X
মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পর্যটন এলাকায় বারের লাইসেন্স দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার

নুরুজ্জামান লাবু
৩০ আগস্ট ২০২০, ১১:০০আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২০, ১৯:২৪




পর্যটন এলাকায় বারের লাইসেন্স দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার দেশের পর্যটন এলাকাসহ কূটনৈতিক জোন ও বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে মদ কেনাবেচার জন্য বারের (পানশালা) লাইসেন্স দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার লাইসেন্স, হোটেল অ্যান্ড বার লাইসেন্স, কাবাব অ্যান্ড বার লাইসেন্স, বিলাতি মদের অফ শপ লাইসেন্স, ডিউটি ফ্রি অফ শপ লাইসেন্স, ডিউটি পেইড অফ শপ লাইসেন্স নামে ছয় প্রকারের লাইসেন্স দেওয়া হবে। এছাড়া বিদেশি মদ আমদানি, মদ্যপানের পারমিট প্রদান, এছাড়াও একজন ব্যক্তি মাসে কতটুকু মদ গ্রহণ করতে পারবেন ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ‘হোটেল/রেস্তোরাঁ/ক্লাবে বার লাইসেন্স ও সব রকমের অফ শপ এ বিলাতি মদ/বিদেশি মদের লাইসেন্স/পারমিট প্রদান ও নবায়ন সংক্রান্ত’ একটি নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাদক নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ) মো. হামিদুর রহমান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইনেই বলা হয়েছে একটা বিধিমালা হবে। সেই বিধিমালা হচ্ছে। অ্যালকোহলের বিষয়টি তো একটা গাইডলাইনের মধ্যে আনতে হবে। এই বিধিমালা হলে গাইডলাইনের মধ্যে থেকে যারা আবেদন করবে, সরকার যদি মনে করে তাদের লাইসেন্স দেবে। আমরা বিধিমালা করছি। বিধিমালার আওতায় যারা আসবেন, কিছু শর্ত থাকবে, কিছু ক্রাইটেরিয়া থাকবে, এগুলো যারা ফুলফিল করবেন, তাদের বিষয়ে সরকার বিবেচনা করতে পারে।’

দেশে অ্যালকোহল বা মদ কেনাবেচায় এখনও মুসলিম প্রহিবিশন রুল ১৯৫০ ও এক্সাইজ ম্যানুয়াল, ভলিয়ুম-২ এর বিধান প্রতিপালন করা হয়। এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাহী আদেশে অ্যালকোহল বা মদ্যপান কেনাবেচার বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০ এর আলোকে ১৯৯৯ সালে একটি বিধিমালা করা হলেও সেখানে অ্যালকোহল বা মদপানের বিষয়ে কোনও কিছু উল্লেখ ছিল না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতদিন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে পাঁচ তারকা মানের হোটেলে বারের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পর্যটনের বিষয়টি মাথায় রেখে নিয়ন্ত্রিতভাবে টু-স্টার মানের হোটেলেও বারের লাইসেন্স দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। বারের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য যে খসড়া নীতিমালা তৈরি হয়েছে তাতে কূটনৈতিক জোন, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন এবং পর্যটন এলাকায় বারের লাইসেন্সের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন মানসম্পন্ন হোটেলের ক্ষেত্রে একাধিক বার লাইসেন্স প্রধান করা যাবে। তবে একাধিক লাইসেন্সের আবেদনের ক্ষেত্রে ভিন্ন স্থান নির্ধারণ এবং যৌক্তিকতা প্রদান করতে হবে। এরূপ ক্ষেত্রে আবেদনের যোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে যোগ্যতা ও যৌক্তিকতা উল্লেখপূর্বক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। হোটেলের মান ভেদে বার লাইসেন্সের সংখ্যা নিম্নরূপভাবে নির্ধরিত হবে- উপযুক্ততা ও বাস্তবতার নিরিখে দুই তারকা মানসম্পন্ন হোটেলে একটি বার লাইসেন্স, তিন তারকা হোটেলে সর্বোচ্চ তিনটি বার লাইসেন্স, চার তারকা হোটেলে সর্বোচ্চ চারটি, পাঁচ বা অধিক তারকা হোটেল সর্বোচ্চ সাতটি বার লাইসেন্স, পর্যটন বা কূটনৈতিক এলাকার রিসোর্টে একটি বার লাইসেন্স, রেস্টুরেন্টে একটি বার লাইসেন্স, ক্লাবে একটি বার লাইসেন্স, ডিউটি ফ্রি শপে আগমন/বর্হিগমন/ট্রানজিটের জন্য পৃথকভাবে একটি করে ডিউটি ফ্রি অফ শপ লাইসেন্স, ডিউটি পেইড অফ শপ লাইসেন্স একটি (বৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের কর্মস্থল বা বাসস্থান নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে), পর্যটন বা অভিজাত এলাকায় একটি বিলাতি মদের অফ শপ লাইসেন্স দেওয়া হবে।’

বিদেশি নাগরিকের শতভাগ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বার লাইসেন্স দেওয়া হবে না উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে বার লাইসেন্স ইস্যু করা যাবে। সেক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকের ওয়ার্ক পারমিট, বিনিয়োগ বোর্ডের নিবন্ধন, বিনিয়োগের পরিমাণ ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য দাখিল করতে হবে।’

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘ক্লাবে বার লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে ক্লাবের মদ্যপায়ী (পারমিটধারী) সদস্য ও সাধারণ সদস্যের পূর্ণ তালিকা যুক্ত করতে হবে। ক্লাবের লাইসেন্সের আবেদন করতে হলে সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে ২০০ জনের বিলাতি মদপানের পারমিট থাকতে হবে। পারমিটধারী ক্লাব মেম্বাররা ক্লাবে বারের জন্য নির্ধাতির স্থানে বসে মদ পান করতে পারবেন।’

মদ্যপানের পারমিট ইস্যুর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কোনও মুসলামনের ক্ষেত্রে মদ বা মদ জাতীয় পানীয় পানের পারমিট প্রাপ্তির জন্য ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্রসহ নির্ধারিত ফরমে সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করতে হবে। মুচি, মেথর, ডোম, ঝাড়ুদার ও চা বাগানের শ্রমিক ইত্যাদি পেশার লোকজন পারমিট নিয়ে দেশি মদ পান করতে পারবনে।’

জানা গেছে, আগেও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মদপানের জন্য ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে পারমিট গ্রহণ করতে হতো। তবে অমুসলিমদের জন্য আগের মতো নতুন বিধিমালায় কোনও বিধি-নিষেধ থাকছে না। মদপানের পারমিট আগের মতো বছর শেষে নবায়ণযোগ্য হবে না। প্রতিবছর নতুন করে পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। একই ব্যক্তির নামে একই মেয়াদে বিলাতি মদ এবং দেশি মদের পারমিট ইস্যু করা যাবে না। একজন পারমিটধারীকে মাসে সর্বোচ্চ সাত ইউনিট (প্রতি ইউনিট ৭৫০ মিলিলিটার) বিলাতি মদ, ১১.২৫ লিটার বিয়ার, ২.২৫ লিটার ওয়াইন বা মদ জাতীয় পানীয় সরবরাহ করা যাবে। তবে ২১ বছরের নিচে কোনও ব্যক্তির কাছে মদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা রাখা হয়েছে নীতিমালায়।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, বার বা অফ শপের পরিচালনার ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত নির্ধারিত সময়সূচি বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করতে হবে। শুক্রবারে বার বা অফ শপ বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া মহররম, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী, শব-ই-বরাত, শব-ই-কদর, ঈদ-ঊল-ফিতর, ঈদ-উল-আযহা এবং সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত দিনে বার বা অফ শপ বন্ধ রাখতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত বার অঙ্গনের মধ্যে কোনরূপ নাচ বা অশ্লীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাবে না। হোটেল/মোটেল/রিসোর্ট/রেস্টুরেন্ট/ক্লাব বার ও অফ সপ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা ও সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। দেশি মদের দোকান সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। কোনও ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট বা মার্কেটের প্রবেশ পথ, গোসলের ঘাট, শিশু সদনের প্রবেশ পথ বা তার ১০০ মিটার সংলগ্ন এলাকার মধ্যে সাধারণভাবে কোনও বার বা অফ শপের লাইসেন্স প্রদান করা যাবে না। সেনানিবাস এলাকার মধ্যে বার বা অফ শপ স্থাপন করতে হলে আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনানিবাস এলাকার জিওসির অনাপত্তিপত্র দাখিল করতে হবে।

যোগাযোগ করা হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, ‘আমি এক মাস হলো এখানে (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর) জয়েন করেছি। অ্যালকোহল নিয়ে খসড়া নীতিমালার বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনও বিস্তারিত কিছু জানি না। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তারপর জানাতে পারবো।’

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আজহারের খালাসের প্রতিবাদে ডাকা বাম ছাত্র সংগঠনের মিছিলে হামলা, আহত ১০
আজহারের খালাসের প্রতিবাদে ডাকা বাম ছাত্র সংগঠনের মিছিলে হামলা, আহত ১০
আ. লীগের বিচারের জন্য বিএনপি বেশি আগ্রহী: আমির খসরু
আ. লীগের বিচারের জন্য বিএনপি বেশি আগ্রহী: আমির খসরু
ইন্টারন্যাশনাল ইনোভেশন আইডিয়া কম্পিটিশনে তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব
ইন্টারন্যাশনাল ইনোভেশন আইডিয়া কম্পিটিশনে তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব
কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
ঈদের আগেই বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের নির্দেশ
ঈদের আগেই বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের নির্দেশ
সৌদি আরব থেকে উট এনে খামারে লালন-পালন, প্রতিটির দাম ৩০-৩২ লাখ
সৌদি আরব থেকে উট এনে খামারে লালন-পালন, প্রতিটির দাম ৩০-৩২ লাখ
নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা
নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা
একীভূত করা ব্যাংকের আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান
একীভূত করা ব্যাংকের আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের যে চার উপধারায় আপত্তি
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের যে চার উপধারায় আপত্তি