X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে সোনারগাঁওয়ের ভরাট করা ১৮৬৮ বিঘা জমি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৪৮আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৪৮

সুপ্রিম কোর্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ছয়টি মৌজায় কৃষিজমি, নিচুভূমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ বিশেষের এক হাজার ৮৬৮ বিঘা জমিতে সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি ও সোনারগাঁও ইকোনোমিক জোনের মাটি ভরাটকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বুধবার (২ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ছয় মাসের মধ্যে জমিগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে।

আদালত তার রায়ে, সোনারগাঁও উপজেলার ছয়টি মৌজায় ভরাটকৃত মাটি অপসারণ করে ছয় মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রায় বাস্তবায়নের স্বার্থে মামলাটি চলমান মামলা (কন্টিনিউ মেন্ডামাস) হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও আদালত উল্লেখ করেন।

এছাড়াও এ রায়ে আদালত পরিবেশ অধিদফতর এবং স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তদন্ত করে অভিযুক্ত মো. নূর আলীর মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠানসহ অন্য যে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উল্লেখিত মৌজাগুলোর কৃষি, নদীর জলাভূমি ও নিচু ভূমিতে ভরাটকৃত মাটি উঠিয়ে নিয়ে তা ছয় মাসের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ধার্য করে তা মাটি ভরাটকারীদের কাছ থেকে প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালতের এই রায়ের ফলে সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি ও সোনারগাঁও ইকোনমিক জোনের নামে গৃহীত সব কার্যক্রম অবৈধ বিবেচিত হবে বলে জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা।

আদালতে রিট আবেদনকারী পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা’র পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম. কামাল, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান ও সাঈদ আহমেদ কবীর। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েশ আল হারুনী। অন্যান্য পক্ষে মামলার শুনানিতে ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, আবু তালেব প্রমুখ।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবন্ধ এবং রতনপুর মৌজার কৃষিজমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ বিশেষে জোর করে মাটি ভরাট করে ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের বাস্তবায়নাধীন সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি প্রকল্প। পরে ওই প্রকল্পের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণার জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) হাইকোর্টে ২০১৪ সালে একটি রিট দায়ের করে।

ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২ মার্চ হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং ইউনিক প্রোপাটিজকে প্রকল্প এলাকার মাটি/বালি ভরাট কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নিষেধাজ্ঞা দেন। সেই সঙ্গে ইতোমধ্যে ভরাটকৃত ভূমি হতে মাটি/বালি অপসারণের নির্দেশও দেন হাইকোর্ট।

তবে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করে ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সহযোগী কোম্পানি ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড উল্লেখিত ছয়টি মৌজায় তথাকথিত সোনারগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য মাটি ভরাটের অনুমতি পেয়েছে দাবি করে এবং সে প্রেক্ষিতে আদালতের ২ মার্চের আদেশ অকার্যকর ঘোষণার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করে।

শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর আগের আদেশ সংশোধন করে তথাকথিত সোনারগাঁও ইকোনমিক জোনের জন্য মাটি ভরাট কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ দেন আদালত। পরে সে আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে বেলা আপিল বিভাগে আবেদন জানায়। এরপর একই বছরের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের ২৫ অক্টোবরের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন। ফলে মাটি ভরাটের কার্যক্রম ও অপসারণের বিষয়ে ২০১৪ সালের ২ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আদেশ বহাল থাকে।

কিন্তু আপিল বিভাগের আদেশ ভঙ্গ করে মো. নূর আলী তথাকথিত সোনারগাঁও ইকোনমিক জোনের নামে মাটি ভরাট অব্যাহত রাখলে বেলা ২০১৭ সালে আদালত অবমাননার দুটি মামলা দায়ের করে।

এরপর অব্যাহত মাটি ভরাটের প্রমাণস্বরূপ পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে বেলা। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে স্থানীয় জেলা প্রশাসক ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এবং আপিল বিভাগের নির্দেশে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে আদালতের আদেশ প্রতিপালনের বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

পরে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এক আদেশে বেলা’র রিট মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে হাইকোর্টে পাঠান। এরপর মামলাটির রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করলেন হাইকোর্ট।

 

 

/বিআই/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা