করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য নির্ধারিত সব হোটেলের বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। দ্রুত বকেয়া বিল পরিশোধ করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন হোটেল মালিকরা। তা না হলে চিকিৎসকসহ অন্যান্যদের খাবার সরবরাহ করা কঠিন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা। এমনকি কোনও কোনও হোটেল বন্ধ করার মতো পরিস্থিতিতে পড়বে বলে মন্তব্য তাদের। বুধবার (২২ জুলাই) রাজধানীর হোটেল রেনেসাঁ গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানায় বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা)।
বিহা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কমিটির কো-চেয়ারম্যান খালেদুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এমনিতেই আমরা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তার ওপর যদি বকেয়া প্রায় ২০ কোটি টাকা না পাই তাহলে চিকিৎসকদের খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। হোটেল শাটডাউন করে দিতে হতে পারে। অথচ আমরা বিদেশি অতিথিদের চেয়েও বেশি আতিথেয়তা দিচ্ছি স্বাস্থ্যকর্মীদের।’
খালেদুর রহমানের কথায়, ‘শুরুতে আমাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পরিচালক (হাসপাতাল) যোগাযোগ করেন। তখন বলা হয়, ঢাকায় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে চার-পাঁচ হাজার কক্ষ দরকার। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিল পরিশোধ করা হবে। গত মার্চে লকডাউন শুরুর সময় আমাদের বিভিন্ন হোটেলে অল্প কিছু বিদেশি অতিথি ছিল যারা আটকে পড়েছিলেন। এ কারণে প্রথম অবস্থায় সব হোটেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের রাখার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময় বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমরা খুবই কম দামে কক্ষ বরাদ্দ দিয়ে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছি, এ টাকায় আমাদের খরচও উঠে আসে না।’
বিহা জানায়, সারাদেশে বিভিন্ন হোটেলের চার হাজার কক্ষে চিকিৎসকরা থাকছেন। অনেক হোটেল এখনও বকেয়া বিল পায়নি। প্রতিটি হোটেল ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বিহা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দাবি, ‘এমনিতে এখন আমাদের কোনও আয় নেই। তার ওপর দিনে চারবার খাবার সরবরাহ করা, রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য সেবাদানে জন্য খরচ হচ্ছে। আমাদের অনেক কর্মী ছুটিতে যাওয়ায় ও লকডাউনের কারণে ফিরতে না পারায় কিছু কর্মীকে নিতে হয়েছে বেশি বেতনে। সরকার একজনের খাবারের জন্য দিনে ৫০০ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু আমরা একটা মান বজায় রেখে চলছি, তাতে করে ৫০০ টাকায় একজনের তিনবেলা খাবারও হয় না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিহা সভাপতি ও হোটেল আগ্রাবাদের সিইও এইচএম হাকিম আলি, র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন ও র্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির আহমেদ, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকার এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (ফাইন্যান্স) আসিফ আহমেদ, লং বিচ হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, লেকশোর হোটেল গুলশানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী তারেক শামস, আমারি ঢাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও অশোক কেজরিওয়াল, রেনেসাঁ ঢাকা গুলশান হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার আজিম শাহ, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেডের আওতাধীন দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা এবং হানসার সিইও সাখাওয়াত হোসেন, দ্য ওয়ে ঢাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ এবং বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস মায়ার সিইও রাশাদুল হোসেন চৌধুরী।