X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাভাবিক যাপনের নামে কী হচ্ছে!

উদিসা ইসলাম
০৭ জুলাই ২০২০, ০০:২১আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২০, ১৪:৪৯

চলছে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আড্ডা দীর্ঘ সময় সাধারণ ছুটি কাটানোর পর করোনা পরিস্থিতিতে দ্রুত ‘স্বাভাবিক’ জীবনে ফেরার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ২৬ মার্চের পরবর্তী সময়ে নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যে হাহাকার তৈরি হচ্ছিল তা থেকে বেরিয়ে আসতেই এই উদ্যোগ। দীর্ঘ বিরতির পরে শর্তসাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয় অফিস, গণপরিবহন, শপিং মল। কিন্তু কোথায় সেইসব শর্ত? সরেজমিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় গেছে, সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরে বাইরে বের হওয়া, কোথাও প্রবেশের আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার– এসবের কোনও বালাই নেই।

বর্তমান ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হবে, কিন্তু এজন্য কোনও বিপদ ডেকে আনা যাবে না। আর চিকিৎসকরা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আগে নাগরিকদের এই সুরক্ষার শর্তগুলো মানার নিশ্চয়তা বিধান করা জরুরি ছিল। প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন করে মানুষের মৃত্যু যে ভাইরাসে সেটাকে আমরা হেলাফেলা করলাম।

পথে-ঘাটেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি  রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার। বাজারের বাইরে গাড়ির সারি। এলোমেলো সিএনজিচালিত অটোরিকশা। বাজার করে কেউ বের হলেই হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে সিএনজিতে ওঠানোর জোর চেষ্টা চালকের। বাজার করতে আসা ব্যক্তির ও সিএনজি চালকের উভয়েরই মাস্ক থুতনির কাছে নামানো। সিএনজিতে উঠে মাস্ক লাগানোর সময় কেন নিয়ম মানছেন না জানতে চাইলে যাত্রী বলেন, ‘বাজারের ভেতরে মাস্ক পরে কথা বললে শোনা যায় না, চিৎকার করতে হয়।’ তিনি দ্রুত চালককে সেখান থেকে চলে যেতে তাড়া দেন।

আরেকটু ভেতরের দিকে গেলে কৃষি মার্কেটে ঢোকার আগের পথটুকুতে এলোমেলোভাবে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা চলতে দেখা যায়। কারও যেন মনেই নেই দেশ মহামারির ছোবলে পড়েছে। এক জায়গায় ছয়-সাতজন পরস্পরের অচেনা মানুষ করোনা নিয়েই আলাপ করছেন, চা খাচ্ছেন। কেন এভাবে মাস্ক না পরে রাস্তায় একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন, আপনাদের স্বাভাবিক জীবনের জন্যই সাধারণ ছুটি তুলে নেওয়া হয়েছিল জানেন কিনা? প্রশ্নে একজন এগিয়ে এসে বলেন, ‘আপনিও তো বাইরে বের হয়েছেন।’ আমি আমার যা যা মেনে চলার কথা মানছি, আপনি কেন মানছেন না? প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওসব আমাদের হবে না। হলে এতদিন হয়ে যেত।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘এই এলাকায় যে লোকগুলো মুটে-মজুরের কাজ করেন তাদের জোগানদার হিসেবে কাজ করেন এই ব্যক্তি। তিনি নিয়ম না মানলে তার অধীনে যারা কাজ করেন তারা কীভাবে মানবেন?’

দোকানপাটে আড্ডা চলছে গত ৩০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখার পাঠানো এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সীমিত আকারে যান চলাচল এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মেয়াদ আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ায় সরকার। এর আওতায় সরকারি-বেসরকারি অফিস আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত খোলা থাকবে উল্লেখ করে দোকানপাট ও বিপণিকেন্দ্র ১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। এর আগে ১০ জুন করোনাভাইরাস মোকাবিলার পাশাপাশি জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাপন অব্যাহত রাখতে করণীয় সব কিছু করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর পরপরই ১৫ জুন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বলা হয়, করোনাভাইরাস জনিত বৈশ্বিক মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘শুরুর দিকে জীবন ও জীবিকাকে সাংঘর্ষিক ভেবেছিলাম। তখন ভাবা হয়েছে জীবিকা বাদ থাক, জীবন বাঁচাই। পরে দেখলাম, এটা আমাদের বাস্তবতার সঙ্গে যায় না। এখন এভাবে টিকতে পারবো না বুঝতে পারছি। এখন তাহলে আমরা কী করতে পারি? ইতোমধ্যে অনেক মানুষ দরিদ্র হয়েছে, অনেকের চাকরি হুমকিতে, বেতন কমতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে যদি কেউ বের হবেন না বলা হয় সেটি কেউ শুনতে চাইবে না। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার (যেটা আমরা এখনও নিজে থেকে করি) ব্যাপক প্রচারণা এখনও দরকার। সেটা না মানলে সামাজিক শাস্তি যেটা শুরুর দিকে নেওয়া হচ্ছিল সেটা অব্যাহত রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানির ঈদকে ঘিরে লম্বা একটা সময় ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড, জীবিকা এমনিতেই কম থাকে। সেক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের সিরিয়াস লকডাউন দিতে পারি। তাতে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।’

পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে নেই নিয়মের বালাই কোনও নিয়মবিধি না মেনে রাস্তায় নেমে আসা মানুষদের প্রস্তুত করার দায়িত্ব সরকারেরই ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সব মানুষ সব নিয়ম মানবে না। যদি বারবার তাদের নিয়মগুলো মানতে না বলা হয়, তাহলে একসময় তারা অস্বাভাবিক সময়টাকেই স্বাভাবিক ভেবে বসবে। এতে করে বিপদ বাড়বে।’

এ পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ ‍তুলে দেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি উল্লেখ করে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা লক্ষ করেছি। মানুষের ভিতর করোনা নিয়ে আতঙ্ক জন্মাক সেটি যেমন আমরা চাইবো না। সংক্রমণের ভীতিটা অব্যাহত থাকুক সেটি চাইবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউন যদি বাস্তবতার কারণে তুলে ফেলতে হয় তাহলে নিয়মগুলো যেন নাগরিকরা কঠোরভাবে মানতে বাধ্য হয় সেদিকে মনোযোগ থাকা উচিত ছিল। এখন যা হচ্ছে তা আমাদের খারাপ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।’

 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
ধ্রুব এষ হাসপাতালে
কামরাঙ্গীরচর নাগরিক পরিষদের সঙ্গে মেয়র তাপসের মতবিনিময়
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
সর্বশেষ খবর
সিলেটে আবারও শুরু হচ্ছে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম
সিলেটে আবারও শুরু হচ্ছে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন