X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেদের নিরাপত্তার পাশাপাশি দেশের আপনজনদের জন্য দুশ্চিন্তায় প্রবাসীরা

সঞ্চিতা সীতু
০৮ এপ্রিল ২০২০, ০৮:০০আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৪৯

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় করোনার কারণে সড়কগুলো এখন ফাঁকা। (ছবি: মাহেরীনা জামান)

দেশে দেশে করোনার ভয়াল থাবায় বিপন্ন আজ মানব সভ্যতা। সারা বিশ্বের মানুষ এক হয়ে লড়াই করছে করোনার বিরুদ্ধে। কিন্তু, এই যুদ্ধে বিজ্ঞানও এখন পর্যন্ত পথ দেখাতে পারছে না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই ভাইরাসের সঠিক প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চললেও দিশা এখনও মেলেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কোভিড-১৯-এর টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্রুত এই টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, তার আগে এক ভাইরাসের থাবায় সারা পৃথিবীই যেন লকডাউন! দেশে দেশে শুধু মৃত্যুর মিছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। তাদের কষ্ট যন্ত্রণা, ভাবনা চিন্তার মধ্যেই রয়েছে দেশবাসী ও দেশে থাকা পরিবারের জন্য উদ্বেগ। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন এমনই কয়েকজন।

করোনার থাবায় উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় ফাঁকা হয়ে যাওয়া একটি শপিংমল। ( ছবি:মাহেরীনা জামান)

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, করোনায় আক্রান্ত জনসংখ্যার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন সবার শীর্ষে। ডব্লিউএইচও’র হিসাব বলছে, ৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তিন লাখ ৩৩ হাজার ৮১১ জন। আর মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ৫৫৯ জন। তবে দেশটির মেরিল্যান্ডের জনস হকপিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বলছে, এই সংখ্যা এরচেয়েও খানিকটা বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস ৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় তাদের অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বলেছে ১০ হাজার ৯৩৮ জন। অর্থাৎ করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দেশটিতে প্রায় ১১ হাজার ছুঁয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডের বাসিন্দা সেলিনা আক্তার জানান, অনেক ভয়েই আছি। নিজের চেয়ে দেশের আপনজনদের জন্যে। এখানে সবকিছু খুব গোছানো। অকারণে বের হলেই পড়তে হচ্ছে জেল জরিমানার মুখে। তবে ভয় পাচ্ছি আশপাশের অঞ্চলগুলোর খবর পেয়ে। বিশেষ করে নিউ ইয়র্কের। সেখানে অনেক বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর পাচ্ছি আমরা। একই কথা বলেন মিসিসিপির বাসিন্দা সীমা ভৌমিক।

জমজমাট দোকানগুলোতে এখন মানুষ দেখাই যায় না। (ছবি: মাহেরীনা জামান)

নিউ ইয়র্কে থাকেন হোসেইন। তিনি বলেন, পরশুদিন আমাদের পাশের বাসার একজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ভয়ে দরজাও খুলছি না। এখানের অবস্থা ভালো না। আতঙ্কিত অবস্থায় সবার দোয়া প্রত্যাশা করেছেন তিনি।

যুক্তরাজ্যে থাকেন রুমানা আফরীন। তিনি জানান, সেখানে সবকিছু বন্ধ করা হয়নি। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা আছে। তবে সবাই খুব সতর্ক। ফলে ভয়ের তেমন কিছু নেই। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ভালো হওয়ার কারণে আমাদের ভয় তেমন লাগছে না। তবে সাবধানে আছি।

যুক্তরাজ্যে ৫১ হাজার ৬০৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫ হাজার ৩৭৩ জন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে আইসিউতে রয়েছেন। করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া জনসনের আইসিইউতে ভর্তি ব্রিটেনের জনগণের মনোবল ভেঙে দিয়েছে।

ফাঁকা, সব দোকানপাট একদম ফাঁকা। (ছবি: মাহেরীনা জামান)

কানাডার এডমনটন শহরে থাকেন আফরোজা সুলতানা। তিনি জানান, সবাই কাজে যাচ্ছেন না। কেউ কেউ কাজে যাচ্ছেন। যারা যেতে পারছেন না তাদের সরকার ফিন্যান্সিয়াল বেনিফিট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে । নিরাপত্তা,  স্বাস্থ্যসেবা খুবই ভালো এখানে। জনসংখ্যাও বড় বিষয়। কম জনসংখ্যা থাকার কারণে এখানে আমরা ভয় কম পাচ্ছি। তবে নিজের দেশের আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে ভয় পাচ্ছি। খুব কষ্ট হচ্ছে সবার জন্য। 

কানাডায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৬৭ জন। আর মারা গেছেন ৩২৩ জন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দেশের অধিবাসীদের নিরাপদে থাকার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। শুরুতে নমনীয় থাকলেও উদার ট্রুডো কানাডার জনসাধারণকে বাঁচাতে শেষে কঠোর হয়েছেন।

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন মাহেরীনা জামান সাইম। দুই মেয়ে নিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে সেখানেই বসবাস করছেন তারা। মাহেরীনা জানান, আমরা সবাই বাসায় থাকছি। অন্য দেশ থেকে কেউ এলে তাকে ১৪ দিনের আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। ফুডকোর্ট, মিউজিয়াম,  লাইব্রেরি, পার্ক সব বন্ধ। মল, রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে ভুতুড়ে পরিবেশ। যেখানে মানুষ গিজগিজ করতো, সেগুলো এখন জনমানবহীন। কেউ অকারণে বের হলে এক হাজার ডলার জরিমানা করা হচ্ছে। তবে সরকারের পদক্ষেপে আমরা খুশি। কারও সন্দেহ হলেই সে টেস্ট করতে পারছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই ভালো এখানে।

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার পথে মানুষ বের হচ্ছেন খুব কম। ভিড় নেই রেওওয়ে স্টেশনেও (ছবি: মাহেরীনা জামান)

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় ১২ হাজার ৪৬১ জন আক্রান্ত হয়েছেন আর ২৪৩ জন মারা গেছেন।

আরেকটি ফাঁকা সড়ক। (ছবি: মাহেরীনা জামান)

তবে এসবের মধ্যে ব্যতিক্রম সুইডেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সুইডেনে থাকেন মল্লিকা দত্ত। তিনি জানান, এখানে কোনও কিছুই বন্ধ নাই। সব খোলা। তবে জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে সামাজিক দূরত্ব মানা সহজ এই দেশে। আগে বাস বা ট্রেনে যেভাবে বসা হতো এখন সেভাবে না বসে চার ফিট দূরে দূরে বসতে হয়। স্টেশনেও তাই। এ দেশের মানুষ এমনিতেই দূরত্ব রেখে চলে। তবে ভয় পাচ্ছি। কখন নিজে আক্রান্ত হই। কিছুই করার নাই। কাজ তো করতেই হবে। বাচ্চাদের স্কুল খোলা।

সুইডেনে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৭ হাজার ২০৬ জন, আর এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৭৭ জন।

(দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে ছবিগুলো পাঠিয়েছেন সেখানে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি মাহেরীনা জামান সাইম।) 

/এসএনএস/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
কানাডায় দ্বিতীয়বার ‘ডিরেক্টরস ক্লাব অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন মাহবুব ওসমানী
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে ম্যানিলায় শিশু-কিশোরদের মিলনমেলা 
সর্বশেষ খবর
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের পাঠদানও বন্ধ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের পাঠদানও বন্ধ
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি