X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পোস্টারে সমতা, প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি ঢাকা পড়বে না আকাশ

সাদ্দিফ অভি
০২ মার্চ ২০২০, ২২:৩০আপডেট : ০২ মার্চ ২০২০, ২২:৩৫

ঢাকা-১০ আসনে উপনির্বাচন

যে কোনও নির্বাচন এলেই শহরের রাস্তাঘাট ছেয়ে যায় নির্বাচনি পোস্টারে। তাতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথে আকাশ দেখাই কষ্টকর হয়ে যায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে নগরবাসীর। এ নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, আছে পরিবেশদূষণেরও ভয়াবহ অভিযোগ। এসব বিষয় আমলে নিয়ে প্রথমবারের মতো নির্দিষ্ট স্থানে পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ফলে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে শুধুমাত্র ২১টি নির্দিষ্ট স্থানে পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণার সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা। এই আচরণবিধি পালনে প্রার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসির দাবি, এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে, কমবে দূষণ। স্বস্তি পাবেন নগরবাসী। ইসির এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে প্রার্থীদের পাশাপাশি নির্বাচন বিশ্লেষক এবং পরিবেশবাদীরাও।     

ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। এরপর এই আসন শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ঢাকা-১০ আসনে উপ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ৬ ফেব্রুয়ারি। এই আসনে উপনির্বাচন হবে ২১ মার্চ। যাচাই বাছাই শেষে  ৬ জনকে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এরা হলেন–আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল ইসলাম (নৌকা), বিএনপি প্রার্থী শেখ রবিউল আলম (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির হাজি মো. শাহজাহান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিজানুর রহমান চৌধুরী (ডাব), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী (হারিকেন) এবং প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের আবদুর রহিম (বাঘ)। 

ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে সব প্রার্থীর পোস্টার সাঁটানোর জন্য এমন নির্দিষ্ট বোর্ড করেছে ইসি। আসনটির ২১টি স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী সব দলের প্রার্থী সমান সুবিধা পাচ্ছেন। এর বাইরে কোথাও পোস্টার লাগাতে পারবেন না প্রার্থীরা

নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা যেমন ইসির বড় চ্যালেঞ্জ, তেমনই পরিবেশদূষণ ও জনদুর্ভোগের বিষয়গুলোও বরাবরই এসেছে আলোচনায়। তাই এই উপনির্বাচনে আচরণবিধিতে বিশেষ সংশোধনী এনে সব দিক সামাল দেওয়া যায় কিনা তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইসি। কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো পরীক্ষামূলক হলেও সব পক্ষের জন্য সহনীয় হওয়ায় এতে সায় দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর প্রার্থীরা। ইসিও আচরণবিধিতে সংশোধন এনে এই ছয় প্রার্থীর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এতে সাফল্য পেলে জাতীয় পর্যায়ে এই আচরণবিধি বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও আছে নির্বাচন কমিশনের।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনের প্রচারে প্রার্থীদের সমঝোতা সফল হলে জাতীয় পর্যায়ে আচরণ বিধিমালা পরিবর্তন করা হবে।

সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল সুবিধামতো জায়গায় পাঁচটি করে পথসভা করতে পারবে। যেখানে একদল পথসভা করবে, সেখানে আরেক দলের সভা করা যাবে না। ভোটের দিন গাড়ি চলবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে নির্বাচনি ক্যাম্পে মাইক ব্যবহার করা যাবে। এর বাইরে মাইক বাজানো যাবে না। নির্ধারিত ২১ জায়গায় প্রার্থীরা পোস্টার সাঁটাতে পারবেন। এর বাইরে কোথাও পোস্টার টানাতে পারবেন না।

এছাড়া হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আর লেমিনেটেড পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না।  

নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা নির্ধারিত বোর্ডগুলোতেই প্রার্থীরা পোস্টার লাগালে পরিবেশদূষণ রোধ করা সম্ভব হবে।

ঢাকা-১০ আসনের পোস্টার লাগানোর নির্দিষ্ট  জায়গাগুলো হচ্ছে–হাজারীবাগ সেকশনের ময়না মার্কেট, হাজারীবাগ উচ্চ বিদ্যালয়, হাজারীবাগ পার্ক, হাজারীবাগ ট্যানারি মোড়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি, গণকটুলি চৌরাস্তা মোড়ের বিডিআর ৫ নম্বর গেট, রায়ের বাজারের জরিনা সিকদার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের কাকলী উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা সিটি কলেজ, সিটি কলেজের উত্তর পাশের রিফাতুল্লাহ মার্কেট, ঢাকা কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ধানমন্ডির বিপরীত পাশের সায়েন্স ল্যাবরেটরির টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব মাঠ, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠ, হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজার বিপরীত পাশের তিন নম্বর রাস্তার মোড়, রাসেল স্কয়ারের নিউ মডেল স্কুল, ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের রাসেল স্কয়ার, শুক্রাবাদ বাসস্ট্যান্ড, শুক্রাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল এবং নীলক্ষেত চৌরাস্তা মোড়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট।

এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রার্থী অনুযায়ী প্রতিটি স্থানে ছয়টি বোর্ড বসানো হয়েছে। বাঁশের ওপর কাঠ দিয়ে নির্মিত এই বোর্ডে প্রত্যেকটি প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে কোনও কোনও প্রার্থী পোস্টার টানানোও শুরু করেছেন।

ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ইসির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  এই ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য আমিই প্রথমে সব প্রার্থীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন একমত হয়েছেন। আইন কিংবা বিধি কিন্তু পোস্টার লাগাতে বাধা দেয় না। কিন্তু আমরা মনে করি জনগণের সেবা করার জন্য যিনি আসবেন, যিনিই নির্বাচিত হবেন, তারাই যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করি, গণউপদ্রব যদি সৃষ্টি করি, সেটা মোটেও কাম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, আমি সব প্রতিযোগী প্রার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়েছি এবং সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছি যে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এতে গাছ কম কাটা হবে, পরিবেশের জন্য ভালো, দূষণ রোধের জন্য ভালো। এর ফলে নির্দিষ্ট পরিমাণ পোস্টার টানানো হবে, সচেতন নাগরিকরা এতেই ভোট দিতে যাবেন। পোস্টারের কারণে আকাশ দেখা যায় না, এটা তো হতে পারে না। আমরা জনসেবা করতে গেলে এটি করবো কেন? এর পাশাপাশি শব্দদূষণ রোধে মাইকের সীমিত ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তারপর নির্বাচনের দিন যাতে কারফিউ’র মতো অবস্থা না থাকে, যানবাহন যাতে চলে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো সবই ভালো উদ্যোগ।

এই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শেখ রবিউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইসির এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। কারণ, বাংলাদেশের নির্বাচনে সনাতন পদ্ধতিতে যেভাবে প্রচার প্রচারণা হয় সেটি পরিবেশবান্ধব এবং জনবান্ধব হচ্ছে না। বিশেষ করে মাইক ব্যবহারে শব্দদূষণ হয়, পোস্টার ব্যবহারে পরিবেশদূষণ হচ্ছে, এগুলো আমরা চোখের সামনেই দেখছি।

উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া ছয় প্রার্থীই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইসির নির্ধারিত জায়গার বাইরে পোস্টার লাগাবেন না তারা। এ বিষয়ে ইসির সমঝোতা স্মারকে সইও করেছেন তারা। ইসি এটাকে বলছে ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’।

তিনি আরও বলেন, আবার বিক্ষিপ্ত প্রচার প্রচারণার কারণে দ্বন্দ্ব সংঘাতও হচ্ছে। কেউ পোস্টার লাগাতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কেউ আবার পোস্টার খুলে ফেলতে যাচ্ছে, বাধা দিচ্ছে। অনেকটা পরিবেশবান্ধব, সংঘাতমুক্ত এবং নিয়ন্ত্রিত প্রচারণা থাকলে তা একটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে সহায়তা করে। এটিকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি।

সমঝোতার শর্তগুলো মেনে প্রচারণা চালানোর অনুরোধ করেছেন ঢাকা-১০আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম শাহাতাব উদ্দিন। তিনি বলেছেন, দূষণমুক্ত প্রচারণার জন্য প্রার্থীরা সমঝোতা করেছেন ইসির সঙ্গে, আমরা আশা করছি তা মেনেই তারা প্রচার চালাবেন।  ইসি নির্ধারিত ২১টি স্থানের বাইরে পোস্টার লাগাতে পারবেন না প্রার্থীরা।

ইসির এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  এই ব্যবস্থাটি নিঃসন্দেহে ভালো। তবে আরও কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। সব প্রার্থীর জন্য একটি কমন পোস্টার হওয়া দরকার। প্রচারণার জন্য ইসির উদ্যোগে মুখোমুখি অনুষ্ঠান হওয়া দরকার। এটি আমরা করতে চাইলেও ক্ষমতাসীনরা আগ্রহী না। নির্বাচনকে অর্থবহ ও কলুষমুক্ত করার জন্য ইসির আরও করণীয় আছে। নির্বাচন আচরণবিধিতেও আরও পরিবর্তন আনা দরকার।

পরিবেশবাদীরা বলছেন পোস্টার কমিয়ে আনার উদ্যোগ ভালো, তবে পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারণার বিকল্প ভাবা উচিত। এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, নির্দেশনা নিঃসন্দেহে খুব ভালো। এর পাশাপাশি ভাবতে হবে পোস্টারের বিকল্প কী হতে পারে। কারণ, পোস্টার দেখে কেউ ভোট দেয় বলে আমার মনে হয় না। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে কিন্তু পোস্টারের ব্যবহার নেই। ধীরে ধীরে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছে সবাই। নানা ধরনের মাধ্যমে কিন্তু এই প্রচারণা চালানো যায়।  

/এসও/টিএন/
সম্পর্কিত
হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা এজেন্সি মালিকদের
গরমে পানির সংকট রাজধানীতে, যা বলছে ওয়াসা
পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে
সর্বশেষ খবর
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না