আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির চার মামলায় ১৪ ডাক্তারসহ ১৮ জনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আসামিরা জামিনের মেয়াদ শেষে আত্মসমর্পণ করে ফের জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ তাদের আবেদন মঞ্জুর করেন। আদালতের দুদক জিআর শাখার সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইসরাত জাহান, সাবেক সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ডা. মাহফুজা খাতুন, সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ডা. চিন্ময় কান্তি দাস,সাবেক মেডিক্যাল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ডা. সাইফুল ইসলাম, মেডিক্যাল অফিসার (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য ডা. বেগম মাহফুজা দিলারা আক্তার, মেডিক্যাল অফিসার ও বাজারদর যাচাই কমিটি সদস্য ডা. নাজরীনা বেগম।
জামিনপ্রাপ্তরা অন্যরা হচ্ছেন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ডা. জেবুন্নেসা হোসেন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সভাপতি ডা. রওশন হোসনে জাহান, মাতৃসদনের সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ) ও পরিবার পরিকল্পনার অধিদফতরের উপপরিচালক ডা. মো. লুৎফুল কবীর খান,পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. কাজী গোলাম আহসান। জামিনপ্রাপ্তদের তালিকায় আরও রয়েছেন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ডা. পারভীন হক চৌধুরী, মাতৃসদনের বিভাগীয় প্রধান (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য ডা. মো. আমির হোসাইন,জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ডা. নাদিরা আফরোজ, মেডিক্যাল অফিসার ডা. আলেয়া ফেরদৌসী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সদস্যসচিব (বাজারদর যাচাই কমিটি) জহিরুল ইসলাম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. নাছের উদ্দিন, মনার্ক এস্টাব্লিশমেন্টের মালিক মো. ফাতেনুর ইসলাম এবং মেসার্স নাফিসা বিজনেস কর্নারের মালিক শেখ ইদ্রিস উদ্দিন (চঞ্চল)।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. রশিদ উন নবী, মো. বাবরুল আমিন, জয়নাল আবেদীন ও খাজা গোলামুর রহমান জামিন শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল, মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর ও মীর আহাম্মেদ আলী সালাম জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আদেশ দেন।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ২৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১-এ চারটি মামলা করেন সংস্থাটির উপপরিচালক আবুবকর সিদ্দিক। মামলাগুলোর অভিযোগ হচ্ছে, বাজারদরের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে ওষুধ, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ও প্যাথলজি সামগ্রী কেনাকাটায় প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাত করেন আসামিরা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত চার অর্থবছরের কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান করা হয়। দুদকের অনুসন্ধান বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠিকাদারকে ওষুধ সরবরাহের বিপরীতে ৩২ লাখ ৯১ হাজার ৭২০ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। অথচ খুচরা মূল্য ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মূল্য অনুযায়ী ওই একই ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৮ টাকা। বাকি টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। এভাবে চার অর্থবছরে একই প্রক্রিয়ায় প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়ছে। মামলাগুলোতে ১৭ জন চিকিৎসক ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতরের আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
