X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাবে না বিএনপি

সালমান তারেক শাকিল
২০ মে ২০২২, ১৮:৫৯আপডেট : ২০ মে ২০২২, ১৯:৪৭

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে কোনও সংলাপে যাবে না বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন দৃশ্যত সংলাপ বা আলোচনার আহ্বান জানালেও মূল বিষয় হচ্ছে—দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করা। মূলত সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করাই এই কমিশনের লক্ষ্য।

শুক্রবার (২০ মে) ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম-২০২২’-এর উদ্বোধন শেষে সাভারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল বলেছেন, ‘অচিরেই বিএনপিসহ সব দলকে নির্বাচন নিয়ে সংলাপের জন্য ডাকা হবে, এটা আগামী দুই-এক মাসের মধ্যেই হবে।’

সিইসি’র এমন বক্তব্যের পর আবারও ‘না’ করেছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, বর্তমান কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপ বর্জনের মতো ইসির সংলাপেও যাচ্ছেন না তারা। রাষ্ট্রপতির ওই সংলাপেও বিরোধী বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। এবারও এর পুনরাবৃত্তি দেখা যেতে পারে—এমনটি আভাস দিয়েছেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রধান।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। একমাত্র সংলাপ হতে পারে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন কীভাবে হবে, সেই আলোচনায়। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আওতায় এমন এখতিয়ার আছে কিনা, আমার জানা নেই।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মনে করেন, রাজনৈতিক ফোকাস নষ্ট করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংলাপে বিএনপিকে ডাকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি কোনও সংলাপে যাবে না। বিএনপির দাবি একটাই—এই সরকারের পদত্যাগ।’

প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তার কমিশন কোনও মন্তব্য করবে না। তার মন্তব্য ছিল, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আমরা কিছুই বলবো না। কারণ, আমরা কিন্তু শপথ নিয়েছি, যে সংবিধান বলবৎ আছে, তার অধীনে আইন ও সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। যে কাজগুলোর কথা বলছেন, সেগুলো রাজনৈতিক ব্যাপার, সেটা তারা তাদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ ও পরবর্তী সময়ে কমিশনের সংলাপেও যায়নি বিএনপি। যদিও এর আগে দুটো কমিশন গঠন প্রক্রিয়াতেই দলটির অংশগ্রহণ ছিল। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ‘২০১৬ সালে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির সংলাপে গিয়েছিল বিএনপি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল হুদা কমিশনের সংলাপেও অংশ নেয়।’

বিএনপির একজন দায়িত্বশীল বলেন, এই কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও সংলাপ ভেস্তে গেছে। ওই বাস্তবতার নিরিখে কমিশনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল সব পক্ষকে আগে আস্থায় নেওয়া। কিন্তু এই কমিশন বিশিষ্টজনদের নিয়ে যে সংলাপ করেছে, সেটাতেও অধিকাংশ আমন্ত্রিতরা যাননি। সম্পাদক ও  সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে অনেকে যাননি। ফলে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার মূল পক্ষ যেহেতু রাজনৈতিক দল, বিশেষত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, সেক্ষেত্রে আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিতে হবে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘বিদ্যমান  চরম কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কাঠামোতে নির্বাচন  কমিশনের বিশেষ কিছু করার নেই। সরকারের নির্বাচনি পরিকল্পনা ও ছকের বাইরে এই কমিশন অবাধ, নিরপেক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে—এরকম কোনও লক্ষণ এখনও দৃশ্যমান নয়। সংলাপের ব্যাপারে পার্টির সংশ্লিষ্ট কমিটির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংলাপের কথা বলেছেন। আগে তারা চিঠি দিক, তারপর আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেবো, সংলাপে যাবো কিনা।’

বজলুর রশীদ ফিরোজ উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে অভিজ্ঞতা ভালো না। আমরা রকিব ও হুদা কমিশনের সংলাপে তিনবার গিয়েছিলাম, লিখিতভাবে দলীয় অবস্থান জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও ফলাফল আসেনি।’

তিনি বলেন, ‘‘ফলাফল আসবে না, বাস্তবে হয়েছেও তাই। কারণ, সরকার প্রথমে বললো—তড়িঘড়ি করে আইন প্রণয়ন করা যাবে না। কিন্তু আবার ক’দিন পরই আইনমন্ত্রী বললেন, ‘আইন হবে।’ সরকার কারও মতামত নিলো না। এরপর রাষ্ট্রপতি সংলাপ ডাকলেন। আমরা চিঠি দিয়ে সংলাপে যাবো না বলে অবহিত করেছি। তিনি নাম চেয়েছিলেন, আমরা নাম দেইনি। কারণ, সবকিছুই হচ্ছে সরকারি দলের ইচ্ছায়, বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলনে।’’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে ৩০ জন শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। গত ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত ওই সংলাপে অন্তত ১৭ জন শিক্ষাবিদ অনুপস্থিত ছিলেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন দুটো ব্যর্থ হয়েছে। কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও সরকারের বিভিন্ন রকম কারসাজিতে নির্বাচনগুলো ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, কেবল বিএনপিই নয়, দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্বাচন কমিশন নিয়ে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে মানুষ ভোট দিতে যায় না।’

ড. মজুমদার অভিযোগ করেন, মানুষ যাকে ভোট দেয়, গণনায় এর প্রতিফলন পায় না। এসব কারণে সন্দেহ রয়েছে—রকিব ও হুদা কমিশন সাজানো কমিশন ছিল। সাজানোভাবে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এই আউয়াল কমিশনকেও যেভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রশ্ন রয়েছে। সরকারের এসব কৌশলের কারণে মানুষের ব্যাপক অনাস্থা তৈরি হয়েছে। অনাস্থার প্রতিফলন—কমিশনের আহ্বান নিয়ে ভ্রুক্ষেপ না করা।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা