X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি

করোনাকালে গর্ভধারণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৪ অক্টোবর ২০২০, ০০:৩৫আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২০, ০০:৪১

বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি

করোনার মতো মহামারির মধ্যেও মাতৃসেবা বন্ধ থাকেনি। বরং জোর দেওয়া হয়েছে এই সময়ে গর্ভধারণে নিরুৎসাহিত করতে।দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘প্রসব পরর্বতী পরিবার পরিকল্পনা: কোভিড-১৯ এ মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষায় এর ভূমিকা’  শীর্ষক বৈঠকিতে এসব কথা বলেন বক্তারা। মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় শনিবার (৩ অক্টোবর) বিকালে শুরু হয় বাংলা ট্রিবিউনের সাপ্তাহিক এই আয়োজন।

ফিগো পিপি আই ইউ ডি ইনিসিয়েটিভ’র এডভাইজর ও  ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব গাইনোকোলজি অ্যান্ড অবসটেটরিক্স (ফিগো’র ) সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর স্যার সাবারাতনাম আরুলকুমারান বলেন, পরিবার পরিকল্পনা ২০২০ যখন গ্রহণ করা হয়েছিল তখন সব দেশ অঙ্গীকার করেছিল যে জিডিপির দশমিক ৭ ভাগ কন্ট্রিবিউট করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে কিছু কিছু দেশ বাধ্যবাধকতাটি অনুসরন করেনি।তারা মাত্র দশমিক ২ কিংবা দশমিক ৪ ভাগ করেছে করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দার অভিযোগে। সরকারের কন্ট্রিবিউশন এবং অঙ্গীকার কিন্তু এখানে খুব জরুরি। পুরো বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, ৬০-৭০ ভাগ কন্ট্রিবিউশন করে ইউএনএফপিএ, ইউএসএইডের মতো সংস্থাগুলো। আমার কাছে মনে হয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সরকার উভয়কেই দায়িত্ব নিতে হবে এসডিজি লক্ষমাত্রা অর্জনে।    

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের এমসিএইচ সার্ভিসেসের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, করোনা আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা হতভম্ব হয়ে যাই। পুরো স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে জীবন জীবিকা নিয়ে আমরা হতভম্ব হয়ে যাই। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু পদক্ষেপ নেয়। করোনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যারা যখন কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছিল না তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে আমাদের হাসপাতাল চালু রাখতে হবে। আমাদের ঢাকায় তিনটি বড় হাসপাতাল আমরা চালু রাখি। লালকুঠি মা ও শিশু হাসপাতালকে সরকার কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমাদের মা ও শিশু হাসপাতাল আমরা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেই। প্রথম ১৫ দিন আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে চালু রাখতে পারিনি। জেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলো প্রথম দিন থেকেই চালু ছিল। এটা ঠিক যে প্রথম দিকে কিছু পিপিই-মাস্কের সমস্যা ছিল। তা সত্ত্বেও অনেক চিকিৎসক  এবং স্বাস্থ্য কর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা চালু রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রথমদিক থেকে আমরা চেষ্টায় ছিলাম যে করোনাকালে কেউ যাতে গর্ভবতী না হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সবাই মিলে আমরা কিছু সার্কুলার দিয়ে দেই। এই সময়ে কেউ যাতে গর্ভধারণ না করে। এছাড়া মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য সুরক্ষা সামগ্রী আমরা সঠিকভাবে দিয়েছি।  

গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি প্রফেসর সামিনা চৌধুরী বলেন, আমরা যখন দেখলাম উহানে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে তখন ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি আমরা একটি জরুরি ইসি মিটিং ডাকলাম। আমরা মিটিংয়ে পরিকল্পনা ঠিক করলাম যে এই সময়ে আমরা কিভাবে কাজ করবো এবং কিভাবে আমাদের দেশের মায়েদের পাশে আমরা দাঁড়াবো। প্রথমে আমরা ঠিক করলাম যে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সবাইকে সেবা দিবো। এতে আমাদের সদস্যরা বেশ সাড়া দিয়েছে এবং আমরা অনলাইনে তাদের নম্বর দিয়ে দিলাম। এরপর আমরা কিছু প্রস্তাবনা তৈরি করে লিফলেট আকারে বিতরণ করলাম। সেটার প্রথম কথাই ছিল এই সময়ে গর্ভধারণ করবেন না। এই জিনিসটিকে আমরা তখন গুরুত্ব দিয়েছি, আমরা নিজেরাই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম যে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা কিভাবে রেসপন্স করবো। সেসময় দেখলাম যে সাধারণ মানুষের পক্ষে চিকিৎসা পাওয়া খুব কঠিন, তখন সবার মনোযোগ ছিল করোনা থেকে কিভাবে মানুষকে বাঁচানো যায়। সেই হিসাবে প্রায়োরিটি কিন্তু অনেক কমে গেল। যেকোনও ক্রাইসিসের সময় দেখা যায় যে গর্ভধারণের মাত্রাও বেড়ে যায়।

ওজিএসবি মহাসচিব প্রফেসর সালেহা বেগম চৌধুরী বলেন, আমরা শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমরা শুরুর দিকে গর্ভধারণ করা যে নিরাপদ নয় সেই বার্তার সঙ্গে জরুরি সেবাগুলোকে যেমন যারা গর্ভধারণ করে ফেলেছেন তারা কিভাবে সেটা পালন করেন, সেটা আমরা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়েছি প্রতিদিনই। সেই সঙ্গে আমরা এও বলেছি যে এই সময়ে যদি কোনও জটিলতা হয়, তারা যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তারা কখন হসপিটালে যাবে সেটাও আমরা দিয়েছি। সারাদেশে আমাদের ২ হাজারের ওপরে সদস্য আছে। তারা সবাই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। আমাদের সমষ্টিগত একটা প্রচেষ্টা ছিল সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে। 

ওজিএসবি ফিগো পিপিআাইইউডি প্রজেক্টের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর পারভীন ফাতিমা বলেন, কোভিডের কারণে আমরা যে সন্তান ধারণের জন্য সেবা দিবো না এটা আমরা মানুষকে বুঝাতাম। কিন্তু অনেকের বয়স হয়ে গেছে, অনেক অপেক্ষা হয়ে গেছে, বাচ্চা ধারন করতে যারা পাচ্ছে না, তারা কিন্তু অস্থিরতায় ভুগছে। তাদের জন্য আমরা কিছু কিছু কাজ করেছি। করোনার মধ্যেও এমন কিছু লোক চলে আসছে যারা অনেকদিন সন্তান নেওয়ার অপেক্ষায় ছিল। কেন হচ্ছে না – এটা কিন্তু তারা এখন বুঝছে। তাদের জন্য অবশ্যই আমাদের কিছু করতে হচ্ছে। জন্মনিয়ন্ত্রকারী প্রক্রিয়া কিন্তু প্রত্যাশিত গর্ভধারণকে রোধ করে। কোভিড আসলে আগামী প্রজন্মের সন্তানদের কী অবস্থায় নিয়ে যাবে, আমরা কিন্তু জানি না।

তিনি আরও বলেন, করোনা শুরুর দিকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে এটা যেভাবে ছড়ায় তাতে তা সহজে যাবে না। যেহেতু যাবে না আমরা তো বসে থাকতে পারবো না। এজন্য আমরা চাই যেভাবে কোভিড থেকে নিজেদের বাঁচানো যায়, সেই সুরক্ষা পালন করে সংক্রমণ যাতে না হয়। কারণ এই মুহূর্তে কিন্তু আমরা আর চিকিৎসা বন্ধ করে রাখতে পারছি না। আমাদের প্রধান টার্গেট থাকে যাতে আমরা সবাই সচেতন থাকি।    

ইউএনএফপিএ’র এস আর এইচ আর  প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ডা. এ এস এম হাসান বলেন, তথ্য ও সেবা পাওয়া প্রত্যেকটি নাগরিকের অধিকার। কিন্তু আমরা দেখেছি যে বৈশ্বিক এই মহামারির কারণে মানুষের স্বাস্থ্য, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেকেই। তার মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা সেবা বা তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেকেই বাধাগ্রস্থ হয়েছিলেন। যার কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ যদি বেড়ে যায় সেটি কিন্তু মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সামগ্রিকভাবে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার ওপর একটা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

ওজিএসবি ফিগো পিপিআাইইউডি প্রজেক্টের ডেপুটি ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ফারহানা দেওয়ান বলেন, করোনার কারণে দুইভাবে আমাদের প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের সুযোগ হচ্ছে। একটি হচ্ছে টেলিমেডিসিন। এটি শুরু করার প্রথমদিকে কিন্তু আমরা কেউ বাসা থেকে বের হইনি এবং ওনারাও কেউ আসেনি। এখন যাদের ডেলিভারি হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু ডেলিভারি পরবর্তী একটি পদ্ধতি দেওয়া কিন্তু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেয়েছি। সব মিলিয়ে কিন্তু প্রাইভেট প্র্যাকটিসে আমরা সমান সেবা দিচ্ছি।

কোভিড ১৯ বিষয়ক জনস্বাস্থ্য কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, আমাদের কিন্তু বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে। আমাদের কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক দেখা গেছে এই বিয়ের পরিমাণ ১৩ শতাংশ বেশি। এসব মেয়েদেরকে জন্মনিয়ন্ত্রণ বুঝাতে হবে, তারা যাতে প্রেগনেন্ট না হয়। শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি দেওয়া সম্পর্কে আমাদের আরও ভাবতে হবে। কম বয়সে যাদের বিয়ে হচ্ছে তারা কিন্তু প্রেগ্নেন্ট হয়ে যাচ্ছে, তারা যে গর্ভধারণ করতে পারে সেটা প্রমাণ করার জন্য মা হয়। এই প্রেগন্যান্ট মায়েরাই কিন্তু অনেক ধরনের সমস্যায় পড়ে। এদের মধ্যেই কিন্তু মাতৃ মৃত্যুর হার অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে কিন্তু বাড়িতেই প্রসব বেড়ে গেছে। বাড়িতে আগে ৫০ শতাংশ প্রসব হতো, এখনও প্রায় ৭০ শতাংশ প্রসব বাড়িতে হচ্ছে।  

 

/এসও/এনএস/এফএএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা