X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইজারা টার্মিনালের, টোল আদায় মার্কেটে!

শাহেদ শফিক
২৫ অক্টোবর ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২০, ১৭:১৮

 

ডিএসসিসি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ফুলবাড়িয়া স্টপ ওভার টার্মিনালের ইজারাদারের বিরুদ্ধে আশপাশের মার্কেট থেকে টোল আদায়ের অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে সম্প্রতি তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছেন। তারা বলছেন, ইজারাদার টার্মিনাল ইজারা নিলেও তারা দোকানপাটের মালামাল থেকেও টোল আদায় করছে। তবে ইজারাদারের দাবি, যারা এই অভিযোগ করেছেন তারা আগেও টোল দিতেন। তবে আগে অবৈধভাবে যারা আদায় করতো তাদেরকে এই টোল দেওয়া হতো।

জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর হতে এক বছরের জন্য দুই কোটি ২৫ লাখ টাকায় ডিএসসিসির মালিকানাধীন ফুলবাড়িয়া স্টপ ওভার টার্মিনালটি ইজারা নেয় মিনহাজ এন্টারপ্রাইজ। ইজারার শর্ত অনুযায়ী ইজারাদার টার্মিনালের আওতাভুক্ত গুলিস্তান-মিরপুর ১, ৯, ১০, ১১ ও ১২, চিড়িয়াখানা, এয়ারপোর্ট, আব্দুল্লাহপুর, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, রামপুরা, গাবতলী, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, কলাকুপাবান্দুরা, সাভার, নবীনগর, আরিচা (বিআরটিএ কর্তৃক লিজ প্রদত্ত) কাপাসিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী, শ্রীপুর, সখীপুর, শ্রীনগর, দোহার ও বাড়ৈখালী রুটে চলাচলকারী বাস মিনিবাস প্রতি প্রতিদিন ৪০ টাকা হারে টার্মিনাল ফি ও নির্ধারিত কুলি মজুরি আদায় করবে। নির্ধারিত স্থান ও রুট ছাড়া অন্য কোনও স্থান বা রুটে রাজস্ব আদায় করা যাবে না। অটোরিকশা সিএনজি হতে প্রতি ট্রিপে ১০ টাকা ও টেম্পো হতে ৩০ টাকা হারে আদায় করা যাবে। কার্যাদেশে পরিবহনের নামও উল্লেখ করে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে পরিবহন থেকে আদায়কৃত টোলের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।

ইজারাদারের বিরুদ্ধে ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

ইজারার শর্ত অনুযায়ী কোনও যাত্রী সামান্য মালামাল উঠানো বা নামানোর জন্য কুলিদের সাহায্য না চাইলে কোনও কুলি উক্ত মালামাল স্পর্শ করা বা মজুরি দাবি করতে পারবে না। যাত্রীসাধারণের সঙ্গে কোনও কুলি বা আদায়কারী কোনও প্রকার দুর্ব্যবহার, অশালীন উক্তি, জোরপূর্বক অর্থ আদায় করা যাবে না।

কিন্তু আশপাশের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ইজারাদার টার্মিনাল বুঝে নেওয়ার পর থেকেই তারা দোকানপাটের সামনে থেকে টোল আদায় করছে। তাদের দাবি কোনও ব্যবসায়ী যদি তাদের গোডাউন থেকে মালামাল নিয়ে দোকানে নেয় সেখান থেকেও টোল আদায় করা হচ্ছে। এ অভিযোগে গত ২০ অক্টোবর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা।

রিয়াদ হোসেন নামে এনেক্স টাওয়ারের একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার কাছে ১০টি কার্টনের বিপরীতে ৫০ টাকা করে ৫০০ টাকা চাঁদা চেয়েছে। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাদের বলে, এটা আমরা মেয়রের কাছ থেকে টেন্ডার নিয়েছি। মার্কেটে যত মাল ঢুকবে এবং যত মাল বের হবে, টাকা দিতে হবে। আমরা তাদেরকে বলেছি, তাহলে মেয়র সাহেব আমাদের চিঠি দেবেন, তারপর আমরা দোকান থেকে চাঁদা দেবো। এরপর তারা কয়েকজন এসেছে, আমাদের তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছে।

ইজারাদারের বিরুদ্ধে ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

রিয়াদ হোসেন চাঁদার রশিদ দেখিয়ে বলেন, এখানে স্পষ্ট লেখা আছে তারা যানবাহনের টোল নেবেন। কিন্তু তারা আমাদের প্রতিটি বস্তা ও কার্টন থেকে মার্কেটে ঢুকতেও ৫০ টাকা ও বের হতেও ৫০ টাকা করে নেয়। অথচ আমরা লাভই করি ৫০ টাকা। এর মধ্যে ১০০ টাকা দিলে আমাদের থাকবে কী?

ব্যবসায়ীরা জানান, কোনও ক্রেতা মার্কেট থেকে কোনও কিছু কিনে নিলেও তাদের চাঁদা দিতে হচ্ছে। মার্কেটে একটা মালের বান্ডেল নিয়ে যেতে হলে তাদেরকে টাকা দিতে হয়। বের করলেও টাকা দিতে হয়। গোডাউন থেকে আনলেও টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে ব্যবসায়ীদের গালমন্দ করে, মারতে যায়, হুমকি দেয়। যে গ্রাহকের কোনও কুলির প্রয়োজন নেই সে কেন কুলি মজুরি বাবদ টাকা দেবে? ইজারার শর্তেও এটা বলা আছে যদি যাত্রীর কুলির প্রয়োজন না হয় তার কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করা যাবে না।

জানতে চাইলে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান মিনহাজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাইফুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই ব্যক্তিরা আগেও চাঁদা দিতেন। কিন্তু তখন তারা চাঁদাবাজদের চাঁদা দিতেন। একটি চক্র এই টাকা লুটপাট করে খেয়েছে। এখন আমরা এর ইজারা নিয়েছি। সরকার রাজস্ব পায়। তারা এখন বিভিন্ন কথা বলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইজারার পুরো বিষয়টি আমার বড় ভাই টিটু দেখেন। তিনি এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন।

ইজারাদারের বিরুদ্ধে ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

জানতে চাইলে টিটু বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বন্ধ ছিল। কিছু লোক এটা নিয়ন্ত্রণ করতো। বর্তমান মেয়র সাহেব টেন্ডার শিডিউল কল করার পর আমরা টেন্ডার ড্রপ করি। এখন আমরা রাজস্ব আদায় করছি। আমাদের পাঠাইছে সিটি করপোরেশন। আমরা মেয়রকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তিনি হয়তো ব্যবসায়ীসহ সবার সঙ্গে বসে এটা সমাধান করবেন।

তিনি আরও বলেন, যারা আগে অবৈধভাবে এই টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ করতো তারা হয়তো ব্যবসায়ীদেরকে ভুল বুঝিয়ে এটা করাতে পারে। তার মতে এমনি কেউ পয়সা দিতে চায় না। যখন কেউ ক্ষমতা খাটায় তাকে পয়সা দেয়। যখন কেউ চাঁদাবাজি করে তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু বৈধভাবে রাজস্ব নেওয়া হলে তাতে তাদের আপত্তি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দোকানের মালামাল তো আমাদের না। এখানে একটু ভুল বোঝাবুঝি আছে। বিষয়টিতে অস্পষ্টতাও আছে। মালিক সমিতিকে নিয়ে বসা হলে ক্লিয়ার হবে। কোন জায়গা থেকে রাজস্ব নেওয়া যাবে, কোথায় নেওয়া যাবে না সেটা ক্লিয়ার হওয়া যাবে।

ইজারাদারের বিরুদ্ধে ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

জানতে চাইলে ডিএসসিসির মহা-ব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমন অভিযোগ যারা করেছে তাদের কিছু কথা অতিরঞ্জিত হতে পারে। আমরা ওটা ইজারা দিয়েছি। সেখানে পরিবহন ভেদে টোল নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আর ইজারাদার যদি ইজারার শর্তের বাইরে কিছু করে থাকেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’

এদিকে টার্মিনালে মালামাল নামানোর ক্ষেত্রে কুলি মজুরি আদায়ের হারও বাড়িয়েছে সিটি করপোরেশন। তাতে দেখা গেছে, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, আদা, মরিচ, আলু, ডিম, শসা ও পটোলের জন্য প্রতি বস্তা বা ঝুড়ি (বড়) ২০ টাকার স্থলে ৩০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ছোট বস্তা বা ঝুড়িতে ১০ টাকার স্থলে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর প্রতি খাঁচি মাছ (বড়) ৩০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা ও প্রতি খাঁচি (ছোট) ৩০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি খাঁচি (বড়) পানের জন্য ৪০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা ও ছোট খাঁচির জন্য ২০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

প্রতি বান্ডেল চামড়া ৩০ টাকার স্থলে বড় বান্ডেল ৫০ টাকা ও ছোট বান্ডেল ৪০ টাকা; মুরগি প্রতি বড় খাঁচি ৪০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা ও ছোট খাঁচি ২০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা; প্রতি কার্টন ওষুধ ১০ টাকার স্থলে বড় কার্টন ৩০ টাকা ও ছোট কার্টন ২০ টাকা; প্রতি কার্টন সিগারেট ১০ টাকার স্থলে বড় কার্টন ২০ টাকা ও ছোট কার্টন ১০ টাকা; প্রতি ঝুড়ি ফল ২৫ টাকার স্থলে বড় ঝুড়ি ৫০ টাকা ও ছোট ঝুড়ি ৪০ টাকা; প্রতি খাঁচি টমেটো ২৫ টাকার স্থলে ৪০ টাকা; ফার্নিচার ৬০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা; বৈদ্যুতিক ক্যাবল প্রতি বান্ডেল ১৫ টাকার স্থলে ৫০ টাকা; কাপড় প্রতি বড় বেল ৫০ টাকার স্থলে ৬০ টাকা ও ছোট বেল ২৫ টাকার স্থলে ৩০ টাকা; প্রতি বড় টিভি ২০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা ও ছোট টিভি ১৫ টাকার স্থলে ৪০ টাকা; স্যালোমেশিন ৭০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা; কম্পিউটার ১০০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা; জুতার কার্টন বড়টি ৩০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা ও ছোটটি ১৫ টাকার স্থলে ৩০ টাকা; হাঁড়ি-পাতিল প্রতি বড় বস্তা ৫০ টাকা ও ছোট বস্তা ৪০ টাকা; টিউবওয়েল প্রতিটি ২০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা; বিভিন্ন যন্ত্রাংশের কার্টন প্রতিটি ২০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা; মোটরসাইকেল প্রতিটি ৮০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা, বাইসাইকেল প্রতিটি ১০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা ও প্রতিটি বান্ডেল বইখাতা ১৫ টাকার স্থলে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এই কুলি মজুরি ফি টার্মিনালের জন্য। কোনও দোকানপাটের জন্য নয়। টার্মিনাল ইজারা দেওয়া হয়েছে দোকানপাট থেকে টোল আদায়ের জন্য নয়।

/এমআর/এমএমজে/
সম্পর্কিত
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
ধ্রুব এষ হাসপাতালে
সর্বশেষ খবর
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ