X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার বন্দিত্বকালে শিশুদের জন্য ‘বপন’

উদিসা ইসলাম
১০ জুলাই ২০২০, ০২:৩৪আপডেট : ১০ জুলাই ২০২০, ০২:৩৯

করোনার বন্দিত্বকালে শিশুদের জন্য ‘বপন’ ‘প্রাকৃতিক পরম্পরা সংস্কৃতিকে মেয়ের মধ্যে প্রবাহিত করতে আমি নিজের ছাদে বাগান করেছি। সেখানে কী নেই—দেশি প্রায় সব ধরনের ফল, একটু বাঁশঝাড়ের মতো, একটু পানির মধ্যে কিছু, একপাশে সবজিও। আমার ছয় বছরের সন্তানকে এসব চেনাতে চাই, সে এসব শিখুক।’ কথাগুলো বলছিলেন একসময়কার উন্নয়নকর্মী এবং বর্তমানে সমাজ গড়ার নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত ফাইজা রহমান। যিনি কিনা শিশুদের ঘরে প্রকৃতিকে পৌঁছে দেওয়ার ফন্দি এঁটেছেন। সুহৃদ মাহবুব সুমনকে নিয়ে যিনি প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারসহ নানা প্রাকৃতিক উদ্যোগ সামনে এনে ইতোমধ্যে পরিবেশবান্ধব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
শুরু যেভাবে
ফাইজা রহমান বলেন, ‘আমার বাগান দেখে অনেককেই জানতে চাইতো কীভাবে বাগান করবেন। শিশুরা কীভাবে এর সঙ্গে যুক্ত হবে। সেখান থেকেই বপনের কথা মাথায় আসে। ওদের এসবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য একটা কিছু করা যায়। সেই থেকেই আলাপ হয় সুমন মাহবুবের সঙ্গে। বাকি কাজটুকু তিনিই সামলেছেন।’
নগরের শিশুরা গাছ, সবুজ—এগুলো ভীষণ পছন্দ করলেও কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায় না উল্লেখ করে উদ্যোক্তা মাহবুব সুমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনাকালীন ছুটির মধ্যে শিশুরা গৃহবন্দি অবস্থায় সময় কাটাচ্ছে। এই সময়ে তারা কৃষি কাজ করলে সময়টা ভালো কাটবে, আর শিখবে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে। তাদের কাছে প্রকৃতি ধরা দেবে। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে ফাইজা রহমানের সঙ্গে আলাপ হয়। আমরা তখনই জানতে পারি ‘বপন’ নামক কিটের জন্য আগ্রহ আছে। আমাদের আলো প্রজেক্টের আওতায় শিশুদের জন্য এই কিট সরবরাহ করেছি।

করোনার বন্দিত্বকালে শিশুদের জন্য ‘বপন’
‘আমি শিশুদের চকচকে চোখ দেখি’
কেমন সাড়া পাচ্ছেন প্রশ্নে সুমন বলেন, ‘আমি আসলে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছি না। এই যে মাটি, সার কৃষির সঙ্গে জড়িত নানা জিনিসের কিট-বক্স হাতে পেয়ে শিশুদের চোখ চিকচিক করে ওঠে, আমি সেটিই দেখতে চাই। এখন শিশুরা বাসায়। তাদের সামনে আপনি নিত্য নতুন কর্মকাণ্ডের সুযোগ না দিলে তারা সময়টাকে উপভোগ করতে পারবে না। কৃষি কাজ করতে শুরু করলে প্রকৃতির সঙ্গে তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হবে। এ সময় এটি খুবই জরুরি। এতে ডিভাইস থেকে তাদের দূরে রাখা যাবে। এসব হাতে ধরে শেখানোর বিষয়।
‘ফিরে চল মাটির টানে’
বপনের বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বপনের জন্য সবজি বেড তৈরি করেছি। সঙ্গে যাবে মাটি, বীজ, হাতে কাজ করার কৃষি যন্ত্র। কাঠের তৈরি সবজি বেডগুলো ৬ ফুট বাই ৩ ফুট, ৫ ফুট বাই ৩ ফুট ও ৩ ফুট বাই ৩ ফুট। মাটিতে মেশানো হয়েছে ট্রাইকো কম্পোস্ট, পুরনো গোবর, কোকো ডাস্ট, হাড়ের গুড়া। এই মাটিটা একটু ঝরঝরা করা হয়েছে যাতে সহজে সবজির শেকড় চলতে পারে, ওয়াটার ড্রেনেজ ভালো থাকে। জৈব সারের নানান উপাদানের সাহায্যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, বোরনসহ নানা দরকারি পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ থাকে। এখানে নানারকম সবজি ও সবজি ফল যেমন: ঢেঁড়স, বেগুন, টমেটো করা যাবে। সঙ্গে থাকছে কীভাবে বপন করতে হবে তার নির্দেশনাও।’

করোনার বন্দিত্বকালে শিশুদের জন্য ‘বপন’
কী আছে শিশুর বপন কিটে
এর মধ্যে ১৩টি জিনিস অল্প অল্প করে থাকছে, যাতে শিশুরা এগুলা দিয়ে খেলতে খেলতে কৃষির হাতেখড়িটা নিতে পারে। জিনিসগুলো হলো—
১। মাটি
২। ট্রাইকো কম্পোস্ট
৩। ভার্মি কম্পোস্ট
৪। হাড়ের গুড়া
৫। সরিষার খৈল
৬। নিমের খৈল
৭। কোকো পিট
৮। পাঁচ রকমের একটু বড় বীজ
৯। সিডলিং ট্রে
১০। পানি দেয়ার স্প্রে বোতল
১১। একটা ৬ ইঞ্চি টব
১২। ছোট তিনটা নিড়ানি ও শোভেল টুলস, এবং
১৩। শিশুদের জন্য গিফট হিসেবে বনকাগজ।
কীভাবে এসব জিনিস নিয়ে কাজ করতে হবে তা বুঝার জন্য কিটের সঙ্গে ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতে লেখা একটি নির্দেশনা বা ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়াল আছে।
প্রকৃতির কাছে যাওয়ার বিকল্প নেই
বপনের মাধ্যমে ছাদে কৃষিকাজ শুরু করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সায়েমা খাতুন। কেন এ ধরনের একটি কাজ জরুরি মনে হলো এ বিষয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শহুরে বাচ্চারা এমনিতেই প্রকৃতির কাছে যেতে পারে না। এখন তো আরও সম্ভব না। অনলাইন ক্লাস করার পাশাপাশি তাদের বেশির ভাগ সময় কেটে যায় ডিভাইসে। কী করা যায় ভাবতে ভাবতে বপনের এই উদ্যোগের বিষয়ে জানলাম। আমার তখনও মাথায় আসেনি শিশুদের জন্য, শিশুদের নিয়ে এটা করা যায়। এরপর শিশু উপযোগী বপন কিট দেখি এবং আমি ছাদে বাগান করার সিদ্ধান্ত নিই। এরপর যোগাযোগ করে বাড়ির চার শিশু নিয়ে উৎসব করে বীজ বপন করলাম। শুরুতে তারা উৎসাহী ছিল না। কিন্তু যখন তারা বপন কিট নিয়ে নাড়াচাড়া করলো। তখন এটাতে বেশ মজা পেলো। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা আছেন। তাদের সময়টাও এতে করে ভালো কাটবে। আসলে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার বিকল্প নেই। কৃষিতে আমাদের শিশুদের সম্পৃক্ততা তাদের জন্যই সহায়ক হবে।’

 

/আইএ/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থী মৃত্যু: বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি
ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থী মৃত্যু: বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি
‘লম্বা’ নায়িকা প্রসঙ্গে কৃতির ব্যাখ্যা
‘লম্বা’ নায়িকা প্রসঙ্গে কৃতির ব্যাখ্যা
ভান মুন নোয়াম বমকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার
ভান মুন নোয়াম বমকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার
কারিগরির সনদ জালিয়াতি: সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ডিবি কার্যালয়ে
কারিগরির সনদ জালিয়াতি: সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ডিবি কার্যালয়ে
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ