দেশের প্রখ্যাত আলেমদের পরামর্শে দেশের সব মসজিদে জুমা ও জামাতে নামাজ আদায়ে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত রাখার আহ্বান জানিয়েছিল ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আজ শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর কোনও কোনও মসজিদে সেই নির্দেশনা মানা হলেও বেশিরভাগ মসজিদেই মানা হয়নি। মসজিদগুলো মুসল্লিতে পরিপূর্ণ দেখা গেছে।
রাজধানীর শ্যামলী শিশু পল্লি জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেন আসাদুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নামাজ তো মুসলমানদের পড়তেই হবে। যদি ঘরে নামাজ পড়ার বিধান থাকতো, তবে তো হুজুররা আগে থেকে মসজিদে জানাতেন। তারা তো এমন কোনও কথা বলেননি।’
ইফার বৈঠকে আলেমরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, জুমায় বয়ান না করে সংক্ষিপ্ত খুতবা পাঠ করে ছোট কেরাতের মাধ্যমে নামাজ দ্রুত আদায় করতে। তবে অনেক মসজিদেই খুতবার আগে দীর্ঘ বয়না করতে দেখা যায়।
সুরক্ষা নিশ্চিত না হয়ে জুমাসহ অন্যান্য নামাজের জন্য মসজিদে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও অনেক মুসল্লিকে মাস্ক ছাড়াই মসজিদে যেতে দেখা গেছে। আলেমরা বয়স্ক ও শিশুদের মসজিদে নিয়ে না আসার অনুরোধ করলেও সেটিও মানেননি কেউ; বরং নামাজ শেষে মুসল্লিদের কারও কারও জড়ো হয়ে গল্প করতে দেখা গেছে। কোনও কোনও মসজিদের সামনে জড়ো হন ভিক্ষুকরা। রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী, মগবাজার, সার্কিট রোড, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, ধানমন্ডি ও কলবাগান এলাকার বেশ কয়েকটি মসজিদ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
প্রায় ষাটোর্ধ্ব আসলামুল আলম লাঠিতে ভর দিয়ে প্রবেশ করছিলেন তেজগাঁওয়ের বায়তুল আমান জামে মসজিদে। তিনি বলেন, ‘এখনই তো বেশি বেশি মসজিদে আসতে হবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। হজুররা তো তাই বলছেন।’
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমেও মুসল্লিদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এই মসজিদে নামাজ শেষে করোনার দুর্যোগ থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়।
তবে রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়ার বাইতুশ শাকুর মসজিদে বেলা ১১টার দিকে মসজিদে আসার ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘সুন্নাত নামাজ আপনারা বাসায় পড়বেন। শুধু জুমার নামাজ ও খুতবা হবে মসজিদে। শিশু ও বয়স্করা বাসায় নামাজ পড়বেন। মসজিদে আসার সময় অবশ্যই মাস্ক পরে আসবেন।’ যদিও এই নির্দেশনা সবাইকে মানতে দেখা যায়নি।
রাজারবাগের শহীদবাগ জামে মসজিদেও মসুল্লিদের কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই মসজিদের মুসল্লি জিএম শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘জুমার নামাজের জন্য শহীদবাগ জামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা হয়, ৫০-এর বেশি যাদের বয়স তারা মসজিদে আসবেন না। জ্বর, কাশি, হাঁচি-সর্দি বা অন্য অসুখ আছে এমন কেউ মসজিদে আসবেন না। বাচ্চাদেরও মসজিদে আসার দরকার নেই। মিনিমাম ৪ ফুট দূরত্ব রেখে আমরা নামাজ পড়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করোনার বিস্তার রোধে মুসলমানদের ঘরেই নামাজ আদায়ের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানান তিনি। বুধবার (২৫ মার্চ) স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান।