X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল নিয়ে সংসদে উত্তাপ ছড়াবে ক্ষমতাসীন জোট

এমরান হোসাইন শেখ
০৩ জুলাই ২০১৭, ২৩:১৬আপডেট : ০৩ জুলাই ২০১৭, ২৩:১৮

 

জাতীয় সংসদ (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টে বহাল রাখা নিয়ে বাইরে চুপচাপ থাকলেও সংসদে উত্তাপ ছড়াবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট। আগামী ৯ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য বাজেট অধিবেশনের মুলতবি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্ক হতে পারে আভাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন জোটের সদস্যরা। তবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা অবশ্য আদালতের রায় নিয়ে ‘অহেতুক বিতর্কে’ না জড়ানোর কথা বলছেন।

বিচারপতির অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় বহাল রেখে সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন। এর আগে সুপ্রিম জুড়িশিয়াল কউন্সিলের পরিবর্তে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। পরে ওই সংশোধনীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট হলে দীর্ঘ শুনানির শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে  সরকার পক্ষ আপিল করলে সোমবার হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এই রায় নিয়ে মন্তব্য করতে গেলে তা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়বে। ফলে তাদের আইনের মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে। কিন্তু সংসদে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে সংসদ সদস্যদের আদালত অবমাননার দায় এড়ানোর সুযোগ থাকবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বভৌম সংসদের সদস্য হিসেবে সংসদের সদস্যরাও সার্বভৌম। ফলে সেখানে কোন কিছু নিয়ে কথা হলে তা আদালত অবমাননার মধ্যে পড়বে না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলের সংসদ সদস্যরা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল নিয়ে বাইরে কথা বলে অহেতুক বিতর্কে না জড়িয়ে সংসদে কথা বলার প্রস্তুতি নিয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, সংসদ ও সংসদ সদস্যদের সার্বভৌম বিষয় সংবিধানে ৭৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (১) ‘সংসদের কার্যধারার বৈধতা সম্পর্কে কোনও আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। (৩) সংসদে বা সংসদের কোনও কমিটিতে কোনও কিছু বলা বা ভোটদানের জন্য কোনও সংসদ-সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনও আদালতে কার্যধারা গ্রহণ করা যাবে না।’

প্রসঙ্গত, সোমবার আপিল বিভাগ থেকে রায় ঘোষণার খবর পাওয়ার পরপরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রায়ের বিরুদ্ধে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া না জানাতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। তাই এই রায়ের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না।

রায় ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগের কিছু নেতা বিচার বিভাগের বিরুদ্ধ মুখ খুললেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তাদের কানে পৌঁছানোর পর বক্তব্য প্রধানে কৌশল অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নেন। দুপুরে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়ার আগে তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাব না।’

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোর্ট কী করেছেন না করেছেন, তা কোর্টের ব্যাপার। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে সংসদ থেকে। সংসদে যেহেতু সংশোধনীটি পাস হয়েছে, সেহেতু এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তাদেরই, সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে।’

বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধানে এই বিধানটা ছিল, সেটাকে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে পুনর্বহাল করা হয়েছে। কাজেই এই আমার মতে রায়টি মূল সংবিধানের স্পিরিটের পরিপন্থী।’ তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির ইমপিচমেন্টের ক্ষমতা যদি সংসদের হাতে থাকতে পারে, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলে সমস্যা কী?’ তিনি বলেন, ‘সংসদে পাস হওয়া একটি আইন নিয়ে আদালত যেহেতু রায় দিয়েছেন, সেহেতু এটি নিয়ে সংসদে কথা উঠবে। সংসদ সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, ‘আমি মনে করি না সুপ্রিম কোর্ট ঠিক জাজমেন্ট দিয়েছেন। আমরা এটি নিয়ে সংসদেও কথা বলব।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধানে মূল কাঠামোর আলোকে আমরা এটা তৈরি করেছি। সার্বভৌম সংসদ সদস্যের সিদ্ধান্ত আদালত বাতিল করতে পারেন না। সংসদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমরা বিষয়টি নিয়ে আবারও সংসদে কথা বলব।’

জাতীয় পর্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংসদ হচ্ছে একটি স্বাধীন জায়গা। সংসদের সব ব্যাপারে কথা বলার অধিকার আছে। এই বিষয়েও নিশ্চয়ই কথা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছেন সংবিধানের অভিভাবক। তারা সব দিক বিচার বিশ্লেষণ করে রায় দিয়ে থাকেন। সংবিধানকে সামনে রেখে যেটা করবেন, সে বিষয়ে কথা বলাটা উচিত হবে না।’

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
নিজ বুদ্ধিমত্তায় যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
নিজ বুদ্ধিমত্তায় যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন