‘এই হরতালের কোনও দাম নাই। হরতালের দিন শেষ। মানুষ এখন বুঝে। এসব হরতাল মেনে কোনও লাভ নেই।’ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হওয়া সিএনজি অটোরিকশাচালক আসলাম মিয়া এভাবেই হরতাল প্রসঙ্গে কথাগুলো বললেন। আর বাসচালক শামীম বলেন, ‘হরতাল মানলে কি আমগো পেট চলবো? তারা হরতাল ডাকছে ডাকুক। আমগো পেটের ক্ষুধা মিটাইতে হইবো। বাড়িতে বইয়া থাকলে কি বিএনপি আমগো খাওয়াইবো? না। আমগো গাড়ি চালাইতে হবে।’
বিএনপির ডাকা হরতাল প্রসঙ্গে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) হরতালের মধ্যেও রাজধানীতে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সকাল থেকেই লোকজনকে কর্মস্থলে ছুটতে দেখা গেছে। দোকানপাটও খোলা আছে। ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় হরতালের খুব একটা প্রভাব নেই বললেই চলে। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা যায়।
শনিবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল বর্জন করে সকাল-সন্ধ্যা হারতালের ডাকা দেয় বিএনপি।
সাধারণ মানুষ জানিয়েছে, হরতাল ডেকে লাভ নেই। আমাদের কাজ করে খেতে হবে। বাসায় বসে থাকার কোনও সুযোগ নেই। বিএনপি কথায় কথায় হরতাল ডাকে, কিন্তু তারাই রাস্তায় নামে না। তারা হরতাল ডেকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করে। তাই আমরা হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছি।
সরেজমিনে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বনানী, মহাখালী, বিজয়সরণি, মিরপুর, বাড্ডা, রামপুরা, গুলশান এলাকায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। হরতালের মধ্যেও বনানী, মহাখালী, সাতরাস্তা, বিজয়সরণি, বাড্ডা, পল্টন, এলাকায় যানবহনের জট দেখা গেছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফারহান সাদিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমনিতে শুক্রবার সকারি ছুটি গেছে। শনিবার গেল সিটি নির্বাচন। এই দু’দিন অফিস বন্ধ ছিল। রবিবার অফিস খোলা। বিএনপি হরতাল ডাকছে, ডাকুক। আমাদের অফিসে যোতে হবে আমরা অফিসে যাবো। হরতাল বলে বাসায় বসে থাকার সুযোগ নেই।’
বনানী বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ফয়সাল রাজু। তিনি পল্টন যাবেন ব্যবসার কাজে। হরতাল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হরতাল আবার কী? এসব হরতাল কেউ মানে? পান থেকে চুন খসলে হরতাল। এসব হরতালে ভয় পেলে আমাদের ব্যবসা চলবে না। কাজ করে সংসার চালাতে হয়। হরতাল বলে বাসায় বসে থাকলে ব্যবসা লাটে উঠবে।’
হরতালে যাতে বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য রাজধানী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি)মাসুদুর রহমান বলেন, রাজধানী জুড়ে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সেজন্য পোশাকে, সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। কেউ যদি কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।