X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘নির্বাচন কমিশন বিবেকহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৯ নভেম্বর ২০২০, ১৭:২৯আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২০, ১৮:০৯

সুজনের ভার্চুয়াল গোল টেবিল বৈঠক

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোল টেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন— সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্তমান কমিশনের সব ক্ষমতা থাকলেও তারা নিরপেক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি বিবেক শূন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যে কারণে নির্বাচন নিয়ে জনগণের আগ্রহ শূন্যের কোটায় গিয়ে ঠেকেছে।

রবিবার (২৯ নভেম্বর) সুজনের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন’ শীর্ষক একটি অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন—  যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, সুজনের নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সুজনের নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, ড. তোফায়েল আহমেদ, বিচারপতি এম এ মতিন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল,  ফটোসাংবাদিক শহীদুল আলম, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার,  সহ-সভাপতি ড. হামিদা হোসেন, জাতীয় কমিটির সদস্য সি আর আবরার, একরাম হোসেন, সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দর খান, সফিউদ্দিন আহমেদ, আকবর হোসেন প্রমুখ।   

ড. বদিউল আলম মজুমদার তার প্রবন্ধে বলেন, ‘আমাদের সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে কয়েকটি সুস্পষ্ট দায়িত্ব দিয়েছে। দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে।  তবে দুর্ভাগ্যবশত সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে বহু অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও আমাদের নির্বাচন কমিশন ছিল সম্পূর্ণ নির্বিকার। অনেকগুলো গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে তারা তদন্ত করেছে বলেও আমরা শুনিনি। অবশ্য এটা সত্য যে, সরকার ও রাজনৈতিক দল, বিশেষত ক্ষমতাসীন দল না চাইলে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও  সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রায় অসম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নূরুল হুদা কমিশনের সব ক্ষমতা থাকলেও তারা নিরপেক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন  পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের অসততা ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ নাগরিকের ভোটাধিকার হরণ করেছে। এর মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের ব্যাপক আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মধ্যে ধারণা জন্মেছে যে, তারা ভোট দিতে চাইলেও ভোট দিতে পারবে না। আর ভোট দিলেও তারা ‘ফলাফল’ প্রভাবিত করতে পারবেন না। যারা জয়ী হওয়ার তারাই জয়ী হবেন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফল বহুলাংশে বানোয়াট। আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে, যা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই অকার্যকর করে ফেলেছে। এছাড়া, আমাদের রাজনীতি বহুলাংশে বিরোধী দল শূন্য হয়ে পড়েছে, যার দায় অবশ্য আমাদের প্রধান বিরোধী দলও এড়াতে পারে না। ফলে বহু নাগরিকের মধ্যে আজ চরম অসন্তোষ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।’’  

শাহদীন মালিক বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রকৃত ধারণার সঙ্গে আমাদের চারদিকে যে অবস্থা দেখছি, তার কোনও মিল নেই। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। গণতন্ত্র, নির্বাচন এসব বিষয় ক্রমাগত কল্পনার বিষয়ে পরিণত হচ্ছে।’

আলী রিয়াজ বলেন, ‘সংবিধান প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত করেছে। এর মাধ্যমে এক ধরনের সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নির্বাহী বিভাগের এই যে ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, এটাকে আলোচনা না করে শুধুমাত্র কমিশন নিয়ে আলোচনা করলে আর হবে না।’

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের শক্তি হলো আদালত। কিন্তু আমরা আদালতকে কমিশনের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে দেখিনি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনাররা একটা আইনের মাধ্যমে নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। তাই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন প্রণয়ন করে যাতে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, সেদিকে আমাদের জোর দিতে হবে।’ 

আবু সাঈদ খান বলেন, ‘এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতায়ন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ এবং নির্বাচনি আইন পরিবর্তন করে এলাকাভিত্তিক নির্বাচনি ব্যবস্থার পরিবর্তে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন ক, একটা মিশ্র নির্বাচনি ব্যবস্থাতে যাওয়া।’

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচনের প্রধান অংশীদার হলো সরকার। কমিশন গঠনের জন্য যেসব সার্চ কমিটি গঠন করা হয়, এগুলোতে সরকার যাকে চায়, সেরকম লোকই বেরিয়ে আসে। সরকার না চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা খুবই দুরূহ।’

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘নির্বাচন, গণতন্ত্র এসব এখন কবি গান, ঘেঁটু গানের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যেখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র নেই, সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা অর্থহীন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি বিবেক শূন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাদের বিবেক শূন্যতার কারণে নির্বাচন নিয়ে জনগণের আগ্রহ শূন্যের কোটায় গিয়ে ঠেকেছে।’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জানতাম, সামরিক শাসকরা বিরাজনীতিকরণ করে। একটা বেসামরিক সরকার যে এভাবে বিরাজনীতিকরণ করতে পারে, এখন আমরা তাও দেখতে পাচ্ছি। আমি সবাইকে বলবো, সামনে স্থানীয় সরকারের যে নির্বাচনগুলো আছে, সেগুলোতে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘কমিশন, প্রশাসন দলীয় অঙ্গ সংঠনের পরিণত হয়েছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারা আবার ভালো মতো কাজ দায়িত্ব পালন করেছে। আমাদেরকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের কথা জোরে সোরে বলতে হবে।’

এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা অনেক কথা বলছি, কিন্তু যারা শুনার তারা শুনছেন না, বা শুনলেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাই একটা ব্যাপক গণআন্দোলন সৃষ্টি করা দরকার। তাহলে হয়তো কিছু হতে পারে। এজন্য আমাদেরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।’

 

/ইএইচএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!