X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরখানে শিশু হত্যার অভিযোগে মাকেই আসামি করে মামলা

আমানুর রহমান রনি
১৯ এপ্রিল ২০১৬, ২৩:২১আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৬, ২৩:৩৬


উত্তরখানে শিশু হত্যা উত্তরখানে দাম্পত্য কলহের জের ধরে দেড় বছরের শিশু নেহাল সাদিক খুন হওয়ার ঘটনায় মাকে আসামি করে উত্তরাখান থানায় মামলা করেছে ওই শিশুর বাবা।
মঙ্গলবার দুপুরের পর এই মামলা দায়ের করা হয়। উত্তরখান থানার উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার রাতে উত্তরখানের ৮৫৯, মাস্টারপাড়া  সোসাইটির বাসার চতুর্থ তলায় ওই শিশুটি খুন হয়। পুলিশের দাবি, শিশুটিকে তার মা হত্যা করতে পারে। শিশুটিকে হত্যার পর মা ফাহমীদা মীর মুক্তি নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই দম্পতির দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। তারই জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলেই তারা ধারণা করছেন।
এসআই বলেন, শিশুটির বাবা সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে মা ফাহমীদা মীর মুক্তিকে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মা পুলিশ পাহারায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অপরদিকে শিশুটির ময়নাতদন্তে শেষে তার বড় চাচা সৈয়দ কবীরুলের কাছে দুপুরে লাশ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
শিশুটির চাচা সৈয়দ কবীরুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার ছোটভাই সাজ্জাদ হোসেন উত্তরার নর্থ টাওয়ারের লেডিস কর্নার নামে একটি টেইলার্সের দোকানে কাজ করেন। সেখানে সেলোয়ার কামিজ তৈরি করতে গিয়ে ফাহমীদার সঙ্গে সাজ্জাদের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। এরপর তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফাহমীদার এর পূর্বে একটি সংসার ছিল। তার পূর্বের স্বামীর নাম শাহীন মাহমুদ। তারা উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে থাকতেন। ওই সংসারে সামিয়া সুমাইয়া নামে ১১ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তবে ওই স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদের পর তিনি সাজ্জাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সাজ্জাদেরও এটি দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর তারা মাস্টারপাড়ার ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন। ২০১৪ সালের শেষের দিকে তাদের পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।’

তাদের মধ্যে প্রায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো বলে জানিয়েছেন কবীরুল। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। হয়তো পারিবারিক কলহের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

এদিকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাহমীদা বলেন, ‘সোমবার রাতে কে যেন তার দরজা খটখট করে, এরপর কি হয়েছে আমি আর জানি না।’ তবে পুলিশ জানিয়েছে, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাজ্জাদ বাসায় গিয়ে তার ছেলের রক্তাক্ত নীথর দেহ খাটের ওপর পরে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন। এরপর বাড়িওয়াল ওয়াহিদুজ্জামানসহ অন্যান্য প্রতিবেশীরা ওই বাসায় গিয়ে শিশুটিকে খাটের ওপর পরে থাকতে দেখে, মা তার পাশেই শোয়া ছিল। এরপর বাড়িওয়ালা পুলিশকে খবর দিলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ গিয়ে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে।’

এসআই বলেন, ‘আমরা গিয়েও শিশুটির লাশ খাটের ওপর পরে থাকতে দেখি, তার মাও ছিল খাটের ওপর। শিশুটির পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে আমরা কোনও অস্ত্র উদ্ধার করিনি।’

এসআই মোস্তাফিজুর বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে মা আহত থাকায় তাকে বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। তিনি পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শিশুটির মায়ের গলায় ক্ষতের দাগ রয়েছে। সুস্থ হলে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

উত্তরখান থানার কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘সোমবার রাতে আমরা শিশুটির রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করি। শিশুটির বাবা অফিস থেকে ফিরে রক্তাক্ত শিশুটিকে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন।’

তিনি জানান, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি যে, স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য কলহের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। শিশুটির মা ফাহমিদা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিশুটিকে হত্যা করে তিনি নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

শিশুটির মা ফাহমিদা মীর মুক্তি, বাবা সাজ্জাদ হোসেন ও শিশুটি ওই বাসায় থাকতেন। মাফমীদা বলেন, ‘সাজ্জাদ সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যায়, রাতে ফিরে তিনি সারাদিন বাসায় একাই থাকেন। আমি শুধু দরজায় খটখট শব্দ পেয়েছি। এরপর কি ঘটেছে আমি কিছুই জানি না।’

ফাহমীদাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর। তার পরিবার ঢাকায় থাকেন। তার বাবা মৃত মীর সাদাউল রহমান। মা খালেদা রহমান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ফাহমীদা ছোট। বড়ভাই ফায়জুল বারী মীর হাজারীবাগের ট্যানারি মোড়ের একটি বাসায় তার মাকে নিয়ে থাকেন। ছোটভাই মীর গাউসুল বারী ইতালী প্রবাসী। তবে সাজ্জাদের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর তাদের সঙ্গে আর ফাহমীদার যোগাযোগ হতো না।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের সহকারী রেজিস্টার ডা. আরেফিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফাহমীদা বিপদমুক্ত রয়েছেন। তার মানসিক একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা আগামীকাল তাকে মানসিক চিকিৎসার জন্য মানসিক রোগ চিকিৎসা বিভাগে স্থানন্তর করব।’

/এআরআর /এএইচ/

 

আরও খবর পড়ুন-

রাস্তার ধুলো নিয়ে সমালোচনায় খালেদা জিয়া ও বিএনপিনেতারা

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা