X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

আসামিপক্ষের হয়ে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে ইমেজ সংকটে প্রসিকিউশন

উদিসা ইসলাম
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০০:৪৯আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০০:৫৬

গণমাধ্যমের মুখোমুখি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী আসামিপক্ষের হয়ে সরাসরি ট্রাইব্যুনালকে ঘুষ সাধার অভিযোগ উঠেছে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে। এ ধরনের অভিযোগ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে বিধায় দ্রুত শাস্তির দাবি অ্যাক্টিভিস্টদের। আর অন্যান্য প্রসিকিউটররা মনে করছেন- মোহাম্মদ আলীর এই আচরণের ফলে পুরো প্রসিকিউশন টিম ইমেজ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি হঠাৎই সব ধরনের মামলা থেকে প্রত্যাহার করা হয় এই প্রসিকিউটরকে। সেসময় তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ জানতে চাইলে প্রসিকিউটররা নিজেদের মধ্যে আলাপ করলেও কেউ গণমাধ্যমে উল্লেখ করতে রাজি হননি। গতকাল রবিবার প্রসিকিউশন অফিস থেকে আইনমন্ত্রীর কাছে যথাযথ ব্যবস্থা চেয়ে পাঠানোর চিঠির পর পরই বিষয়টি খোলাসা হয়ে যায়। মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ- সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ময়মনসিংহের সংসদ সদস্য হান্নানের জামিনের জন্য তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে অনুরোধ করতে হাজির হয়েছিলেন। এর পরপরই চিফ প্রসিকিউটরকে ডেকে ট্রাইব্যুনাল থেকে জানানো হয়- মোহাম্মদ আলী যেন কোনওভাবেই আদালতের সামনে না আসে।
প্রসিকিউশন অফিস সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের বিচারাধীন একটি মামলার একজন আসামির পক্ষে জামিন প্রাপ্তির বিষয়ে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আনা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে তিনি অভিযোগ উল্লেখ করে বলেন, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি ভঙ্গ এবং পেশাগত অসদাচরণের গুরুতর অপরাধের অভিযোগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই জরুরি।

মোহাম্মদ আলীকে ৪ তারিখে দেওয়া অব্যাহতিপত্র থেকেই অভিযোগ যে গুরুতর তা আন্দাজ করা যায়। অব্যাহতিপত্রে লেখা ছিল- ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকে আলবদর শামসুল হক গং (রেজি নং-৩৭, তাং- ১২/১০/২০১৪), শামসুল হোসেন তরফদার এবং অন্যান্য মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টতা থেকে প্রত্যাহার করা হলো। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরিচালনাধীন কোনও মামলা পরিচালনার কাজে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ আদেশটি জনস্বার্থে দেওয়া হলো।’

কেবল এইবারই না, এর আগেও একাধিকবার তিনি কলিগদের সঙ্গে অসদাচরণ করার পাশাপাশি নৈতিক নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বিচারিক আদালতে গিয়ে বিরোধীদলের পক্ষে জামিনের মামলা পরিচালনার কাজ করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তার সহকর্মীরা বলছেন, উনি অনেক ধরনের আচরণ করেছেন যেগুলো আমরা বৃহত্তর স্বার্থে নজরে নেইনি। ফলে এখন আমাদের সবার ইমেজকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেলে গেলো।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীকে দেওয়া চিফ প্রসিকিউটের আদেশের কপি

রানা দাশগুপ্ত বলেন, এত বড় ধৃষ্টতা যিনিই দেখিয়ে থাকুন না কেন, কোনওভাবেই তার ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। ঘটনা আরও বেশি বড় হওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। অভিযোগ যেহেতু চিহ্নিত করা গেছে সেক্ষেত্রে এতে বেশি সময় লাগার কোনওই কারণ নেই।

এর আগে একাধিকবার প্রসিকিউশন অফিসে বিভিন্নরকম অসদাচরণের উদাহরণ দিতে গিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রসিকিউটর বলেন, আমরা জানি না তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে এখনই সহকর্মীর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে চাই না। তবে তিনি অফিসের কোনও নিয়মই মানেননি। এটা বারবার নজরে এনে তাকে মৌখিকভাবে সাবধান করে দেওয়া হয়। কিন্তু দলীয় বিভিন্ন পরিচয় ও ক্ষমতার কথা বলে তিনি কাউকেই পাত্তা দিতেন না।

এর আগে ২০১৪ সালে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ নিজের কম্পিউটার থেকে তথ্য চুরির সন্দেহে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। এরপর ওই ঘটনার ‘সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের জন্য’ মোহাম্মদ আলীও পাল্টা জিডি করেন। তারা দুজনই দীর্ঘদিন চেম্বার হিসেবে একই রুম শেয়ার করেন। তিনি সেসময় গণমাধ্যমে তুরিন আফরোজ সম্পর্কে বেশকিছু কটু মন্তব্যও করেছেন। এমনকি এবারের ঘুষ কেলেঙ্কারির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমন কোনও অভিযোগ আমি নিজের কানে কোনওদিন শুনিনি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এভরিথিং ফলস, নট ট্রু, মিথ্যা মিথ্যা।’

এ বিষয়ে তুরিন আফরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তাকে (মোহাম্মদ আলী) অব্যাহতি দেওযা হয়েছে সেটা আমরা অফিসিয়ালি জেনেছি, তবে এখনই মন্তব্য করতে চাই না।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসিকিউটররা সবাই এক ধরনের চাপ অনুভব করছেন বলে জানান। কারণ এতদিনে যুদ্ধাপরাধ বিচারের যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পথ ধরে তারা এগিয়ে আসছিলেন, এই এক ব্যক্তির অপকর্মে তা ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে শঙ্কা তাদের।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, কেবল ট্রাইব্যুনাল থেকে না, এ ধরনের নৈতিক স্খলন যাদের ঘটতে পারে তাদের আইন পেশায় থাকারই কোনও অধিকার নেই। আমরা চাই দ্রুতই তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাকে তার আইন পেশায় থাকার সনদ ফেরত দিতে বলা হোক। একজন বিচারককে ঘুষ অফার করতে পারেন যিনি তার আর এই পেশায় থাকার কোনও অধিকার নেই।

এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্রাটেজি ফোরামের সদস্য ওমর শেহাব বলেন, প্রথম দিন থেকেই আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনওরকম পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই চমৎকারভাবে বিচার কাজ চালিয়ে আসছে। বড় বড় পত্রিকায় বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য শত শত উপ-সম্পাদকীয় ছাপানোর পরও বাংলা ট্রিবিউনের সাম্প্রতিক জরিপ থেকে বোঝা গেছে- এই আদালতের ওপর মানুষের আস্থা বাড়ছে বৈ কমছে না। আশা করি এবারও এরকম একটি বিতর্ক বরাবরের মতোই শক্ত হাতে সামলানো সম্ভব হবে এবং জনসংযোগের মাধ্যমে করদাতাদের একটি পরিষ্কার ধারণা দেবে যে আসলে কী হয়েছিল।

/এএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পোশাকশ্রমিককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
পোশাকশ্রমিককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া