‘আজ কিছুই খাওয়াতে পারি নাই ভাই’, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ শাহাদাত হোসেন সিফাতের বাবা মো. স্বপন। তিনি বলেন, ‘এতদিন নল দিয়ে তাকে খাবার খাওয়ানো হতো। আজ হঠাৎ তার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। এখন আর খাওয়ানো যাচ্ছে না। তাই চিকিৎসকরা তাকে স্যালাইন দিয়ে রেখেছেন।’
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউ’র সামনে এ প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন মো. স্বপন। তাকে দেখে মনে হয়, এই পিতা কত রাত ধরে ঘুমাননি। ছল ছল চোখে কেবল বিলাপ করে যাচ্ছেন নিচু স্বরে। তিনি বলেন, ‘ছেলের গলা দিয়ে রক্ত এসে যায়। ঠিকমতো কথাও বলতে পারছে না। আপনারা সকলে আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। সিফাতের শরীরের ২২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও বেশ খারাপ। কারণ, তার শ্বাসনালী পুড়েছে বেশি।’
আইসিইউ’র সামনেই আরেকজন দগ্ধের আত্মীয় তজবি হাতে আল্লাহকে ডাকছেন। কেউবা ক্লান্ত শরীরে আইসিইউর সামনে একপাশে শুয়ে আছেন। এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই এদের নাম ধরে ডাক শোনা যায়। ভেতরে কাতরাচ্ছেন পাঁচ জন অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তি। আইসিইউ থেকে কিছুক্ষণ পর পর ওয়ার্ড বয়রা এসে সিট নম্বর বলে স্বজনদের নাম ধরে ডাকেন, বিভিন্ন ওষুধ বা কোনও পরীক্ষার নমুনা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। যখন যার নম্বর ধরে ডাক আসে, সেই স্বজন আতঙ্কিত হয়ে ছুটে যান।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, দগ্ধ ৩৭ জনের মধ্যে ৩১ জনই মারা গেছেন। একজনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচ জন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। এদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা অনেকটা ভালো। তিনি বলেন, ‘আইসিইউ’র পুরো সাপোর্ট না লাগলেও এখনও আইসিইউ থেকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করার মতো অবস্থা হয়নি। আশা করছি আরও কয়েকটি দিন যাওয়ার পর বোঝা যাবে।’
সিফাতের গলা দিয়ে এখনও রক্ত আসে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. পার্থ শংকর পাল বলেন, ‘দেখেন, সবারই শ্বাসনালী দগ্ধ হয়েছে। সিফাতের সার্বিক দগ্ধের পরিমাণ কম হলেও তার শ্বাসনালী বেশি পোড়া। তার অবস্থা বেশি আশঙ্কাজনক। এ জন্য যেসব চিকিৎসা প্রয়োজন আমরা সবই করে যাচ্ছি।’