X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

৪৫ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ সমাধিক্ষেত্রের

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
২৫ মার্চ ২০১৬, ১৩:০৩আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৬, ১৩:০৬

শহীদ সমাধিক্ষেত্র , কুড়িগ্রাম

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ সমাধিক্ষেত্রের। ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল হানাদার বাহিনী কুড়িগ্রাম শহরে ঢুকে যাদের নৃশংসভাবে হত্যা করে সেই শহীদদের সমাধি আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে সমাধিক্ষেত্রটি।

চারপাশে ধান খেতের মাঝখানে জঙ্গলে ঢাকা চারটি সমাধি। চারজন শহীদের নাম সম্বলিত প্রায় বিবর্ণ একটি সাইনবোর্ড নীরব সাক্ষী দিচ্ছে শহীদদের সমাধির। তাও আবার কাছে গিয়ে না দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটি সমাধিস্থল না ঝোপ-জঙ্গল।

জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর গোটা দেশের মতো উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে কুড়িগ্রামবাসী। ৩০ মার্চ রংপুরের তৎকালীন ইপিআর উইং-এর সহকারী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজেস কুড়িগ্রামে আসেন। তার নির্দেশেই রংপুরের ইপিআর উইং-এর অধীনস্থ অধিনায়ক নায়েক সুবেদার বোরহান উদ্দিন তাদের সহযোদ্ধাদের নিয়ে কুড়িগ্রামে আসেন এবং অবস্থান নেন।

৩১ মার্চ কুড়িগ্রামে স্থানীয় পুলিশ, আনসার, ছাত্র-জনতা এবং ইপিআরদের নিয়ে একটি সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তোলা হয়।

সমাধিক্ষেত্র

১ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ ঠেকাতে তিস্তা ব্রিজের পূর্ব পাড়ে মুক্তিযোদ্ধারা একটি শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলেন। ৩ এপ্রিল সেখান থেকেই হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তিস্তা নদীর কাউনিয়া অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে। পাকিস্তানি বাহিনী তিস্তা ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ শুরু করে। ৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা লালমনিরহাট দখল করলে মুক্তিযোদ্ধারা ৫ এপ্রিল কুড়িগ্রামে এসে জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলেন।

পাকিস্তানি বাহিনী সাঁজোয়া বহর নিয়ে লালমনিরহাট এবং রংপুর থেকে কুড়িগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। অনেকটা বিনা প্রতিরোধেই বিকালে পাকিস্তানি বাহিনী কুড়িগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। তারা বর্তমান সার্কিট হাউজের সামনে এসে পজিশন নিয়ে তৎকালীন কুড়িগ্রাম উপ-কারাগারে অতর্কিতভাবে হানা দেয়। সেসময় উপ-কারাগারে কর্তব্যরত এক নন বেঙ্গলি জমাদারের সহায়তায় উপকারাগারের ইনচার্জ শেখ হেদায়েত উল্লাহ ও পাঁচজন কারারক্ষীকে পাকিস্তানি বাহিনী ডেকে নেয় এবং বর্তমান সার্কিট হাউসের সামনের রাস্তার পূর্ব প্রান্তে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। শহীদ হন কারারক্ষী লাল মোহাম্মদ, আনসার আলী, সাজ্জাদ হোসেন এবং জহির উদ্দিন।

জেল ব্যারাকের পেছনে মূল কারা প্রাচীরের ঠিক পূর্ব দিকে একটি বড় গর্ত করে কারা রক্ষীদের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থাতেই চার শহীদদের দাফন করা হয়। আরেক শহীদ জেল-ইনচার্জ শেখ হেদায়েত উল্লাহকে সমাহিত করা হয় কারাগারের পশ্চিম প্রান্তে সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আব্দুস ছালামের বাড়ির উঠানে।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও সলিডারিটি কুড়িগ্রামের নির্বাহী হারুনুর রশিদ লাল বলেন, ‘আমার চোখের সামনে কারারক্ষীদের হত্যা করা হয়। সেদিন ওই মুহূর্তে আমাদের হাতের কাছে অস্ত্র ছিল না। আমাদের অস্ত্র সে সময় একটু দূরে রাখা ছিল। তা না হলে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতাম। পরে সহযোদ্ধাদের নিয়ে আমি তাদের দাফনের ব্যবস্থা করি।’

সমাধি

আজ পর্যন্ত শহীদদের সমাধিস্থল কেন যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দুঃখজনক। তবে শেষ পর্যন্ত শহীদদের যে তথ্য জেলা কারাগারের পক্ষ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে সে জন্য তিনি বর্তমান জেল সুপার এবং জেলারকে ধন্যবাদ জানান।

প্রতিদিন শ’ শ’ দর্শনার্থী কারাগারে আসেন স্বজনদের দেখতে। কিন্তু সামান্য দূরে ধান ক্ষেতের মাঝে যে শহীদদের সমাধি তা হয়তো কেউ জানেন না। মনে কৌতুহল জাগানোর মত কোনও স্মৃতি চিহ্নও নেই সেখানে।

কারাগারের বর্তমান জেল সুপার উমর ফারুক এবং জেলার মো. লুৎফর রহমান যৌথভাবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ কারারক্ষীদের নিয়ে একটি তথ্য কণিকা তৈরি করলেও তাদের সমাধি সংরক্ষণ কিংবা কোনও স্মৃতিফলক আজ পর্যন্ত নির্মিত হয়নি।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সমাধিস্থলটি চিহ্নিত করতে কারা কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করেছি। তবে সমাধিস্থলটি কারাকর্তৃপক্ষের আওতাধীন হওয়ায় সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারের জেল সুপার উমর ফারুক জানান, শহীদদের এই সমাধি সংরক্ষণ এবং স্মৃতি ফলক নির্মাণ সম্বলিত একটি প্রাক্কলন আমার কারাগার হতে রংপুর ডিআইজি কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তা ফেরত পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

/এসটি/

সম্পর্কিত
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস পালন করলো সিএজি কার্যালয়
অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ
অ্যালবার্ট এক্কা: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের এক অকুতোভয় শহীদ
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!