X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘তথ্য প্রকাশে বাধা দিলে ভুয়া খবর ডালপালা মেলে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ নভেম্বর ২০২০, ০১:৪৯আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২০, ০১:৫৪

‘ভুল তথ্য ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীরা ‘তথ্য চেপে রাখতে চাইলে, প্রকাশে বাধা দিলে ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর ডালপালা মেলবে। তখন একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হবে, গুজব সৃষ্টি হবে, আতঙ্ক তৈরি হতে পারে।’ শুক্রবার (২০ নভেম্বর) রাতে পেন বাংলাদেশের আয়োজনে ‘ভুল তথ্য ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক সোহরাব হাসান।

বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেলের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আরও অংশ নেন– একাত্তর টেলিভিশনের হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি নজরুল কবীর এবং দৈনিক জনকণ্ঠের সাহিত্য সম্পাদক মিলু শামস। সেমিনারের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন পেন বাংলাদেশের মহাসচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। পেন বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে এই সেমিনার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। 

এ আয়োজনে সোহরাব হাসান আরও বলেন, ‘ফেক নিউজ নিউজ নয়, সুতরাং সঠিক তথ্য দেওয়াই হচ্ছে ফেক নিউজকে পরাস্ত করার উপায়। এক্ষেত্রে সরকারের করণীয়, অবাধ তথ্যপ্রবাহে কোনও বাধা না দেওয়া। সাংবাদিক, লেখকৃ মুক্তমনে নির্দ্বিধায় লিখতে পারলে, ভয়ের পরিবেশ না থাকলেই ফেক নিউজ পেছনে চলে যাবে।’

নজরুল কবীর বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা প্রমাণ করেছি যে, আমরা আসলে অধিকাংশ মানুষ জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার জায়গায় নেই। আমার ফেসবুকের টাইমলাইনের এডিটর আমি, আমার টাইমলাইনের ডিসিশন মেকার আমি, আমার ফেসবুকে প্রশ্ন করার অধিকারও একমাত্র আমার। ফলে আমি যখন তিনটি দায়িত্ব পালন করছি, আমি যদি সেরকম সচেতন মানসিকতা সম্পন্ন না হই, সেরকম যুক্তিসম্পন্ন মানুষ না হই, তাহলে সমাজে এখন যে ধরনের প্রোপাগান্ডা হচ্ছে, সেটি হবে। সমাজে গুজব এবং ফেক নিউজ বৈধতা পায়, বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে, যখন ফেক নিউজকে অথবা এই ভুল তথ্যকে সহায়তা করার মতো আচরণ সরকার বা রাষ্ট্র করে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত ভুল তথ্য হতে পারে। রাষ্ট্রের আইন যখন করা হয় মেনে চলার জন্য, তখন সে নাগরিককে সেভাবে তৈরি করতে হয়। আমরা আজকে যখন ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম, ইউটিউব ব্যবহার করছি, আমরা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এসবের অপব্যবহার করছি। কারণ আমরা ব্যক্তিগত পছন্দের জায়গা থেকে এগুলো ব্যবহার করছি। আমার কোনও জবাবদিহির জায়গা নেই, রাষ্ট্র আমাকে জবাবদিহি করতে পারে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কতকগুলো জায়গা আছে যেখানে জবাবদিহি করতে পারে না। রাষ্ট্র আইন করেছে যে কী করা যাবে না, আবার অন্য দিক দিয়ে যেটা করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছি না। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ এক অভিন্ন সত্তা। এই অভিন্ন সত্তা নিয়ে যখন প্রশ্ন করা হচ্ছে, আমরা তা আইনের আওতায় আনছি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। চীন যেটা করেছে সেরকমভাবে আমাদেরও ভাবতে হবে। কারণ আমরা এখনও আয়ারল্যান্ড হয়ে উঠিনি। আমাদের ম্যাচিউরিটি এখনও আয়ারল্যান্ডের মতো হয়নি। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায় আর স্বেচ্ছাচারিতা কী, এই পার্থক্য এখনও বুঝিনি।’

একাত্তর টেলিভিশনের হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ বলেন, ‘ফেসবুকের যে অবকাঠামো তার মধ্যে কিন্তু ফেক নিউজ দেওয়ার একটি পুরো বন্দোবস্ত করা আছে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কিন্তু প্রত্যেকের বক্তব্য শোনার চেষ্টা করা হয়, সেগুলো এক জায়গায় এনে তারপরও উপস্থাপন করা হয়। কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা, সেটি প্রমাণ করার এখতিয়ার সাংবাদিকের নেই। সাংবাদিক সবার বক্তব্য উপস্থাপন করবেন, জনগণ বুঝে নেবে কোনটি সত্য কোনটা মিথ্যা। কোনটি ভুল কোনটি সঠিক, কোনটি গুজব কোনটি গুজব নয়। কিন্তু ফেসবুকে কেবল নিজের মত প্রকাশ করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন নিজের মত প্রকাশ করা হয়, তখন ইচ্ছা করেই যেকোনও ধরনের তথ্য বলা যায়, খুবই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। এটা নিয়ে কোনও ক্রস চেক হচ্ছে না। যখন অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে কোনও মত মিলে যায়, তখন কিন্তু একটি অসত্য তথ্য সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার বিরাট একটা অসুবিধার মধ্যে আমরা পড়ে যাই। এর পরিণতি কিন্তু ভীষণরকম ভয়ঙ্কর।’ 

জনকণ্ঠের সাহিত্য সম্পাদক মিলু শামস বলেন, ‘আশির দশক পর্যন্ত মিডিয়ার চরিত্রে প্রতিবাদ ছিল। তখন শুধু বাংলাদেশেই নয়, অনেক দেশেই সামরিক শাসক ছিল। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ ছিল। “সুশীল সমাজ” এই টার্ম এই সহস্রাব্দের আবিষ্কার। যখন থেকে বিশ্বায়ন কথাটি চালু হলো তখন থেকে অনেক নতুন কিছু চলে এসেছে।  আশির দশকের সংবাদমাধ্যমের যে প্রতিবাদী ভূমিকা ছিল সেটা এখন একেবারই নেই। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখা গেল। অর্থনৈতিক পরিবর্তনের এই ধারাকে নব্বইয়ের দশকে শেষে এসে বলা হলো “বিশ্বায়ন”।’

তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন যখন হলো, মিডিয়ার বিশ্বায়নও তখন হয়ে গেছে। মিডিয়া তখন পুরোটা বেসরকারি খাতে চলে গেছে। বিশ্ব বাণিজ্যের ১৬৯টি সংস্থা তাদের তথ্য প্রবাহকে এমন অবাধ করে দিল, যে তারা বিশ্বের যেকোনও জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফেসবুককে আমি বলবো বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যই করা হয়েছে। তথ্য নিয়ন্ত্রণ করছে করপোরেট পুঁজি, বড় বড় সংস্থার হাতে মিডিয়া। তথ্য তো এখন রাষ্ট্রের হাতে নেই আসলে, তথ্য এখন বাণিজ্য সংস্থার হাতে। তথ্য বেচাকেনার বড় একটা মুনাফা হচ্ছে এখানে। ফেসবুক যদি মুনাফা না করতে পারে তাহলে কি তারা এমনি বিনামূল্যে দিচ্ছে? এখানে এসব গুজব ছড়াবে, ফেইক নিউজ আসবে। এগুলো আসার জন্যই এটা করা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।’    

 

/এসও/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী