X
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৭ মাঘ ১৪৩১

দুর্বলতাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি, সময় মতো ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০১ আগস্ট ২০২৪, ১৮:৩১আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৪, ১৮:৩১

সাম্প্রতিক আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ব্যর্থতার প্রশ্নে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন হবে। সেটার মাধ্যমে সমন্বয় বাড়ানোর চেষ্টা করবো। এ মুহূর্তে আমরা দুর্বলতাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা সম্ভব হচ্ছে না। সময় মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

১৮ জুলাইয়ের আগে এক কর্মসূচিতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি— এটা দলটির সাংগঠনিক ব্যর্থতা কিনা, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেক কিছু আছে— সেখানে মূল্যায়ন হতে পারে, আত্মসমালোচনা হতে পারে। আত্মশুদ্ধির ব্যাপার থাকতে পারে। সমালোচনা করে আত্মশুদ্ধি। সেটা আমাদের দলে আছে। কিন্তু সহিংস কর্মকাণ্ড চলেছে। এখানে তার শেষ, এ মুহূর্তে বলা যায় না। আমাদের প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন হবে। সেটার মাধ্যমে সমন্বয় বাড়ানোর চেষ্টা করবো। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা সতর্ক আছেন। সারা দেশে সতর্ক থাকতে বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে চলমান সহিংসতা দৃশ্যত স্বাভাবিক মনে হলেও এই জঙ্গি গোষ্ঠীর যে নীরবতা এখন, এ নিরবতা তাদের পুনঃআক্রমণের পূর্ব সংকেতও হতে পারে। কাজেই এ মুহূর্তে আমরা দুর্বলতাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সময় মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে কিনা— এমন প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নারকীয় যে তাণ্ডব, এর সঙ্গে জনপ্রিয়তার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরাতো অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াইনি। আমরা নিরস্ত্র, নিরস্ত্রদের ওপর সশস্ত্রদের হামলা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলো নিরস্ত্র, সেখানে সশস্ত্র হামলা হয়েছে। এর সঙ্গে জনপ্রিয়তার কোনও সম্পর্ক নেই।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় ‘হত্যাযজ্ঞ’ তদন্তে বের হয়ে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের সবাইকে ভাবতে শিখিয়েছে। আন্দোলন দেখতে গিয়ে শিশু মারা গেছে গুলি খেয়ে। গুলিটা কোথায়? মাথায়। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ শিশু। গুলিটা কোথায়? মাথায়। মিছিল দেখতে গিয়ে শিশু গুলিবিদ্ধ। গুলিটা কোথায় লেগেছে? মাথায়। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি তদন্ত করা অবস্থায় আমরা তাদের প্রভাবিত করতে পারি না। তবে এ রহস্য উন্মোচন করা দরকার।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের কাছে যতটা খবর আছে। আমরা মনে করি, আন্দোলনকারীদের মিছিলে জঙ্গি গোষ্ঠী অনুপ্রবেশ করে খুব কাছ থেকে অনেককে গুলি করে। সেখানে হতাহতের ব্যাপারটা আমাদের ভাবতে হবে। জঙ্গিরা ছদ্মবেশে আন্দোলনে ঢুকে পড়ে কাছে থেকে গুলি করেছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। আমাদের প্রধান শক্তি দেশের জনগণ। কোনও প্রাণহানি আমাদের কাম্য নয়।’

গুলির নির্দেশ নিয়ে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে

দেখামাত্র গুলির নির্দেশের বিষয়ে ‘ভুল বার্তা’ দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোনও আন্দোলনকারীর ওপর গুলি চালানোর নির্দেশনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কখনও দেওয়া হয়নি। সেনাবাহিনী নিয়োগ, কারফিউ জারি, এরপর তারা কোথাও একটা গুলি ছুড়েছে— সে ধরনের খবর আমাদের জানা নেই। তারপরও আমরা বলবো, তদন্ত হচ্ছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সত্য বেরিয়ে আসবে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তদন্ত হবে, চিহ্নিত করা হবে হত্যাকারীদের।’

তিনি বলেন, ‘দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা তাদের অনুরোধ করবো— নিরাপরাধ কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বেশিরভাগ জায়গায় এটা বজায় রাখতে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’

সাংবাদিকদের সম্মান করেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমি অনুরোধ করবো, আমাদের কোনও মন্তব্য, বক্তব্য প্রকাশ করতে গিয়ে স্পেস সংকট থাকলে কোনও কিছু বলার নেই। কিন্তু ঢাকা জেলার (আওয়ামী লীগ) খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে আমি বললাম যে, যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, জঙ্গি গোষ্ঠীর আরেকটা লক্ষ্যস্থল ছিল গণভবন। আমি এটা বলিনি কখনও— শুধু গণভবন রক্ষার জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। এ ধরনের হেডিং আপনারা কেউ দিয়ে থাকলে, সেটা আমার প্রতি একটা অন্যায় বলে মনে করি। এটায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এটা প্রশ্ন করেছে।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য, জননিরাপত্তার জন্য সেনা মোতায়েন ও কারফিউ। গণভবন রক্ষার জন্য কারফিউ জারি করা হয়নি। এমন কথা আমি কখনও বলিনি। সাংবাদিকরা আছেন, অনেকই ছিলেন। কিন্তু কেউ কেউ হেডিং করেছেন। ১৪ দলের বৈঠকেও এ নিয়ে কথা হয়েছে। নেতারা সেটা পরিষ্কার করেছেন। আমি কারও নাম ধরে কিছু বলতে চাই না। আপনাদের বিবেকের ওপর ছেড়ে দিলাম।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ জুলাই রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে কাদের বলেছিলেন— ‘আপনাদের (বিএনপি) নৃশংসতা হানাদার বাহিনীকে হার মানিয়েছে। ক্ষমতার জন্য লন্ডনে পলাতক (তারেক রহমান)... গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে শ্রীলঙ্কা স্টাইলে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি দখল করার টার্গেটও অই রাতে ছিল। যদি কারফিউ জারি না হতো… এই প্ল্যান তাদের ছিল। শ্রীলঙ্কা স্টাইলে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করা, অভ্যুত্থানের ওপর রাইড করে হাওয়া ভবনের যুবরাজ ক্ষমতা দখল করতো। এটাই তো তাদের পরিকল্পনা।’

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ড. ইউনূস অতিসম্প্রতি একটি বিবৃতিতে (সাক্ষাৎকার) বাংলাদেশের ওপর হস্তক্ষেপ করার জন্য দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন। এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধান, আইনানুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে। সেটা আন্তর্জাতিক আইনেরও চরম লঙ্ঘন। তিনি বাংলাদেশে একটা মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তার এ ধরনের বক্তব্য ও কার্যকলাপ সম্পূর্ণ বেআইনি, অসাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির পরিপন্থি। তার এ আহ্বান বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছোট করেছে। দেশকে তিনি খাটো করেছেন। তিনি নোবেল বিজয়ী। বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে হীন তৎপরতায় লিপ্ত থাকা কি তার পক্ষে শোভা পায়? বাইরের দেশের বিশ্লেষকেরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন— দেশের কোনও বিরোধী পক্ষ, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কোনও দেশের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানায় না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত, সাংবিধানিকভাবে বৈধ সরকার। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সরকার পরিবর্তন সম্ভব। আমরা লক্ষ্য করছি, যে সময়ে বাংলাদেশের একাধিক আদালতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ নানান দুর্নীতি ও অপরাধের বিচার চলমান রয়েছে, ঠিক সে সময়ে তিনি বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের জন্য বিশ্বসম্প্রদায়কে অনুরোধ করছেন।’

কাদের বলেন, ‘এ দেশে অসাংবিধানিক পথে নতুন নির্বাচনের জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন। এ থেকে বুঝা যায়, চলমান বিচার থেকে নিজেকে বাঁচানের লক্ষ্যে এ ধরনের ষড়যন্ত্রে তিনি লিপ্ত রয়েছেন। তার এসব বেআইনি, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা করছি এবং প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি।’

বাংলাদেশ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদারত্বের আলোচনা স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার জানামতে এগুলো অনেক গুজব-গুঞ্জনও আছে। এটা বাস্তবে সত্য কিনা, বাস্তবেই দেখতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বিজ্ঞান সম্পাদক আবদুস সবুর, কার্যনির্বাহী সম্পাদক তারানা হালিম প্রমুখ।

/এমআরএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর
ওবায়দুল কাদেরের বোনের মৃত্যু
ওবায়দুল কাদেরের পালিত পুত্র পরিচয় দেওয়া হিরু গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
সমাজবিরোধীরা কোনও ব্যক্তিকে হুমকি দিলে কঠোর ব্যবস্থা
সমাজবিরোধীরা কোনও ব্যক্তিকে হুমকি দিলে কঠোর ব্যবস্থা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় পরিবর্তনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়: নাহিদ ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় পরিবর্তনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়: নাহিদ ইসলাম
আ.লীগ ভারতের সঙ্গে গোপনে চুক্তি করেছে: চরমোনাই পীর
আ.লীগ ভারতের সঙ্গে গোপনে চুক্তি করেছে: চরমোনাই পীর
প্রবাসীর স্ত্রী-মেয়েকে জিম্মি করে চাঁদা দাবি, ছাত্রদল নেতা গ্রেফতার
প্রবাসীর স্ত্রী-মেয়েকে জিম্মি করে চাঁদা দাবি, ছাত্রদল নেতা গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনে আল্টিমেটাম, না করলে শাটডাউন
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনে আল্টিমেটাম, না করলে শাটডাউন
‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
সমীক্ষাতেই ব্যয় ১৩৬ কোটি টাকা‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
ভাঙছে সাইফ-কারিনার সংসার?
ভাঙছে সাইফ-কারিনার সংসার?
৩২ নম্বরে মিলেছে হাড়গোড়, পরীক্ষা হবে ল্যাবে
৩২ নম্বরে মিলেছে হাড়গোড়, পরীক্ষা হবে ল্যাবে
চট্টগ্রামে দুই থানার ওসিকে বদলি
চট্টগ্রামে দুই থানার ওসিকে বদলি