X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

উভয় সংকট কাটে না যাদের নিয়ে

উদিসা ইসলাম
০৪ আগস্ট ২০২০, ১৬:৫৭আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২০, ১২:৫৩

উভয় সংকট কাটে না যাদের নিয়ে ১০ বছরের রানা ঈদের আগের দিনে সিগন্যালে এদিক-সেদিক ছুটছে। গাড়ি এসে দাঁড়ালেই ছোটবোনের জন্য একটা জামার টাকা চেয়ে ফিরছে। হেঁটে যাওয়া মানুষের সামনে হাত পেতে হয়তো বলছে, খিদা লাগছে, খাবার কিনে দেন। রানা গত সাড়ে তিন মাস পরে জুলাইয়ের মাঝামাঝি রাস্তায় নেমেছে। বাসায় খাবারের টান। মায়ের অসুখ। সব মিলিয়ে দাদির সঙ্গে সিগন্যালেই ফিরতে হয়েছে তাকে।

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করছেন যারা তারা বলছেন, সবসময়ই শিশুদের কাজ করা বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত হওয়া নিয়ে যখন আলাপ হয় তখন তার পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা না করেই কাজ ছাড়ানোর কথা বলা হয়। কাজ ছাড়িয়ে দিলে শিশুটির জীবন সংকটে পড়বে। এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরো পরিবারের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। ফলে কাজ না ছাড়িয়ে তার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেই প্রচেষ্টার দিকে মনোযোগী হওয়ার কথা বলছেন তারা। এদিকে করোনাকালে এই শিশুদের যদি আরেকটু ঘরে রাখার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে হয়তো অনেক শঙ্কা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব ছিল বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পথশিশুদের স্বাস্থ্যবিধি শিখিয়ে পারা যাবে না। ফলে তাদের আরও কিছুদিন সমস্ত সুবিধা দিয়ে রাস্তায় নামা থেকে বিরত রাখা জরুরি ছিল।

দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর সাধারণ ছুটি চলার সময়ে পথে, রাস্তার সিগন্যালে শিশুদের দেখা যায়নি বললেই চলে। গত এক সপ্তাহে প্রধান প্রধান সড়কে তাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। চন্দ্রিমা উদ্যান, বিজয় সরণি, আড়ং-আসাদগেট, পান্থপথ সিগন্যালে সরেজমিনে দেখা যায় লাল বাতিতে গাড়ি থামলেই এক ঝাঁক শিশু বিভিন্ন গাড়ির গ্লাসের সামনে হাজির হয়। আর গাড়ির ভেতরের থেকে চিৎকার দিয়ে গাড়ি না ছুঁতে তাদের হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন অনেকেই। করোনা সংক্রমণের ভয়ে বেশিরভাগ যাত্রীই শঙ্কায় থাকে।

উভয় সংকট কাটে না যাদের নিয়ে তেমনই এক যাত্রী তার সন্তান নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে যাওয়ার পথে থামেন পান্থপথ সিগন্যালে। দৌড়ে দুজন শিশু গাড়ির দুধারে দাঁড়ালে শঙ্কিত চেহারায় গাড়ি না ধরতে চিৎকার দিয়ে চালকের মাধ্যমে তাদের কিছু টাকা দেন। পরে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুধু এই পথশিশুরা নয়, আমি চাই না এসময় অন্য কেউ আমার গাড়ি ধরুক। এমনকি যদি আমি এভাবে গাড়ির কাচ নামিয়ে টাকা দেই সেটাও তো ক্ষতিকর। অথচ না দিয়েও উপায় থাকে না। এরা যাবে কোথায়? আমরা তো এদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করে দিতে পারিনি।

পথশিশুদের জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয় তার ঘাটতির জায়গা চিহ্নিত করতে গিয়ে শিশু অধিকারকর্মী আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, শুরুতেই বলতে হয় তাদের থাকার জায়গার ব্যবস্থা করা। সেটি নিশ্চিত না করতে পারার ফলে সরকারি বা বেসরকারি যে উদ্যোগগুলো নেওয়া হয় সেগুলোর টার্গেটকে স্পটে পাওয়া যায় না। কোরবানি ঘিরে শিশুরা অনেক কাজে যুক্ত হয়, ফলে করোনার কথা বলে এখন তাদের আস্তানায় রাখা যাবে না। কারণ তাদের মধ্যে যারা কোনও না কোনও রোজগারে জড়িত ছিল, সেটি গত কয়েকমাস বন্ধ। সমাধানের বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, পথশিশু হিসেবে সমাধান হবে না। এলাকাভিত্তিক ওয়ার্ডভিত্তিক কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করে সমাধান করতে হবে। যে যেই এলাকায় থাকে তাদের একত্রিত করে স্থানীয় এনজিওগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।

এদিকে শুরু থেকেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা খুবই দরকার ছিল উল্লেখ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন বা বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংগঠন সেদিকে মনোযোগ দিয়েছিল। কিন্তু এই পথশিশুদের অনেকেই গত কয়েকদিন ধরে রাস্তায় চলে এসেছে। এদের জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল। এরা যেন আপাতত রাস্তায় না আসে।

উভয় সংকট কাটে না যাদের নিয়ে শিশু অধিকার পরামর্শক ও বিশ্লেষক গওহার নঈম ওয়ারা মনে করেন, পথশিশু ও শ্রমজীবী শিশুদের নিয়ে এই ডিলেমা নতুন কিছু না। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শিশুকে কাজ থেকে ছাড়ালে তার জন্য আমরা কী করতে পারছি সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা পুনর্বাসনকে গুরুত্ব না দিয়ে যদি শিশুশ্রম বন্ধের কথা বলি তাহলে আসলে অনেক মানুষ বেঁচে থাকার সংগ্রামে পড়ে যাবে। আবার ত্রাণের ব্যবস্থা না করে রাস্তায় নামলে যদি নিষেধ করি সেটিও শোনার বাস্তবতা তাদের নেই। বন্যায় এখন ঘর ডুবেছে, ঈদের পরে এই শিশুদের সংখ্যা রাস্তায় আরও বাড়বে।   

বস্তি এলাকার অনেকেই গত দুই আড়াই মাসে ঢাকা ছেড়েছিল, কিন্তু তাদের অনেকেই আবার ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ফিরেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর মো. শামসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আসলে তো সব কিছু স্বাস্থ্য অধিদফতরের এখতিয়ারে নয়। তারপরও আমি বলতে পারি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তো অবশ্যই রয়েছে। আর যত বেশি মানুষ রাস্তায় বের হবে, ততই ঝুঁকি বাড়বে। শিশুদের বেলায়ও একই কথা, তবে শিশুদের ইনফেকশনের হারটা কম। সবেচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, স্কুল বন্ধ। এদের অনেকেই স্কুলে যেতো, সে সুযোগটা এখন নেই, স্কুলে খাবার ছিল, সেটাও বন্ধ এখন। এটা আসলে মাল্টি ফ্যাক্টিরিয়াল একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

/এমআর/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ