X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

এক দফা দাবিতে বিরোধী দলগুলোর নাগরিক মঞ্চ গড়ে তোলার প্রস্তুতি

সালমান তারেক শাকিল
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:০০আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:১০

দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই একের পর এক ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। এই প্রচেষ্টা এবার নতুন রূপে সামনে আসছে। ‘সরকার পতনের লক্ষ্যে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার’ এক দফা দাবিতে এবারের ঐক্যের রূপটি হবে নাগরিক সমাবেশের আদলে। উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রক্রিয়াটি ‘গণতন্ত্র মঞ্চ বা নাগরিক মঞ্চ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে অন্তত আটটি রাজনৈতিক সংগঠন এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত পাঁচ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর সাত-আটটি রাজনৈতিক দল ধারাবাহিকভাবে একটি ঐক্য প্রক্রিয়া গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন সময় আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক—উভয় প্রক্রিয়ায় উদ্যোগটিকে প্রকাশ্যে আনার পরিকল্পনা প্রায় শেষ পর্যায়ে।

উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত প্রধান পাঁচটি রাজনৈতিক দল হচ্ছে নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। সঙ্গে আছে আরও তিনটি রাজনৈতিক দল—গণফোরাম, জেএসডি ও গণ অধিকার পরিষদ।

প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতারা এ প্রতিবেদককে জানান, এ সপ্তাহে উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত একটি রাজনৈতিক অফিসে আবার বৈঠক করবেন তারা। এই বৈঠকে উদ্যোগের নামটি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবেন তারা। ইতোমধ্যে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ ও ‘নাগরিক মঞ্চ’ নামে দুটো প্রস্তাব আলোচনায় এসেছে।

বিএনপির বাইরে বিরোধী দলগুলোর এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতারা দাবি করেন, বিএনপি ইতোমধ্যে রাজনৈতিকভাবে মতবিনিময়ের যে উদ্যোগের কথা জানিয়েছে তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। একইসঙ্গে সরকারের পতন ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দলটির সুনির্দিষ্ট কোনও তৎপরতাও সামনে আসছে না। এ কারণে গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিকে সামনে রেখে নাগরিকদের সম্মিলন ঘটানোর লক্ষ্যেই নতুন মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে চায় উদ্যোক্তারা।

এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে যেভাবে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ফুঁসে উঠছে; সরকারের দুর্নীতি, অপশাসন ফাঁক-ফোকর যেভাবে উন্মোচিত হচ্ছে, তাতে গণআন্দোলন আসন্ন। সেই বিবেচনা থেকে আমরা গুণগত পরিবর্তনের উদ্দেশে গণতান্ত্রিক সমাজের নির্মাণের জন্য ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আগের ঐক্যগুলো বায়বীয় অবস্থায় রয়েছে। আমরা মনে করছি, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একাই চলতে চায়। আমরা সুস্পষ্টভাবে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য কাজ করবো।’

জানতে চাইলে প্রক্রিয়ার অন্যতম উদ্যোক্তা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই একটি রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরির চেষ্টা করছি। যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিও অংশ নিতে পারবেন। যারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের চেষ্টা করবে। ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য বৃহত্তর আন্দোলনের বিকল্প নেই। ফলে যার-যার অবস্থান থেকে যৌথভাবে, যুগপৎভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে; সেই লক্ষ্যে আমরা সচেষ্ট আছি।’

জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য নতুন এই নাগরিক আয়োজনে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রতিশ্রুতি থাকতে পারে।  ‘ভঙ্গুর অর্থনীতি’, দারিদ্রতা, বেকারত্ব, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিচার ব্যবস্থাসহ নানা বিষয়ে গুণগত পরিবর্তনের দিক-নির্দেশনা উপস্থাপন করবে নতুন মঞ্চ।

উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বামজোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলছেন, ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করা ও একে পরাজিত করা কেবল বামদের দায়িত্ব নয়। এক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনেরও দায়িত্ব প্রক্রিয়াটিকে সামনে নেওয়া।

সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা রাজপথে জোটগত ও এককভাবে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি। এর বাইরে অনেক প্রগতিশীল দল, ব্যক্তি আছেন যারা মনে করেন একটি প্ল্যাটফর্মে এসে সক্রিয় হওয়ার। এই প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক জোট হচ্ছে না, এটা নাগরিকদের প্ল্যাটফরম হিসেবে কাজ করবে।’

ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু্ উল্লেখ করেন, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য এক দফার দাবিতে সাত-আটটি রাজনৈতিক সংগঠন মিলে একটি নাগরিক মঞ্চ গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত আছে। শিগগিরই এর বাস্তবায়ন শুরু হবে।

তবে সবমিলিয়ে সাত-আটটি দল হবে নাকি পাঁচটি দল মিলে সমন্বয় করবে, তা এখনও অনিশ্চিত বলে মনে করেন কোনও-কোনও নেতা। তারা জানান, ইতোমধ্যে রাজনৈতিক মহলে একটি পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে কোনও-কোনও সংগঠনের নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্ভাবনা থাকায় চূড়ান্তভাবে কোন সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে নাগরিক মঞ্চ হবে, এ বিষয়ে আগামী বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।

কোনও-কোনও দলের প্রধান মনে করেন, প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মত বিনিময়ের কথা জানিয়েছে, সেক্ষেত্রে তাদের মনোভাব আরও পরিচ্ছন্ন হওয়ার পরই প্রক্রিয়াটিকে সামনে আনা যেতে পারে।

উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, উদ্যোক্তাদের কেউ-কেউ চলতি ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ মঞ্চ প্রকাশ্যে আনার প্রস্তাব রেখেছেন। যদিও তা প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। সেক্ষেত্রে ঠিক ফেব্রুয়ারিতেই মঞ্চ আত্মপ্রকাশ করবে—এমনটি এখনই বলা যাচ্ছে না।

গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, তারা সরকারবিরোধী যেকোনও মঞ্চের উদ্যোগের সঙ্গে আন্তরিক। ডাকা হলে তার সংগঠন যোগ দেবে।

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘মঞ্চের খবরের কথা এখনও শুনিনি। আমাদের দল এখনও এসব বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।  একইসঙ্গে বিএনপি একটি শক্তিশালী বড় দল, তারা কী করে, সেটিও দেখতে হবে।’

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না