X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি আছে, বেতন নাই

উদিসা ইসলাম
২৪ জুন ২০২০, ১৭:২১আপডেট : ২৫ জুন ২০২০, ১২:২৮

অন্য পেশা থেকে এসে রিকশা চালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন অনেকে লালমাটিয়ার একটি বাসায় আয়ার কাজ করতেন রাহেমা। এপ্রিল মাসের শুরুতে তাকে ওই মাসের বেতন ৮ হাজার টাকা দিয়ে ‘আপাতত না আসতে’ বলা হয়। বলা হয়, তাকে কাজ থেকে ছাড়ানো হচ্ছে না। মে মাসের শুরুতে তাকে পুরো বেতন দেওয়া হলেও জুনে আর সেই বেতন দেওয়া হয়নি। সে নিজেও বেতন চাইতে পারেনি। রাহেমা নিজের পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, দুই মাস কাজ না করে বেতন দিয়েছে। কতদিন আর দেবে। তারা আমাকে কাজ থেকে বাদ দেয়নি। পরিস্থিতি আগের মতো হলে আবারও কাজ শুরু করা যাবে। কিন্তু আগামীতে আর বেতন দিবে না এটুকু বুঝতে পারছি।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশে নতুন করে দরিদ্র শ্রেণি সৃষ্টি হচ্ছে। মার্চে দেশে করোনাভাইরাস হানা দেওয়ার পর থেকে  দীর্ঘসময় সাধারণ ছুটির ঘোষণা দিলে চাকরি, ব্যবসা, উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম স্থবির হতে শুরু করে। এরইমধ্যে অনেক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন, বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তিনবেলা খাওয়ার মতো টাকাও এখন তাদের কাছে নেই।

এভাবেই পাড়ায় গলিত অলস করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বাসাবাড়িতে অস্থায়ী কাজের সহযোগী, গৃহকর্মী, গাড়িচালকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রথম মাসে বেতন দিয়ে বিদায় করা হলেও বেশিরভাগের অভিযোগ, পরবর্তীতে তাদের কাজে নেওয়া হচ্ছে না। আবার তার যে চাকরিটা নেই সেটাও বলা হচ্ছে না। এক কথায় চাকরি আছে, বেতন  নেই। আবার কখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তো চাকরিটা ফিরে পেলেও পেতে পারেন।

কাজ অথবা ত্রাণের সন্ধানে পথে ভিড় বাড়ছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) করা এক জরিপে দেখা গেছে, করোনার প্রভাবে শহরাঞ্চলে কর্মহীন হয়ে পেড়েছে ৮০ শতাংশ মানুষ। গ্রামে এ সংখ্যা ৭৯ শতাংশ। আর নতুন সৃষ্ট দরিদ্র শ্রেণির ৭১ শতাংশের আয় কমে গেছে। এদিকে গত ১ জুন প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ পরিবারের উপার্জন কমে গেছে এবং ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন বা ফিরে আসছেন। ব্র্যাক, ডেটা সেন্স এবং উন্নয়ন সমন্বয়-এর এক যৌথ সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘কোভিড-১৯ এবং জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১: নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক এক সমীক্ষার ফল অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের (ওয়েবিনার) মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

করোনায় অভ্যন্তরীণ অভিবাসন নিয়ে একটি গবেষণা জরিপের কাজ করছে ব্র্যাক৷ কাজ এখনও মাঝপথে থাকলেও তারা যেসব তথ্য পাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের একটি বড় অংশ ঢাকা ছেড়েছেন৷ তাদের অবস্থা হচ্ছে ‘চাকরি আছে বেতন নাই অথবা ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে৷'

যাদের চাকরি নামে আছে কিন্তু বেতন নেই তাদের বেশিরভাগই ইতোমধ্যে গ্রামে চলে গেছে বলে উল্লেখ করে ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসির সিনিয়র পরিচালক কে এ এম মোরশেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শহর ছেড়ে যারা গ্রামে যাচ্ছেন তারা এই  ‘চাকরি আছে’ ভেবে অস্থির জীবনযাপন করছেন। শুরু থেকেই তারা গ্রামে যাওয়া আসার মধ্যে আছেন।

কাজের খোঁজে যাচ্ছেন তারা তিনি বলেন, ঈদের আগে যখন সবকিছু খুললো, প্রচুর মানুষ ফিরে আসলো। কিছু রয়ে গেছিল বোরো ধান কাটার সময় বলে। যারা ঢাকায় এলো তারা রাস্তার পাশে দোকান খুললো, কিন্তু বিক্রি হলো না। ফলে তারা ঈদের সময় আবারও চলে গেলো। আবার ৫০ লাখের জন্য যে স্কিম সরকার দিচ্ছে সেটা কাউন্সিলরের মাধ্যমে হচ্ছে এবং তিনি ভোটারদের কথা ভেবেই কাজটি এগিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু ঢাকায় অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ করে যারা তাদের বেশিরভাগই ঢাকার ভোটারই নন। ফলে এই স্কিমে তারা পড়বেন না বুঝে গ্রামে চলে যেতে চেয়েছেন। সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন যেসব স্কুল এমপিওভুক্ত নয় এবং শিক্ষকরা বেতন না পাওয়ায় সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বা হতে বসেছে। যে শ্রেণির মানুষজন সহজে হাত পেতে রাস্তায় দাঁড়াতে পারবে না, তারা গ্রামে ফিরে গেছেন এবং সঞ্চয় থেকে জমি বর্গা নিচ্ছেন। যাদের বর্গা নেওয়ার টাকা নেই,  তারা কৃষি শ্রমিক হচ্ছেন। ফলে এমন যদি চলতে থাকে আগামী একবছরে আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন হবে।

ইকোনমিক রিসার্চের একটি সংস্থা পরিচালনা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম। তার মতে, এই যে অলিখিত ছাঁটাই, এটি কোনও মানবিক বা করপোরেট আচরণ হতে পারেন না। এই করোনাকালেও কিছু অফিস, কিছু সেক্টর নিজেদের লাভটাকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। সেটি বন্ধ হওয়া দরকার। তিনি বলেন, নিম্নবিত্তের যারা কাজ আছে কিন্তু বেতন নেই, তারা গ্রামে ফিরতে বাধ্য হবেন, হচ্ছেন। সরকার কত দ্রুত তাদের ঋণের ব্যবস্থা করে তাদের উদ্যোক্তা হতে সহায়ক হবে সেটা এখন জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। যখন কিনা মানুষ মানুষের কাছে যেতে পারছে না; দিনের পর দিন তাদের কাজ নেই; তখন অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। এতে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য বাড়বে। বড় পুঁজি ছোট পুঁজিকে খেয়ে ফেলবে। এখন সরকারকে উদ্যোগী হয়ে এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন। 

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা