X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকারের পরিকল্পনার অভাবে লাশের সারি বাড়ছে: বিএনপি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৫ জুন ২০২০, ১৭:২৩আপডেট : ২৫ জুন ২০২০, ১৭:২৬

 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা না থাকায় দিন-দিন লাশের সারি বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত (২৩ জুন) করোনায় মারা গেছেন ১৫৪৫ জন। গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই গড়ে মারা যাচ্ছেন ৪১ জন মানুষ। অথচ প্রথম দেড়মাসে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০ জনের নিচে। সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা না থাকায় দিন দিন বাড়ছে লাশের সারি। একইভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) দুপুরে জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। যদিও লাশের মিছিলে যুক্ত হওয়া একেকজন মানুষ সরকারের কাছে কেবলই একটি সংখ্যা মাত্র, কিন্তু স্বজনহারা পরিবারের কাছে তিনিই ছিলেন অমূল্য সম্পদ। এমন অবস্থায় আপনি, আমি কেউই নিরাপদ নই।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শনাক্ত হওয়ার সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই করোনা প্রায় প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রতিটি পরিবারেই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’  তিনি প্রশ্ন করেন, ‘মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগে যতটা আক্রান্ত হওয়ার ভয়, তার চেয়ে বেশি আতঙ্কগ্রস্ত এই ভেবে যে, ন্যূনতম চিকিৎসা পাওয়া যাবে কিনা?’

বিদেশে বাংলাদেশি আক্রান্ত-মৃত্যুর সঠিক তথ্য নেই সরকারের কাছে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে বাংলাদেশি ভাইবোনেরা আক্রান্ত ও মারা গেলেও এর সঠিক তথ্য নেই সরকারের কাছে, এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘উদাহরণ হিসেবে আমেরিকায় অনেক প্রবাসীর মৃত্যু হলেও তাদের পাশে দাঁড়ায়নি সরকার। শুধু সৌদি আরবেই এ পর্যন্ত করোনায় ও করোনার উপসর্গে মারা গেছেন ৪১৫ জন। এর মধ্যে সেবা দিতে গিয়ে জীবন হারিয়েছেন পাঁচ জন চিকিৎসক।’

করোনার প্রকৃত তথ্য গুম করছে সরকার

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আবার করোনার প্রকৃত তথ্যও গুম করছে গুম-খুনের এই সরকার। জনমনে ধারণা গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে যে, মৃত ও আক্রান্তের সঠিক চিত্র লুকিয়ে রাখছে ক্ষমতাসীনরা।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকার তাদের বিভিন্ন গোঁজামিলের তথ্য গোপন করতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। গত ৮ মার্চ রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের খবর দেওয়া হয়। এরপর কয়েকদিন সংবাদ সম্মেলন করা হলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে পরে তা সংবাদ বুলেটিনে রূপ নেয়। এখন শুধু করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুসহ কিছু তথ্য দেওয়া হয়। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনও সুযোগ নেই। এতেও স্পষ্ট, সরকার মনগড়া তথ্য প্রকাশ করেই শুধু পার পেতে চাচ্ছে।’

পরীক্ষার ফল পেতে ৩ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলেও অনেক অভিযোগ আসছে, বলে জানান ফখরুল। তিনি বলেন, ‘যেখানে একজন করোনা রোগী আক্রান্তের কয়েকদিন পর শ্বাসকষ্টে ভোগেন, সেখানে পরীক্ষার ফল পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা— তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার শামিল বলে আমরা মনে করি। এ মুহূর্তে দিনে পিসিআর মেশিনে শুধু ঢাকায় অন্তত ১৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা উচিত। সেই সঙ্গে র‌্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, জোনভিত্তিক লকডাউন করে যদি সেখানে উপসর্গ এবং উপসর্গহীনদের ব্যাপকভাবে নমুনা পরীক্ষা করা না হয়, তাহলে সুফল পাওয়া যাবে না।’

আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসাবে আকাশ-পাতাল তফাৎ

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের হিসাবের সঙ্গে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে আকাশ-পাতাল তফাৎ, ঢাকা শহরের কিছু কবর স্থানে লাশ দাফনের চিত্র, এই বছরের চিত্র ও বিগত বছরের চিত্র তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন।’

তিনি জানান, রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে ২০১৯ সালের মে মাসে লাশ দাফন হয়েছে ৭৭৭টি। আর এবছর মে মাসে দাফন করা হয়েছে ১০৩৪টি লাশ। আর চলতি জুনের প্রথম ১৫ দিনে লাশ দাফন করা হয়েছে ৫১৫টি। এর অধিকাংশ করোনা আক্রান্ত রোগীদের লাশ। আজিমপুর কবরস্থানে লাশ দাফনের জায়গাও কমে যাচ্ছে। রাজধানীর পোস্তগোলা শশ্মানে ২০১৯ সালে ৭৬টি লাশ সৎকার করা হলেও চলতি বছরের জুন মাসের শুধু প্রথম ১৫ দিনেই সেখানে লাশ সৎকার করা হয়েছে ৮৫ জনের। জুরাইন কবরস্থানে চলতি বছরের মার্চে থেকে জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১২০২ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। অন্য দিকে ২০১৯ সালের ওই একই সময়ে ৮৪৯ জনের লাশ দাফন করা হয়েছিল। অর্থাৎ, করোনায় মৃত্যু অনেক বেড়েছে, তা-ই লাশ দাফন হয়েছে বেশি।

ফখরুল বলেন, ‘এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ঢাকায় যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাদের অনেককে নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের চরিত্রে পরিবর্তন আসেনি

বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, ত্রাণ চুরির যে চিত্র দেশবাসী গণমাধ্যমে দেখেছে, তাতে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায় যে-কারও। কিন্তু আওয়ামী লীগারদের যেন কিছুতেই চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘‘তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি।’ সরকারপন্থী কতিপয় দলবাজ চিকিৎসকের দায়িত্বহীন বক্তব্য ও ভুল বার্তা বর্তমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন সাধারণ জনগণসহ অনেক বিশেষজ্ঞরা।’’

করোনার পরীক্ষা কেন্দ্র নেই ৪৩ জেলায়

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে করোনার পরীক্ষা কেন্দ্র নেই ৪৩টি জেলায়। এই হলো ধোঁকাবাজ আওয়ামী লীগের কথিত উন্নত দেশের চেহারা। প্রথমে সরকার বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ফি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও, সেটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০০ টাকা। তাহলে কোথায় যাবে দেশের সাধারণ মানুষ? ’

তিনি আরও  বলেন, ‘মাত্র ৬৬টি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে, যার ৩৩টি ঢাকায় আর  সারাদেশের জন্য রয়েছে মাত্র ৩৩টি ল্যাব। অন্য দিকে টেস্ট কিটের অভাব এবং নমুনা সংগ্রহে হয়রানি পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই শুধু একদিনের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নামমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে অদক্ষ টেকনোলজিস্ট দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা মোটেই নিরাপদ নয়।’

বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, এটা স্পষ্ট হয় যে ১৭ মার্চ বিশেষ একটি উৎসব নিয়ে ব্যস্ত থাকায় করোনার মতো ভয়াবহ মহামারিকে তেমন আমলে নেয়নি ক্ষমতাসীনরা। ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

তিনি আরও  বলেন, ‘অন্যদিকে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহের সংকট তীব্র। অধিকাংশ হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা নেই। এর বাইরে নন কোভিড হাসপাতালে গিয়ে রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না এমন অভিযোগও বিস্তর। সরকারি- বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনাও এসেছে পত্রপত্রিকায়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সারাদেশে জেলায় জেলায় করোনা রোগীদের স্যাম্পল কালেকশন করে কোনও পরীক্ষা ছাড়াই তা রেখে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে হাজার হাজার স্যাম্পলের স্তুপ জমা হয়ে গেছে। অধিকাংশ জেলায় করোনো টেস্টের অভাবে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।’

৫৪ লাখ পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছে বিএনপি

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ৫৪ লাখ ১২ হাজার ৪১৬টি পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়। এই সহযোগিতার আওতায় মোট  দুই কোটি ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৪ জন মানুষ উপকৃত হয়েছে। এছাড়াও ড্যাব, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও দলের নেতারা কয়েক লাখ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও পিপি বিতরণ করেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখনও করোনামুক্ত আছেন।’ তার মূল যে চিকিৎসা, সেটি এখনও করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

ফখরুল দাবি করেন, বর্তমান সরকার যেহেতু জনগণের সমর্থন নিয়ে আসেনি, তাই তাদের ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়া উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে করোনা সেলের আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেড জাহিদ হোসেন যুক্ত ছিলেন।

বিদেশ থেকে কিট আদমানি

বিদেশ থেকে কিট আদমানি করতে চায় স্বাস্থ্য বিভাগ বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে, বিদেশ থেকে কিট আদমানি করতে চায় স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশে স্বল্পমূল্যে কিট থাকা সত্ত্বেও কেন বাইর থেকে আনতে হবে।’ এর পেছনে কি কমিশন বাণিজ্য লুকিয়ে আছে, বলে প্রশ্ন করেন তিনি।

গণস্বাস্থ্যের কিট প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘এই কিটের অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সফলতা ৭০ শতাংশ। পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার সফলতাও ৭২ শতাংশের বেশি নয়। তাহলে কেন এই কিটের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হচ্ছে না। বরং এ নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে করোনা রোগীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।’

/এসটিএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়