X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
ডিএনসিসি ওয়ার্ড নং ২৯

ময়লার বিল ১০০ টাকা, নৈশপ্রহরীর ৯০; বেআইনি সিদ্ধান্ত কাউন্সিলরের, জানালো ডিএনসিসি

শাহেদ শফিক
১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৩:০০আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৩:৪৯

ডিএনসিসি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অনুমোদন ছাড়াই ২৯ নং ওয়ার্ডের বাসাবাড়ির ময়লার বিল ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর আলহাজ মো. সলিম উল্লাহ ওরফে সলু। নির্ধারিত ৩০-৫০ টাকা থেকে এক লাফে ১০০ টাকা করেছেন নিজের মর্জিমতো। পাশাপাশি নৈশপ্রহরীর চার্জও নির্ধারণ করেছেন বাসাপ্রতি ৯০ টাকা। আবার দোকানদারদের জন্য এ চার্জ ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্তও নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে স্বভাবতই বিরাজ করছে ক্ষোভ।

সিটি করপোরেশন বলছে, করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়া কাউন্সিলরের এমন অর্থ আদায়ের সিদ্ধান্ত বেআইনি। কাউন্সিলর বলছেন, বিভিন্ন স্থানে এর চেয়ে বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই অনিয়মটাকেই ‘নিয়ম’ বানিয়ে ফেলতে স্বপ্রণোদিত হয়ে বাড়তি চার্জ নির্ধারণ করেছেন তিনি।

ডিএনসিসি সূত্র জানিয়েছে, নগরীর বাসাবাড়ি থেকে ভ্যান সার্ভিসের মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহ করে করপোরেশনের ডাস্টবিনে পাঠাচ্ছেন বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ২০০০ সাল থেকে করপোরেশনের অনুমোদন নিয়েই প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিডব্লিউসিএসপি) সেবাটি দিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সর্বশেষ প্রতি বাড়ি থেকে মাসে ৩০ টাকা করে আদায় করার অনুমতি দেয় ডিএনসিসি। এই অর্থ দিয়ে কর্মীদের বেতন ও ভ্যান সার্ভিসের অন্যান্য খরচ বহন করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ওয়ার্ডে এভাবেই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে এর বিল ৩০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কাউন্সিলর সইসহ একটি লিফলেট প্রকাশ করে তার ধার্যকৃত অর্থ পরিশোধ করার জন্য প্রতিটি বাসা বাড়িতে পৌঁছে দেন

সম্প্রতি ডিএনসিসির সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে ২৯ নং ওয়ার্ড স্থানীয় কাউন্সিলর হাজী মো. সলিম উল্লাহ বর্জ্য সংগ্রহে নতুন করে ফি নির্ধারণ করেন। পাশাপাশি নাইট গার্ডের নামেও ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি ফ্ল্যাট হতে বর্জ্যের জন্য ১০০ টাকা এবং নাইট গার্ড বাবদ ৯০ টাকা ও টিনশেড (প্রতি পরিবার) ৫০ টাকা এবং নাইট গার্ড ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ছোট দোকানের আকার বুঝে বর্জ্য ও নাইট গার্ডের বিল ধরা হয়েছে কোনও আলোচনা বা অনুমোদন ছাড়াই। ১ অক্টোবর হতে ধার্যকৃত অর্থ আদায়ও করা হচ্ছে।

তবে কাউন্সিলরের ধার্যকৃত এমন অর্থ দিতে রাজি নন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন কাউন্সিলর নাগরিকদের সঙ্গে কথা না বলে এভাবে টাকা ঠিক করে দিতে পারেন না। কাউন্সিলরের এমন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থানীয় বাসিন্দারা ময়লার বিল নিতে অপারগতা জানালে কাউন্সিলর তার সইসহ একটি লিফলেট প্রকাশ করে তার ধার্যকৃত অর্থ পরিশোধ করার জন্য প্রতিটি বাসাবাড়িতে পৌঁছে দেন। তাতে বলা হয়, বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের নিরাপত্তার জন্য দক্ষ, অভিজ্ঞ ও আধুনিক পোশাকে সজ্জিত নৈশপ্রহরী ও কমান্ডাররা নাকি নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে। এতে এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি কমে যাবে, এমনই যুক্তি তার।

লিফলেটে আরও বলা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি উদ্যোগে ১ অক্টোবর থেকে ২৯ নং ওয়ার্ডের পূর্ব তাজমহল রোড (মিনার মসজিদ কমপ্লেক্স ও শাহজাহান রোড), পশ্চিম তাজমহল রোড ও শিল্প প্লট, জয়েন্ট কোয়াটার (আজিজ মহল্লা), হাজী চিনু মিয়া রোড (টিক্কাপাড়া) ও জান্নাতবাগ (বিজলী মহল্লা) সহ ২৯ নং ওয়ার্ডে নৈশপ্রহরীর মাধ্যমে নিরাপত্তা এবং ময়লা ও আবর্জনা অপসারণের দায়িত্ব ‘স্বপ্ন মানবিক কল্যাণ সংস্থা (স্বমকস)’ এর ওপর ন্যাস্ত করা হয়েছে।

কাউন্সিলরের এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বেআইনি বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি। সংস্থাটির একজন শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এমন বিষয়ে কাউন্সিলরকে ডিএনসিসি কোনও অনুমোদন নেননি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দিতে হলে তা বোর্ড সভায় উত্থাপন করে অনুমোদন নিতে হবে।

জানতে চাইলে কাউন্সিলর হাজী মো. সলিম উল্লাহ (সলু) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এলাকার নিরাপত্তার জন্য আমরা নাইট গার্ড নিয়োগ দিয়েছি। এজন্য একটা ফি ধরা হয়েছে। সেটা ৯০ টাকার বেশি নয়। কেউ কেউ কেন সেটা ৩০০ টাকা করেছে সেটা আমার জানা নেই। আগে অনেকেই অভিযোগ করতো ময়লার বিল বেশি নেওয়া হচ্ছে। সেজন্য আমি ১০০ টাকা ঠিক করে দিয়েছি।

ডিএনসিসি থেকে ময়লার বিল ৩০ টাকা করে নেওয়ার অনুমোদন রয়েছে। সেখানে ১০০ টাকা কেন? এবং করপোরেশনের বোর্ড সভার অনুমোদন ছাড়া কাউন্সিলর এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই।’

জানতে চাইলে স্থানীয় সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর শাহিন আক্তার সাথী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমার সঙ্গে কোনও পরামর্শ করা হয়নি। কয়েকজন বাড়ির মালিক ও দোকানদার আমাকে বেশি টাকা নির্ধারণের অভিযোগ জানিয়েছেন। আমরা যখন কাজটি করতাম তখন নিছক সেবা হিসেবেই করতাম। তখন ৩০ টাকা করে নেওয়া হতো। এখন এ কাজ তারা করছে।

এ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও ‘স্বপ্ন মানবিক কল্যাণ সংস্থার (স্বমকস) সুপারভাইজার মো. অনিক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের এই বর্জ্য অপসারণের কাজ আগে স্থানীয় সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর শাহিন আক্তার সাথীর ছিল। তিনি কাউন্সিলর হওয়ার পর এই দায়িত্ব আমাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এজন্য আমাদের কাছে অনাপত্তিপত্রও আছে। বর্জ্য অপসারণের জন্য ডিএনসিসি থেকে সাথীর প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত নেওয়া আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১০০ টাকা অনেকেই দিতে চায় না। পরে কাউন্সিলরের কথা বলার পরে এখন অনেকেই দিচ্ছেন। আর কাউন্সিলরের অনুমোদন নিয়েই গার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওয়ার্ডে ১৭ জন গার্ড ও একজন কমান্ডার নিয়োগ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এসএম শফিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এভাবে কেউ বর্জ্যের জন্য টাকা নির্ধারণ করে দিতে পারেন না। এজন্য করপোরেশনের অনুমোদন নিতে হবে। আমরা এমন হারে বর্জ্য ফি আদায়ের কোনও অনুমোদন দেইনি।

/এফএ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা এজেন্সি মালিকদের
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা