে সরবরাহের কাজ দেওয়ার নির্দেশ দিলে ভারতীয় অ্যাজটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওই ক্যাপসুল সরবরাহ করে।

এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরেজ ডিপার্টমেন্ট ও জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির কারণে গত বছর ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল। জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান ও সিএমএসডি এনওসি আগে না নিয়ে ওষুধ অর্ডার করেছে। তাদের প্রকিউরমেন্ট প্রসেস ছিল না। এসব কারণে ওই সময় ভিটামিন ‘এ প্লাস’ ক্যাম্পেইন স্থগিত করা হয়েছিল।

ভিটামিন এ ক্যাপসুল ক্যাম্পেইন স্থগিত হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদতর থেকে বলা হয়েছিল, এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু ওই কমিটির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন গত এক বছরেও প্রকাশিত হয়নি।  

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম ইসলাম বলেন, ‘বাইরে থেকে ওষুধ আনার জন্য নো-অবজেকশন লেটার (এনওসি) দরকার হয়, এটা দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। কিন্তু যখন এটি আনা হয়, তখন তারা এনওসি পাচ্ছিলো না। কিন্তু ওষুধ তো তৈরি হয়েছিল। এর ফলে উচ্চ আদালতে তারা (ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি)  আবেদন করে। কিন্তু যখন তারা অনুমতি পায়, ততদিন অনেক দিন পার হয়ে যায়। পরে সে ওষুধ সঠিকভাবে স্টোরেজ না হওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছিল।’  

এনওসি ছাড়া কীভাবে ওষুধ এলো—জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘‘দোষটা ছিল তাদের, যারা ‘প্রকিউরমেন্ট প্রসেস’ করেছে কিন্তু এনওসি নেয়নি। কারণ তারা আগে এনওসি না নিয়ে অর্ডার দিয়েছে।’’ কারা এমন কাজ করেছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান এবং সিএমএসডি। এই দুটো প্রতিষ্ঠান যদি তাদের কাজটা ঠিকমতো করতো, তাহলে এ সমস্যা হতো না। এককথায় বলতে গেলে যারা ‘প্রকিউরমেন্ট প্রসেস’ করেছে, তারা ঠিকমতো স্টেপগুলো না মানায় এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল।’’

এদিকে, এই ঘটনায় গঠিত কমিটির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন গত এক বছরেও প্রকাশিত না হওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এটি প্রকাশ করার মতো কোনও প্রতিবেদন নয়। তাই প্রকাশও করা হয়নি। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্টদের দাবি, ‘বাংলাদেশে কোনও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করার নজির নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও এর ব্যতিক্রম নয়।’

তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ করে স্থগিত করার বিষয়টি ঠিক ছিল না কিনা, তা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলাম আমি। আমাদের প্রতিবেদন সিদ্ধান্ত ঠিক বলে জানিয়েছি। স্থগিত না হলে জনমনে এক ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতো, সে হিসেবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। ওষুধ ভালো কিনা, সেটা নির্ণয় করার অধিকার-ক্ষমতা আমাদের ছিল না।’

আর প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান বলেন, ‘আমার কাজ ছিল রিপোর্ট দেওয়া, আমি দিয়েছি, আর কিছু বলতে পারবো না’। 

এদিকে, তদন্ত কমিটির দেওয়া রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি কেন জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘এটা তো প্রকাশ করার মতো কোনও প্রতিবেদন নয়।’ তাই প্রকাশ করা হয়নি বলেও তিনি জানান।

/এমএনএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা