X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তির ছেলে যা বললেন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ মার্চ ২০২০, ১৯:০২আপডেট : ২২ মার্চ ২০২০, ২০:২৯

করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তির ছেলে যা বললেন

গত শনিবার (২১ মার্চ) রাতে রাজধানীর বেসরকারি ডেল্টা হাসপাতালে মারা যান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত  এক ব্যক্তি। তার মৃত্যুর পর নানা ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে যাবিভ্রান্তিমূলক বলে জানিয়েছেন তার ছেলে। রবিবার (২২ মার্চ) দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে তার ছেলে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের এই বিপদের সময় দয়া করে আমার পরিবার সম্পর্কে মিথ্যা রিপোর্ট করবেন না। এখন পর্যন্ত আমাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা সুস্থ আছেন। কারও করোনার লক্ষণ দেখা দেয়নি। আমার ছোট ভাই এবং ড্রাইভার অসুস্থ বোধ করায় কোভিড ১৯ টেস্ট করানো হয়েছে যার ফল নেগেটিভ এসেছে।’

তিনি আরও লিখেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি যে আমার পিতার মৃত্যুর ঘটনা আমাকে এভাবে লিখতে হবে কিন্তু কিছু মিডিয়ার মিথ্যা রিপোর্ট দেখে আমি বাধ্য হলাম ফেসবুকে কিছু সত্য প্রকাশ করতে।’

তার স্ট্যাটাসটি পুরোটাই তুলে ধরা হলো:

‘গত ১৬ তারিখে আব্বা অসুস্থ বোধ করলে আমাদের ড্রাইভার ওইদিন বিকালে উনাকে কল্যাণপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসে। ওই সময় আমরা সবাই অফিসে ছিলাম। আমি অফিস থেকে বাসায় এসে শুনলাম ডাক্তার সাসপেক্ট করছে, উনার করোনা হয়েছে এবং কোভিড ১৯ টেস্ট এর জন্য সাজেস্ট করেছে। ওই রাতেই আমরা উক্ত টেস্ট এর জন্য IEDCR এর হান্টিং নাম্বারে ফোন দেওয়া শুরু করি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে সক্ষম হই, তারা আমাদের জানায় যেহেতু অসুস্থ ব্যক্তি বিদেশ ফেরত না এবং বিদেশ ফেরত কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে উনি আসেননি সেহেতু এই টেস্ট উনার জন্য প্রযোজ্য নয়। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, উনি নিয়মিত মসজিদে যান এবং ওখান থেকে এই ভাইরাস আসতে পারে কিনা। তারা আমাদের বললেন যে, এই ভাইরাস বাংলাদেশের কমিউনিটিতে মাস লেভেলে এখনও সংক্রমিত হয়নি। সুতরাং আপনারা চিন্তা করবেন না, এটা সাধারণ শ্বাসকষ্টের সমস্যা। ওই রাত্রেই আনুমানিক ১০.৩০ এ আমি উনাকে শ্যামলীর একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে যাই এবং আমাদের পরিচিত একজন স্পেশালিস্ট ডক্টরকে দেখাই। উনি আমাকে বলেন, রোগীর নিউমোনিয়া হয়েছে, উনাকে নিউমোনিয়ার ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। তবে বাংলাদেশের কোনও হাসপাতাল এই রোগী ভর্তি নেবে না। আপনারা বাসায় ট্রিটমেন্ট করেন। আমি ওই রাতে বাসায় চলে আসি এবং আব্বাকে নেবুলাইজার এবং মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক দিতে থাকি। পরের দিন ১৭ তারিখে দুপুরে আমি আব্বাকে নিয়ে যাই শ্যামলীর ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। তারা রোগি দেখে বলেন যে, রোগীর অবস্থা ভালো না, উনাকে আইসিউ সাপোর্ট দিতে হবে কিন্তু তাদের আইসিউ তারা দিতে পারবে না। এরপর আমি কেয়ার হাসপাতালে কথা বলি। ওরা বলে ওদের আইসিউ খালি আছে। আমরা দ্রুত আব্বাকে নিয়ে কেয়ার হাসপাতালে যাই এবং আইসিউতে ভর্তি করি। ১৫ মিনিট পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের বললেন, এই রোগী তারা রাখতে পারবে না। অতঃপর আমরা রোগী নিয়ে কল্যাণপুরের একটি হাসপাতালে যাই। তারা আমাদের কেবিন দিয়ে সাহায্য করে কিন্তু তাদের আইসিউ খালি নেই। আমি তখন স্কয়ারে ফোন দিলাম আইসিউ-এর জন্য। কিন্তু স্কয়ার আমাদেরকে বললো, রোগী ছাড়া শুধু কাগজপত্র নিয়ে আসতে। তারা কাগজপত্র দেখে ভালো মনে করলে রোগী ভর্তি করবে। রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের ডাক্তার আমাকে বললেন এই রোগীর আইসিউ লাগবে, আপনারা দ্রুত আইসিউ-এর ব্যবস্থা করেন। আমি বিভিন্ন হাসপাতালে কথা বলতে থাকি, কোথাও আইসিউ খালি নেই। অতঃপর ডেল্টা হাসপাতাল তাদের আইসিউ দিতে রাজি হয়। আমি এবং আমার ছোট ভাই রাত ৪টার সময় আব্বাকে নিয়ে ডেল্টাতে আসি। দুপুর ১২টার পর থেকে আব্বা লাইফ সাপোর্টে চলে যান। ১৮ তারিখ দুপুর থেকে আমরা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ IEDCR এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। অতঃপর ১৯ তারিখ বিকালে IEDCR রাজি হয় এবং রাত্রে টেস্ট করে এবং পরের দিন ২০ তারিখ দুপুরে তারা আমাদের জানায় যে রিপোর্ট পজিটিভ। আমাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলে ১৫ দিন।

রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর থেকে ডেল্টা হাসপাতাল আমাদের প্রেশার দিতে থাকে লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়ার অনুমোদন দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা অনুমতি না দিয়ে তাদের বলতে থাকি ট্রিটমেন্ট চালিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা আর রোগীর কাছেও যায়নি এবং আমাদেরকে আইসিউতে ঢুকতেও দেয়নি। যাই হোক আমার আব্বু অবশেষে ২১ তারিখ ভোর তিনটায় ইন্তেকাল করেন।

আমরা সন্তানরা ব্যর্থ পিতার সঠিক ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করতে এবং এমনকি তার জানাজাতে উপস্থিত থাকতে। সন্তান হিসেবে, একজন পুত্র হিসেবে এর চেয়ে কঠিন কষ্ট আর কিছুই হতে পারে না। আমরা বুকে পাথর বেঁধে বাসায় অবস্থান করছি সরকারের আইন মেনে ১৫ দিনের জন্য। কিন্তু কিছু পেইজ এবং ফ্রন্ট লাইনের মিডিয়া আমাদেরকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে, আমার ভগ্নীপতি বিদেশ থেকে আমাদের বাসায় এসেছে, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমার দুই ভগ্নীপতি। বড় বোন এবং তার হাজবেন্ড চট্টগ্রামের দুটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক। অন্য ভগ্নীপতি জাপান থাকেন। সে গত এক বছরের মধ্যে দেশে আসেনি। আমার বাবা যেদিন আইসিউতে লাইফ সাপোর্ট এ চলে যান সে দিন মানে, ১৯ তারিখ আমার বড় বোন এবং দুলাভাই চট্টগ্রাম থেকে আমাদের বাসায় আসেন এবং বর্তমানে তারাও আমাদের সঙ্গে হোম কোয়ারেন্টিন পালন করছে।

আমাদের এই বিপদের সময় দয়া করে আমার পরিবার সম্পর্কে মিথ্যা রিপোর্ট করবেন না। এখন পর্যন্ত আমাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা সুস্থ আছে। কারও করোনার লক্ষণ দেখা দেয়নি। আমার ছোট ভাই এবং ড্রাইভার অসুস্থ বোধ করায় কোভিড ১৯ টেস্ট করানো হয়েছে যার ফল নেগেটিভ এসেছে। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করেন এবং হেফাজত করেন বাংলাদেশের সবাইকে। আমিন..’ 

 

/জেএ/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা