কোনও কোনও গার্মেন্টস কারখানায় বেতন হয় না দুই-তিন মাস। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন সেগুলো বন্ধ। বার বার চেয়েও বকেয়া পরিশোধের ব্যাপারে মালিকপক্ষ থেকে কোনও আশ্বাস পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। বকেয়া আদায়ের দাবিতে তারা রাস্তায় নামছেন, আন্দোলন করছেন। কিন্তু, এসব পোশাক কারখানার মালিকদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিনে ছোট ছোট গার্মেন্টেস শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মালিকদের সন্ধান করছে পুলিশ। সন্ধান না পেয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতিকে (বিজিএমইএ) বিষয়টা জানানো হচ্ছে।
বিজিএমইএ বলছে, দুইটা তালিকা করে এসব সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। যেসব গার্মেন্টেসে বকেয়া বেতন নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে এর অধিকাংশই ছোট প্রতিষ্ঠান। এর অনেকগুলো বিজিএমইএ-এর তালিকাভুক্ত নয়। তারপরও তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মালিকদের খুঁজে বের করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে আন্দোলনে থাকা গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ এর সভাপতি রুবানা হক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ৮৭ ভাগ কারখানায় শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দিয়েছি। ২৪ লাখ ৭২ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ২১ লাখ ৫৯ হাজারের বেতন ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। বাকি যেগুলো আছে সেগুলো ছোট। এসব ফ্যাক্টরিতে ১৫০-২০০ লোক কাজ করে। এই ফ্যাক্টরিগুলো অনেক সময় সরাসরি এক্সপোর্টের কাজও করে না। তারা সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে। ছোট বড় যে কোনও কারখানার শ্রমিকই যখন রাস্তায় নামে তখন সেটা আমাদের দায়িত্ব হয়ে যায়। আমরা তথ্য পাওয়া মাত্রই সমস্যা সমাধানের জন্য যোগাযোগ করছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হবে।’
চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে বেতন না পেয়ে মিরপুরে ফ্যালকন গার্মেন্টস; দক্ষিণখানে রেদওয়ান, সিএনবি, স্যার ডেনিম, সারা ফ্যাশন, সুপার সাইন; রূপনগরে মনির ফ্যাশন; কমলাপুরে সর্দার ও বিন্নি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনে দাবিতে আন্দোলন করছেন।
দক্ষিণখানের রেদওয়ান গার্মেন্টের শ্রমিক আল আমিন জানান, তাদের তিন মাসের বকেয়া রয়েছে। গার্মেন্টের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হচ্ছে না। তাই তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
আল-আমিন বলেন, চাকরি করি বেতনের জন্য। বেতন পাইলে সংসার চলে। এখন সব বন্ধ। বেতনও বন্ধ। খামু কী? কোথাও থেকে কোনও ত্রাণও পাচ্ছি না। না খেয়ে মরার অবস্থা হয়েছে আমাদের।
একই কথা জানান স্যার ডেনিমের শ্রমিক নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, বেতন বন্ধ। ঘরে খাবার নাই। সংসার চালামু কী দিয়ে? বাসার ভাড়া দিতে পারতেছি না।
দক্ষিণখানে শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু মালিকদের পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডিএমপির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণখান জোন) হাফিজুর রহমান রিয়েল। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কিন্তু তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিজিএমইএ কে জানানো হয়েছে।
এদিকে কমলাপুরে দুটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। সর্দার গার্মেন্টেসের মালিককে পাওয়া গেলেও বিন্নি গার্মেন্টসের মালিককে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে মতিঝিল থানা পুলিশ।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বকেয়া বেতন ও কারণ ছাড়া ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে বলে জানিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার। তিনি বলেন, সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিতে গার্মেন্টস মালিকরা বেতন দিচ্ছেন না। শ্রমিকদের ঢাল বানিয়ে তারা সুবিধা নিতে চায়।
তিনি বলেন, বকেয়া বেতন, ছাঁটাই ও লে-অফের কারণে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএ এর সভাপতি রুবানা হক বলেন, আমরা দুটো লিস্ট নিয়ে কাজ করছি। একটা হলো- কিছু গার্মেন্টস কারখানা মালিক, যারা আগেই বলেছিল, শেষ মুহূর্তে ঝামেলা হতে পারে। ব্যাংকগুলোকে যেন বলে দেওয়া হয়। আরেকটা লিস্ট হলো, যারা গত কয়েকদিনে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন করছেন। দক্ষিণখানে রেদওয়ান গার্মেন্টস আমাদের লিস্টে রয়েছে। এটাতে তিনশ’র মতো শ্রমিক কাজ করেন। স্যার ডেনিমও আমাদের তালিকায় রয়েছে। তিনমাস আগে সেটা বন্ধ হয়েছে। বকেয়া থাকার কারণে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। সিএনবি আমাদের তালিকায় নেই। আমরা আলাদাভাবে প্রত্যেকটি কারখানার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বকেয়া পরিশোধে ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছি।