X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
বাজেট বিশ্লেষণ

'সরকার সাহস হারায়নি'

স্বদেশ রায়
১১ জুন ২০২০, ২০:৩৮আপডেট : ১১ জুন ২০২০, ২১:০৬

এবারের বাজেট তৈরিতে সব থেকে বড় দিক ছিল সরকারের সাহসের বিষয়টি। করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দা ও স্থবিরতা এসেছে, এ সময়ে ভয় পেলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হতো। এ সময়ে যদি ভয়ে পড়ে ছোট বাজেট করতো সরকার, সেটাই হতো সবচেয়ে ভয়াবহ। কারণ, যেকোনও মন্দাকে যদি সাহস করে মোকাবিলা করা না যায় তাহলে কোনোক্রমে ওই মন্দা কাটিয়ে ওঠা যায় না। বাস্তবে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে যে মন্দাগুলো এসেছে, অর্থাৎ ওবামা ক্ষমতা নেওয়ার আগে আমেরিকার মন্দা, আবার ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯-এর বিশ্বমন্দার বাজেট বিশ্লেষণ সময়ে দেখা গেছে, যেসব দেশ সাহস করে বড় বাজেট নিয়ে, সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিয়ে এগিয়েছে, ওই দেশগুলোই শেষ পর্যন্ত ভালো করেছে। তাই এবারের বাজেটের সবচেয়ে বড় দিক হলো সাহস। বাজেট যেহেতু শুধু কোনও অর্থনৈতিক দলিল নয়, এটা সম্পূর্ণ একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সরকারের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা, তাই এখানে বাজেটের অন্তর্নিহিত বিষয়টিই বড়। অন্যান্যবার ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় অর্থনীতির আকার আরও বড় করা। এবার সেখানে অনেকেই মনে করেছিল করোনার কারণে সরকার ভয় পেয়ে বাজেট ছোট করে অর্থনীতির আকার সংকুচিত করে ফেলবে। সেটা না করে অর্থনীতির আকার আরও বড় করা এবং জিডিপি ৮.২ পার্সেন্ট ধরে এগিয়ে যাওয়ার যে নীতি নিয়েছে, এটাই হলো এ বাজেটের সবচেয়ে বড় দিক। এই দৃষ্টিভঙ্গিই করোনাকালের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে।

সরকার এবার বাজেটে গতবারের থেকে বেশি ঘাটতি রেখেছে। এ ঘাটতি যদিও আরও বেশি হতে পারে। আর সেই ঘাটতি পূরণে সরকারকে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিতে হবে। এবারের বাজেটে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার মতো ঘাটতি রেখে বলা হয়েছে এটা ব্যাংক ঋণ ও বিদেশি ঋণ থেকে নেওয়া হবে। এখানে যদি সময় মতো বিদেশি ঋণ না পাওয়া যায় তাহলে বর্তমান বাস্তবতায় অতিরিক্ত নোট ছাপিয়ে সরকারকে ব্যাংকগুলোর তারল্য জোগান দিতে হবে। এখানেও প্রয়োজন হবে সাহস। সরকারকে যদি নোট ছাপাতে হয় তাতেও কিন্তু কোনও ক্ষতি নেই। বাজারের টাকার পরিমাণ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি যেটা হবে সেটাও সহনশীল থাকবে। কারণ, আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারের এমনি গ্রহণ ক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে গত দশ বছরে। সাধারণ সময়ে ভারতের অর্থনীতিতে ৭ পার্সেন্ট তারল্য জোগানের উদাহরণ আছে। আমাদের এবারের করোনার বাস্তবতায় তারল্য জোগানের জন্যে যদি তার থেকে বেশিও হয় তাহলেও সে সাহস দেখাতে হবে। এবং এবারের বাজেটের মূল সুরে সেই সাহসের ধ্বনি আছে। এটা একটি বড় দিক।

বাজেটে দৃশ্যত মনে হয়েছে সরকার কৃষি খাতে আগের বরাদ্দই রেখেছে। অথচ এবার কৃষি খাতকে জোর দেওয়ার দরকার ছিল বেশি। যেহেতু করোনায় শিল্প ও শিল্পজাত পণ্য রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে; কিন্তু কৃষি খাতের এই ৯ হাজার কোটি টাকার বাইরেও প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে যে প্রজেক্টগুলো নিয়েছেন তাতে আরও সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা যোগ হবে। যোগ হবে মৎস্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত বরাদ্দ। পাশাপাশি এবার শিল্প মন্ত্রণালয়ও স্বাভাবিকভাবে কৃষির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কৃষিজাত শিল্প আরও বাড়াবে। তারও ইঙ্গিত বাজেটে আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর রেয়াতের বিষয়টি সে ইঙ্গিত দেয়। তাই কৃষিতে যদি এই অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় হয় তাহলে কৃষি অনেক বেশি দিতে পারবে। 

এরপরে আরেকটি সাহস এবার দেখানো হয়েছে, সেটা কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি। কালো টাকার বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশে একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মানসিকতা কাজ করে। আমরা কালো টাকা বলতেই পরিশ্রমহীন কোনও অবৈধ অর্থ ধরে নিই। বাস্তবে যাকে আমরা কালো টাকা বলি এটা বুর্জোয়া অর্থনীতি বিশেষ করে মুক্তবাজার অর্থনীতির একটি অংশ। এই অর্থ সৃষ্টি হবেই। সব দেশেই হয়ে থাকে। এখন দরকার হচ্ছে সাহস করে, আমাদের দীর্ঘদিনের সমাজতান্ত্রিক ধারার চিন্তা-ভাবনাকে ভেঙে ওই টাকাকে মূল অর্থের স্রোতে নিয়ে আসা ও বিনিয়োগ করা। এবার যে শুধু জমি, বিল্ডিং ও ফ্ল্যাট নয়, ব্যাংকে সঞ্চিত টাকা, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য বন্ডের ওপর ১০ পার্সেন্ট ট্যাক্স দিয়ে সেটাকে বৈধ অর্থ করা যাবে, পুঁজিবাজারেও একইভাবে বিনিয়োগ করা যাবে, এই বিষয়টি বাজেটে রাখা হয়েছে। এটা সত্যিই  সাহসী পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ আরও অনেক আগেই নেওয়া দরকার ছিল। এই পদক্ষেপে ব্যাংকে অর্থের জোগান স্বাভাবিকই বাড়বে। সরকারের এবারের বাজেটের এই কালো টাকা সাদা করা নিয়ে যতই সমালোচনা হোক না কেন, করোনাকালের এই মন্দা কাটাতে বাস্তবে এটা সাহসী পদক্ষেপ। এর ভেতর দিয়ে সরকার রাজস্ব পাবে বেশি। অন্যথায় এসব অর্থ হয় মানুষের কাছে গচ্ছিত থাকে, না হয় বিদেশে পাচার হয়। দেশে বিনিয়োগ হয় না। এই ধারা থেকে দেশ বেরিয়ে আসার সুযোগ পাবে।

তবে মোবাইল ফোনসহ বেশ কিছু বিষয়ের ওপর যে ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কারণ, মোবাইল ফোনসহ ওইসব বিষয় অর্থনীতির গতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই এখানে ট্যাক্স বাড়ালে অর্থনীতির গতি কমে যেতে পারে। বাজেট পাসের আগে এগুলো নিয়ে এখনও ভাবার সুযোগ আছে। তাছাড়া এবারের এই বাজেট স্বাভাবিকভাবে করোনার প্রকোপ কমে গেলে কিছুটা রদবদল যে হবে সেটা ধরে নেওয়া যায়। অর্থমন্ত্রী নিজেও তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। দেশবাসীও চায় করোনার প্রকোপ কমে যাক, সুযোগ আসুক বাজেটকে আরও গতিশীল পথে এগিয়ে নেওয়ার। এর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার জন্যে বাজেটে যা রাখা হয়েছে সেগুলো প্রধানমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছেন। এখন এগুলো বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হওয়া দরকার। কারণ, করোনা-উত্তরকালে সামাজিক নিরাপত্তা অনেক বড় বিষয়।  

লেখক: রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক

/এফএএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
চূড়ান্ত বাজেটে তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস
জিডিপির অনুপাতে বাজেটের আকার অনেক ছোট: মির্জ্জা আজিজ
সর্বশেষ খবর
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’