X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাসা-বাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা টেন্ডার দিচ্ছে উত্তর সিটিও

শাহেদ শফিক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:০০আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৫৫

বাসা-বাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা টেন্ডার দিচ্ছে উত্তর সিটিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মতো উত্তর সিটি করপোরেশনও তাদের এলাকার বাসাবাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা টেন্ডারে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও সংস্থাটির পুরনো ওয়ার্ডগুলোতে কর্মরত প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারদের (পিসিএসপি) সঙ্গে অনুষ্ঠিত চুক্তির মেয়াদ থাকায় আপাতত ওইসব ওয়ার্ডে  টেন্ডার হচ্ছে না। তবে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

ডিএনসিসির সূত্র বলছে, পুরো বিষয়টি একটি নীতিমালার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে শৃঙ্খলা ও রাজস্ব আয় বাড়াতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সংস্থার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, করপোরেশন নগরীর বিভিন্ন স্থানে ময়লা ফেলার পাত্র বা অন্যকোনও আধারের  ব্যবস্থা করবে।  যেখানে অনুরূপ ময়লা ফেলার পাত্র বা আধারের ব্যবস্থা করা হবে, করপোরেশন সাধারণ নোটিশ দিয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর ও জায়গা-জমির দখলদারদেরকে তাদের ময়লা বা আবর্জনা উক্ত পাত্র বা আধারে ফেলার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে।’ এই আইন অনুযায়ী, করপোরেশন নির্ধারিত স্থান থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ভাগাড়ে নিয়ে যাবে। আর নাগরিকরা তাদের বাসা-বাড়ির বর্জ্য করপোরেশনের নির্ধারিত বিনে পৌঁছে দেবে। কিন্তু দেখা গেছে, বর্তমানে বাসাবাড়ির বর্জ্য কোনও নাগরিকই সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেয় না। এই সুযোগে গত ১৮ বছর ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ডভিত্তিক সংগঠন  বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে করপোরেশনের নির্ধারিত বিনে পৌঁছে দিচ্ছে। এজন্য প্রতিটি বাসা বা হোল্ডিং থেকে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, করপোরেশনের আওতাধীন বাড়ির মালিকরা তাদের বাড়ির মোট মূল্যের ১২ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে সাত শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স, তিন শতাংশ সড়ক বাতি ও দুই শতাংশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। অর্থাৎ মোট হোল্ডিং ট্যাক্সের ২৫ শতাংশই দেওয়া হয় ময়লা ব্যবস্থাপনার জন্য।

সিটি করপোরেশন বলছে, আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন নাগরিকদের বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। এই সুযোগেই বিগত সময়ে ভুঁইফোড় বিভিন্ন সংস্থা সেবার নামে বাসাবাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করতো এবং এই সংগ্রহ কার্যক্রমের জন্য সেসব সংস্থা তাদের খেয়াল খুশি মতো অর্থ আদায় করতো। তাদের সেই কার্যক্রমে কোনও দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহিতা ছিল না। সেজন্য, নিয়মতান্ত্রিকভাবে নীতিমালা অনুসরণপূর্বক জনগণকে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ডিএসসিসি নতুন এই কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এই ব্যবস্থাপনা চালু হলে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত হারে রাজস্ব পাবে।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি’র মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়টিকে একটি ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে চাই। এজন্য একটি নীতিমালা করে দেওয়া হবে। বর্জ্যের ফি-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে আমাদের নতুন যেসব ওয়ার্ড রয়েছে, সেখানে এটি টেন্ডারে দেবো। আমরা পুরো কাজটি আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে করতে চাই।’

বাসা-বাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা টেন্ডার দিচ্ছে উত্তর সিটিও ময়লা ফেলার জন্য প্রতিটি বাসা থেকে ১০০ টাকা করে ফি নেওয়া বেশি কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘ময়লাটা কিন্তু একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। ময়লা যদি নিতে হয় তার জন্য একটা ফি দিতে হবে। তবে অবশ্যই কত, সেটা নির্ধারিত থাকতে হবে। এটাতো আনলিমিটেড হতে পারে না। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। প্রতিটি বাসাবাড়িতে যারা যাচ্ছে, আমরা কিন্তু এটাকে একটা ম্যানেজমেন্টের মধ্যে নিয়ে আসবো। কিছুদিনের মধ্যে আমরা পুরো নীতিমালা করে দেবো। এটা ব্যালেন্সিং হতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা টেন্ডার নিচ্ছে তারা কয়েকগুণ বেশি প্রফিট করছে। আমার কাছে মেসেজ এসেছে অনেক জায়গায় ময়লার জন্য অনেক বেশি অর্থ আদায় করা হচ্ছে। আমরা নীতিমালার মাধ্যমে যেটা নির্ধারণ করে দেবো, তাদেরকে সে অনুযায়ী টাকা নিতে হবে। এর বাইরে তারা কোনও টাকা নিতে পারবে না। এ বিষয়ে আমি স্পষ্ট মেসেজ দিয়েছি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিটিতে যত্রতত্রভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে। লেক, খাল, ড্রেন কোনও কিছুই বাদ যাচ্ছে না। আমরা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলছি না। আমরা মনে করি, নগরবাসী যদি নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলে, তাহলে তারা যে কর দিচ্ছে তার মধ্যে হয়ে যায়। আমরা হোল্ডিং করের সঙ্গে যে বর্জ্য কর নিচ্ছি, সেটা আমাদের নির্ধারিত এসটিএস বা ডাস্টবিন থেকে ভাগাড়ে  নেওয়ার জন্য কর নিচ্ছি। বাসাবাড়ি থেকে নয়। দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনের তুলনায় আমরা অনেক কম কর নিচ্ছি।’

মেয়র বলেন, ‘ময়লার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রতি হোল্ডিং থেকে কর নিচ্ছে সাড়ে সাত শতাংশ। আমরা নিচ্ছি মাত্র দুই শতাংশ। আমরা ট্যাক্স বাড়াতে পারবো না। কিন্তু আমরা যে সার্ভিসটা দেবো সেটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করবো।’ কোনও শিশুকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহার করা যাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭৪টি ওয়ার্ডেই একটি করে প্রাথমিক বর্জ্যসেবা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান (পিসিএসপি) নিয়োগ দিয়েছে। প্রতিটি পিসিএসপিকে প্রতিমাসে এক লাখ টাকা করে বছরে ১২ লাখ টাকা সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে। চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) এ খাত থেকে ৯ কোটি টাকা আয় ধরেছে ডিএসসিসি।

আরও পড়ুন:

বাসাবাড়ির বর্জ্যের জন্য দু’বার কর দিতে হবে ডিএসসিসি’কে!

ময়লার টাকাও খান কাউন্সিলররা!

ময়লা অপসারণে বিশৃঙ্খলা না করতে কাউন্সিলরদের চিঠি

/এপিএইচ/আপ-এনএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর, শেষ হয়নি বিচার
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
৯৯৯-এ কলের পর দুই ছিনতাইকারী গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে চারজন নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে চারজন নিহত
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা গায়েব করা ৩ জন গ্রেফতার
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা গায়েব করা ৩ জন গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’