X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১
বিএনপির দুঃখগাথা: দোহার-নবাবগঞ্জ

একটি পোস্টারও নেই খন্দকার আবু আশফাকের

সালমান তারেক শাকিল, দোহার-নবাবগঞ্জ থেকে ফিরে
০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:০০আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২৩:৩৯

বিএনপির দুঃখগাথা ‘বিএনপির অফিস আছে নাকি’—বলেই  মুচকি হাসি দিলেন ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া থানার মোড়ঘেঁষা একজন তরুণ ব্যবসায়ী। হেসে বললেন, ‘এখানে পার্টি অফিস মানে জয়পাড়া খালের ওপারে এবি ব্যাংকের ওপরে আওয়ামী লীগের অফিস, বিএনপির কোনও অফিস নাই।’

বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর (সোমবার, ৩১ আগস্ট) ছয় দিন আগে গত বুধবার (২৬ আগস্ট) সকাল ৭টায় ঢাকা-১ আসনের (দোহার-নবাবগঞ্জ) দোহার উপজেলার জয়পাড়া থানা মোড়ের কাছে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে তরুণ এই ব্যবসায়ীর কথা হচ্ছিল তার দোকানেই। কথা বেশি বাড়াতে রাজি ছিলেন না এই তরুণ, মুখে লাজুক-লাজুক অভিপ্রায়ে অনীহা দেখালেন। তিনি কিছু বলতে না চাইলেও বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্বীকার করলেন, গত আড়াই বছর ধরে দোহারে বিএনপির সক্রিয় অফিস নেই। দলের কার্যক্রম চলছে গোপনে-গোপনে।

নব্বই দশক জুড়ে জয়পাড়া কলেজের অপজিটে এই স্থাপনাটিতেই ছিল দোহার বিএনপির কার্যালয়

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, জয়পাড়া কলেজের বিপরীত দিকে নব্বই দশক ও ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়ান ব্যাংক মোড়ের কাছে এবি ব্যাংক ভবনের দ্বিতীয় তলায় দলীয় কার্যালয় চালিয়েছে উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি। দুটো ভবনেই এখন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু আছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এই ভবনেই দোহার বিএনপির অফিস ছিল

এ বিষয়ে দোহার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএম নজরুল ইসলাম মেছের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের অফিস নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় রাখতে পারি না। দুই বছর ধরে অফিস খুলতে পারি না। আগে ছিল এবি ব্যাংকের ওপরে দোতলায়। এখন সেখানে ফজলুর রহমান ফাউন্ডেশন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অফিস।’

দোহার উপজেলা ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সেন্টু ভুইয়াও স্বীকার করেন, দোহারে দলীয় অফিসের কার্যক্রম নেই। সংগঠনের কার্যক্রমও অনেকটাই স্থিমিত। একই ভাষ্য উঠে আসে উপজেলা সদরের ‘মিনি চাইনিজ অ্যান্ড ফাস্ট ফুড’-এ কর্মরত ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার কণ্ঠেও। তিনি জানান, দোহারে ছাত্রদলের কমিটি নেই, কার্যক্রমও নেই। তাই আপাতত পার্ট টাইম কাজ করছেন তিনি।

দোহারের মতো একই অবস্থা নবাবগঞ্জ উপজেলাতেও। উপজেলা শহরের খন্দকার টাওয়ারে বিএনপির অফিসের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা থাকলেও সেখানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে যেতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। দলের নেতারা অভিযোগ করেন—স্থানীয় থানা-পুলিশের বাধার কারণে অফিসে বসতে পারেন না তারা। বর্তমানে খন্দকার টাওয়ারে একটি ব্যাংকের কার্যালয় ও নিচ তলায় কিছু দোকানপাট রয়েছে। ভবনের নিচেই একজন তরুণ এগিয়ে এসে কথা বললেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি জানান, ভেতরে-ভেতরে বিএনপি করলেও ওপরে আওয়ামী লীগ হিসেবে আছেন তিনি।

নবাবগঞ্জ উপজেলা শহরের খন্দকার টাওয়ারের নিচতলায় একটি দোকানের মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে এই ভবনটি তৈরি করা হয়। তার আগে এখানে একটি ঘর ছিল, সেটাতে বিএনপির কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ছিল। কিন্তু ভবন তৈরি করার পর চার তলায় একটি রুম নাকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তবে কেউ সেখানে আসেন না। কোনও কার্যক্রমও নেই। এক কথায় বলতে গেলে খন্দকার সাহেব নিজেই আসেন না, বা আসতে পারেন না।’

জানতে চাইলে খন্দকার টাওয়ারের পাশের ভবনের নিচ তলায় ‘নবাবগঞ্জ ফার্মেসি' নামের একটি ওষুধ দোকানের মালিক মো. জিসানও তা স্বীকার করেন।’

নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির অফিসটি এই খন্দকার টাওয়ারেই, বন্ধ আছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে

খন্দকার আবু আশফাকের ভাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম খন্দকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে অফিস খোলা যাচ্ছে না। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধায় স্বাভাবিক কোনও কর্মকাণ্ড করা যায় না।’

দোহার-নবাবগঞ্জে বিএনপির যেমন অফিস বন্ধ, তেমনি দলীয় প্রচার-প্রচারণাও অনেকটাই নেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর ও বন্যার্তদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ করা হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন দোহারের নেতাকর্মীরা। একই পরিস্থিতি নবাবগঞ্জ উপজেলায়ও। পুরো উপজেলা শহরে বিএনপির কোনও প্রচারণা চোখে পড়েনি।

এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাকের কোনও পোস্টারও দেখা যায়নি। নবাবগঞ্জ বিএনপির অফিসের সামনের সড়ক ধরে কলেজ রোড পার হয়ে পশ্চিম সমসাবাদ, কলাকোপা, পোদ্দারবাজার দিয়ে তার বাড়ির সামনে ও আশেপাশের এলাকায় কোনও ধরনের প্রচারণামূলক কার্যক্রমের দেখা মেলেনি।

নবাবগঞ্জ উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় হোটেল ব্যবসায়ী ইসমাঈলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ৪-৫ বছর ধরে এখানে আছি। এখন আওয়ামী লীগও দেখা যায় না, বিএনপিও দেখা যায় না।’ তবে উপজেলা সদর ও আশেপাশের সড়কে ক্ষমতাসীন দলের ছোটবড় নেতাদের পোস্টার-ব্যানার, দেয়াল লিখন দেখা গেছে।

এসব বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক বলেন, ‘এটা শুধু আমাদের এলাকা নয়, সারাদেশে একই অবস্থা। কারণ, প্রশাসনের ভয়ে। এখন তো মানুষ ঘর থেকেই বেরুতে পারে না করোনার কারণে। মাঝখানে করোনার ও বন্যার জন্য রিলিফ দিলাম। দলীয় কার্যক্রম তো বন্ধ না, করোনাকে কেন্দ্র করে প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগেও পদ্মার পাড় দিয়ে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা গোপনে করছি। কারণ, পুলিশ জানতে পারলেই বাধা দেয়, এটা নবাবগঞ্জেও বেশি। আমি করোনায় আক্রান্ত, দোয়া মাহফিল করেছিল, সেখান থেকেও ১২টি বাইকসহ ছেলেদের আটক করা হয়েছে।’

বিএনপির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন অসুস্থ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। আর নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফোন রিসিভ করেননি।

আগামীকাল পড়ুন: নেতা নাই

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়দের নিয়ে আ.লীগ কী ‘ইউটার্ন’ নিচ্ছে!
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়দের নিয়ে আ.লীগ কী ‘ইউটার্ন’ নিচ্ছে!
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
ভিনিসিয়ুসের জোড়ায় প্রথম লেগে বায়ার্নকে জিততে দেয়নি রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগ, সেমিফাইনালভিনিসিয়ুসের জোড়ায় প্রথম লেগে বায়ার্নকে জিততে দেয়নি রিয়াল
সর্বাধিক পঠিত
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস