X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বেচ্ছাচার, জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ ছয় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

এস এম আববাস
২৫ জানুয়ারি ২০২০, ১২:১২আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ১২:১৩

মাউশি

অনিয়ম, অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচার, আর্থিক দুর্নীতি ও এমপিও জালিয়াতির অভিযোগে দেশের ছয় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। এসব অধ্যক্ষের মধ্যে একজনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মাসেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয় হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থান থাকলেও তা ঠিকমত কাজে আসছে না। প্রতিমাসেই কোনও না কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান বা শিক্ষককের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে শাস্তি হচ্ছে। তারপরও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, শিক্ষকদের নৈতিক অধঃপতন এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ  বা কমিটির কারণেই এমনটা ঘটছে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, ‘মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থানে। আগের চেয়ে খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও বন্ধ হচ্ছে না। কারণ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে অনেক প্রভাবশালী লোকজন থাকে, এসব বিভিন্ন কারণে অধ্যক্ষ বা পরিচালনা পর্ষদ বা কমিটির সদস্যরা নিজেদের স্বার্থে অন্যায় কাজে জাড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি কেমন হবে, তার নীতিমালা তৈরি করছি। নীতিমালা হলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে আশা করছি।’  

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘কঠোর অবস্থানে থাকার কারণে দুর্নীতি অনেকটাই কমে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি বা পর্ষদের প্রভাবের কারণে শিক্ষকরা অন্যয় কাজে জড়াচ্ছেন। আর সে কারণে মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন করছে। এটি চূড়ান্ত হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।’

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানপ্রধানসহ কিছু মানুষের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে এই পরিস্থিতিরে শিকার হচ্ছি সবাই।  সে কারণেই অনেকেই শাস্তির চিন্তা না করেই অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সংশোধিত নীতিমালা চূড়ান্ত হলে এমনটি থাকবে না। আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার আটলিয়া সিদ্দিকিয়া আলিম মাদ্রাসার অফিস সহকারী নিয়োগে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন অধ্যক্ষ। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান পাওয়া সাইদুর রহমানকে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি নিয়োগের সুপারিশ করেন। কিন্তু অধ্যক্ষ অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্তি আবেদনে সুপারিশ করেন। এই ঘটনায় গত ২ জানুয়ারি অধ্যক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। সেই চিঠিতে এই ঘটনাকে অসদাচরণ, দুর্নীতি ও জালিয়াতির শামিল বলে উল্লেখ করা হয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সই জাল করে রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলা চৌধুরাণী ফাতেহিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আরবি বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ১ জানুয়ারি তদন্তের নির্দেশ দেয় অধিদফতর।

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর কোর্ট মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এ কে এম কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, আর্থিক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেন সাবেক অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সদস্য মো. শফিকুর রহমান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এই অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাউশির মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়। মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশের পর গত ২১ জানুয়ারি রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালককে তদন্তের নির্দেশ দেয় মাউশি।

সিলেটের বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নেছার আহমেদ জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কলেজ পরিচালনা করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণ পায় অধিদফতর। এই ঘটনায় অধ্যক্ষকে সতর্ক করা হয়। অভিযোগ প্রমাণের কারণে মাউশি গত ২৩ জানুয়ারি অধ্যক্ষকে সতর্ক করেন। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে সাত কর্মদিসের মধ্যে মাউশিতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

নারয়ণগঞ্জের কদম রসুল কলেজের অধ্যক্ষ অর্থনীতি বিভাগের একজন প্রভাষককে চাকরিতে পুর্নবহাল করেননি। পরে অর্থনীতির প্রভাষক শামীমা ইয়াসমিন প্রধানমন্ত্রী কার্যায়ের মুখ্য সচিব বরাবর আবেদন করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে পুর্নবহালের নির্দেশ দিয়ে মাউশির মহাপরিচালককে ব্যবস্থা নিতে বলে। ২০ জানুয়ারি মাউশি এই প্রভাষককে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়।

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রাতারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, প্রতিষ্ঠান পারচালনায় বিধি অনুসরণ না করা, নিরীক্ষা কমিটিকে হিসাব না দেওয়া, রশিদ ছাড়া টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। গত ২০ জানুয়ারি এসব অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুজিবনগর দিবস পালনের নির্দেশ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই ধাপে কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ পালনের নির্দেশ
টেস্ট পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি নিলে ব্যবস্থা
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী