জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, সংক্ষেপে বলতে চাই, কী জন্য আমি গ্রেফতার হলাম। আমি তো চুরি, ডাকাতি বা জমি দখল কোনও কিছুই করিনি। তবে অভিযোগটা হলো আমি ইসলামী আন্দোলন করি। যখন নিজামী ও মুজাহিদ ভাইসহ সবাই গ্রেফতার হলো, এরপর প্রায় দেড় বছর আমি ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ছিলাম।
বুধবার (২৮ মে) বেলা সোয়া ১১টার দিকে মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে এটিএম আজহারুল ইসলামকে নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, আজ সকালে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তিলাভ করেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। শাহবাগ মোড়ে তাকে সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর তিনি মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। এরপর ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় কেন্দ্রীয় নেতা, মহানগরীর নেতাকর্মী, শহীদ পরিবারের সদস্য, আইনজীবী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি ধারণা করিনি তৎকালীন সরকার আমাকে গ্রেফতার করবে। তবে গ্রেফতার তো হয়েই গেলাম। পরে ১২-১৪টা মামলা দেওয়ার পরে যখন আমি জামিনে বের হয়ে আসি, তখন আটকাতে পারলো না। এরপর শুনি আমাকে এই (মানবতাবিরোধী অপরাধ) মামলা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমার আস্থা ছিল, এ মামলায় আমাকে কিছু করতে পারবে না। যখন আইন সংশোধন হলো, তখন বুঝলাম যে এটা সাজানো নাটক। তখন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলাম, ভাগ্যে যা আছে সেটাই হবে। এরপর ফাঁসি থেকে মুক্ত হয়ে আপনাদের কাছে চলে আসছি।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, আমাকে আল্লাহ কেন বাঁচিয়ে রেখেছেন ৫ আগস্ট সকাল পর্যন্ত বুঝতে পারিনি। ধারণা করিনি আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। আমি আন্তরিকভাবেই কামনা করতাম, ২০১৯ সালে আদালত যখন আমাকে ফাঁসির হুকুম দিলো, তখন একদম মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলাম আল্লাহর কাছে হাজির হওয়ার জন্য। এটাই জান্নাতে যাওয়ার সহজ পথ। এ জন্য সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রেখেছিলাম। সবচেয়ে কষ্ট হলো পুরাতন আমলের ফাঁসির সেলের পাশেই প্রায় ১০ মাস ছিলাম। নিজামী ভাইকে ওখানে কিছু দিন রাখা হয়েছিল। তিনি খুব কষ্ট করেছেন। তারপর আমি এলাম সেখানে।
তিনি বলেন, আমার অপরাধই ছিল ইসলামী আন্দোলন করা। আমি প্রথম যখন ইসলামী আন্দোলনে যোগদান করি, মনে মনে ধারণা করি– ইসলামী আন্দোলনের জন্য কষ্ট, জুলুম, নির্যাতন, জেল ও ফাঁসি হতেই পারে। এটা নিয়ে চিন্তা করি নাই।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আপনারা জানেন জেলে থাকাকালীন অবস্থায় তার পরিবার অনেকটাই ছিন্নভিন্ন। ছোট্ট মেয়েটা ছাড়া এখন দেশে আর কেউ নাই। একমাত্র ছেলে দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন অনেকের মতো। এর মাঝে তিনি জেলে থাকা অবস্থায় ভাবিও (আজহার সাহেবের স্ত্রী) দুনিয়া থেকে চলে গেছেন।
বিকালে আজহারুল ইসলাম মগবাজার কাজী অফিস লেনে গোলাম আযমের কবর, আজমপুর কবরস্থানে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রীর কবর জিয়ারত করেন।