ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে জানতে তথ্য অধিকার আইনে চিঠি দেবে বিএনপি

ভারতের সঙ্গে করা চুক্তির বিষয়ে জানতে এবার তথ্য অধিকার আইনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে সাড়া না পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে করা চুক্তির বিষয় জনগণের কাছে খোলাসা করার জন্য বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সাত দিনের বেশি অপেক্ষা করেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনও রেসপন্স পাইনি আমরা। এজন্য আমাদের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তথ্য অধিকার আইনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চুক্তির বিষয়ে জানতে চিঠি দেবো।’ আগামী দুই-একদিনের মধ্যে বিএনপির একটি টিম চিঠি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল জানান, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রোহিঙ্গা সংকটসহ সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আগামী ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের জামিন শুনানিতে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড ইতোমধ্যে তার শারীরিক অবস্থা অনেকটা ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে আছে বলে জানিয়েছে। তিনি দিনদিন পঙ্গুত্বের দিকে যাচ্ছেন। তারা আরও বলেছেন, খালেদা জিয়ার আরও ভালো চিকিৎসা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে তার (খালেদা জিয়া) জামিনের জন্য কোর্টে আবেদন করেছি। কোর্ট ইতোমধ্যে মেডিক্যাল বোর্ডের কাছে মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা আশা করি, মেডিক্যাল বোর্ড কোনও চাপে না পড়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঠিক রিপোর্ট কোর্টে জমা দেবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাম্প্রতিক নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সংবিধানকে লঙ্ঘন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং সচিব নির্বাচন কমিশনে লোক নিয়োগ দিচ্ছেন। তারা কারও মতের তোয়াক্কা না করে নিজেরাই লোক নিয়োগ দিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের এই বিভক্তিতে প্রমাণ হয় যে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কমিশনে যা হচ্ছে এগুলো দুর্নীতির অংশই মনে করছে সাধারণ মানুষ।’ দুর্নীতি দমন কমিশনের নিজ উদ্যোগে ইসির দুর্নীতির তদন্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের এসব ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত। আর এই বিষয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিস্তারিত একটি কনফারেন্স করবো।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকে ভারতে নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই এনআরসির ফলে পুশব্যাক সম্পর্কে আগামী ৭ নভেম্বর বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করবে। এছাড়া সারাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতায় নিয়ে শিগগিরই একটি সেমিনার করার হবে বলে জানান তিনি।
দলের নেতাসহ ৫০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি একটি সংগঠনের প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে আমাদের সিনিয়র লিডারসসহ ৫০০ জনের বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে জামিন পেয়েছি। এই মামলাকে কেন্দ্র করে এখন সাধারণ মানুষের নাম দিয়ে তাদের হয়রানি ও গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আবার নতুন করে বাণিজ্য শুরু হয়েছে বলে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মির্জা ফখরুলসহ উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বেগম সেলিমা রহমান।

আরও পড়ুন...


ভারত সফরকালে করা চুক্তির বিষয়ে জানতে প্রধানমন্ত্রীকে বিএনপির চিঠি