উহানফেরত ৩১২ বাংলাদেশিকে আলাদা করে কোয়ারেইন্টাইন করার মতো জায়গা না থাকায় তাদের হজক্যাম্পে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর পরামর্শেই ৩১২ জনকে একসঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) নতুন করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এই তথ্য জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।
অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘বেশিরভাগ জায়গায়ই হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা উহান থেকে এসেছেন। বেশ বড় একটি দল। তাই তাদের এখানে রাখা হয়েছে। তবে, আমরা যে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, সেটাই ঠিক প্রস্তুতি ছিল, যে কার্যক্রম নিয়েছি সেটাই পরিচালনা করছি।’
আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, ‘যদি রোগী শনাক্ত হয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব, তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলা, তার কাছ থেকে যেন সবার মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
সিঙ্গাপুরে নতুন করে বাংলাদেশি কেউ নেই
করোনা আক্রান্ত চার বাংলাদেশির মধ্যে আইসিইউতে আছেন একজন, বাকিরা আইসোলেশনে আছেন বলে জানান অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, ‘দেশে নজরদারির একটা বড় অংশ আইইডিসিআরের হটলাইনের মাধ্যমে হয়। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় ১২২টি কল এসেছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ নিয়ে কল এসেছে ৯৩টি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইইডিসিআর ৬২টি নমুনা পরীক্ষা করেছে। কারও শরীরে কোভিড-১৯-এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।’
আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন বলেন, ‘গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান থেকে আসা ৩১২ জনকে আশকোনা হজক্যাম্পে ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। আজ বিকেলে তাদের ১৪ দিন পূর্ণ হবে। এখন পর্যন্ত ৩১২ জনই সুস্থ আছেন। তাদের কারও মধ্যে কোভিড-১৯-এর কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ পাওয়া যায়নি। এরপরও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী আবারও তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।’
৩১২ জনের পাসপোর্টসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট রয়েছে উল্লেখ করে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, ‘তারা যেহেতু ফিরে যাবেন, সেহেতু অতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে তারা মাস্ক, স্যানিটাইজার দেওয়া হবে। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর তাদের করণীয় কী হবে, সে বিষয়েও বলা হবে।’ হজক্যাম্পে চারটি ডেস্ক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন ভিন্ন বিষয়
আইসোলেশন ও কোয়ারেইন্টাইন দুটো ভিন্ন বিষয় মন্তব্য করে অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘যদি কাউকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহ করা হয়, কেবল তাকেই আসোলেশনে রাখা হয়। আর যারা করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছেন বা করোনা আক্রান্ত এলাকা থেকে এসেছেন অথবা করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের কোয়ারেইন্টাইনে রাখা হয়।’
চীন থেকে এলেই করোনায় আক্রান্ত নন
কেউ একজন চীন থেকে এলেই তাকেই করোনা আক্রান্ত বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেন আইইডিসিআর পরিচালক। তিনি বলেন, ‘চীন থেকে এলেই তিনি করোনাতে এক্সপোজড নাও হতে পারেন। এখানে ভুল বোঝাবুঝি বা বিভ্রান্তি হচ্ছে। চীন বা সিঙ্গাপুর থেকে এলেই যে তিনি করোনা আক্রান্ত বা আক্রান্ত হতে পারেন, তা নয়। আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তাদের ১৪ দিন বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। জরুরি প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করছি। বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি। প্রথম দিকে চীনের ফ্লাইটকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হলেও পরে অন্যান্য ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।