X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘দেশের মাটি থেকে যাদের জন্ম তারা কীভাবে এমন বাজেট দেয়’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৫ জুন ২০২০, ২১:৩৪আপডেট : ২৫ জুন ২০২০, ২১:৩৬

 

বাজেট নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যদের ভার্চুয়াল আলোচনা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্ম এই দেশের মাটি থেকে হলেও গত ১০ বছরে দলটির সঙ্গে দেশ-মাটি ও মানুষের সম্পর্ক উচ্ছেদ হয়ে গেছে বলে মনে করেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, করোনাভাইরাসের এই বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মাটি ও মানুষের কোনও গুরুত্ব রাখা হয়নি। আর  এই গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য তারা দায়ী করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বিকালে চলমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজেট পর্যালোচনা নিয়ে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এসব অভিযোগ উঠে আসে বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্যদের বক্তব্যে। বগুড়ার সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের সঞ্চালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন— সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার, হারুনুর রশিদ, মোশাররফ হোসেন, জাহেদুর রহমান, আমিনুল ইসলাম ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। 

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট গত ১১ জুন ঘোষণা করে সরকার। বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্যরা বলছেন, এই বাজেটে সত্যিকার অর্থেই সংকট উত্তরণের কোনও পথনির্দেশনা নেই।

উকিল আবদুস সাত্তার বলেন, ‘সরকার করোনা সংকটের সময় যে অবাস্তব কথা বলছে, সেটা সত্যিই দুঃখজনক। এই সংকটের মুহূর্তে একটি জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে। সব দল থেকে লোক নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি করা হোক। কিন্তু সরকার এগুলোর কোনও পাত্তাই দিচ্ছে না। এর কারণে তারা কেউ তো আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, যা ক্ষতিগ্রস্ত হবার সেটা আমরা হচ্ছি, আর দেশের সাধারণ মানুষ হচ্ছে। তাদের কাছে আমার অনুরোধ, যে বাজেট ঘোষণা করেছেন আপনারা, সেটা বাস্তবায়ন করুন। যদিও আমাদের কাছে এই বাজেট অবাস্তব এবং অস্পূর্ণ বাজেট বলে মনে হয়।’         

গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে করেন গোলাম মোহম্মদ সিরাজ। তিনি বলেন, ‘যাদের জন্ম এ দেশের মাটি থেকে হয়েছে, সেই দলেরই মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উচ্ছেদ হয়ে গেছে। সেই দল এখন মানুষকে বিশ্বাস করে না। সেই দল দেশের মাটিকে বিশ্বাস করে না। সেই দলের আজ  অদ্ভুত আচরণ। শুধুমাত্র তারা এসব করছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। এবার যে বাজেট ঘোষণা হওয়া উচিত ছিল, সেটা হলো আপদকালীন এবং সংকট উত্তরণের বাজেট। কিন্তু সেটা আমরা দেখিনি।’

এমপি হারুনুর রশিদ বলেন, ‘করোনাকালীন সংকট উত্তরণের জন্য আমাদের যে রোডম্যাপ দরকার ছিল, এই বাজেটে কোনও ধরনের নির্দেশনা নাই। আমি এই বাজেট আলোচনায় সুস্পষ্টভাবেই বলতে চাই, সরকার দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। তার একটাই কারণ যাতে করে তারা যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থাকতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই দুর্ভোগ থেকে উত্তরণের জন্য এর আগেই বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বাজেট প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে এবং করোনা উত্তরণে একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলোকে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যেভাবে উপহাস করে কথাবার্তা বলেছেন, এসবের প্রতিক্রিয়া জানানোর কোনও ভাষা জানা নাই। প্রধানমন্ত্রীর মতো শীর্ষ জায়গা থেকে যদি বলা হয়— অদৃশ্য শক্তির কাছে কি হার মানা যায়? সারা পৃথিবী যেখানে আজ  বিপর্যস্ত, সেখানে যে করোনা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্যকর কথা আসে সেগুলো আসলেই দুঃখজনক।’

সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যতুটুকু জানি, আমাদের সরকারের কাছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ টাকা রয়েছে। এখন আমি বলবো, এই মুহূর্তে ব্যাংক থেকে লোন না নিয়ে রিজার্ভ টাকা থেকে ৫ বা ১০ মিলিয়ন ডলার ব্যাংকে দিয়ে দেন। ব্যাংকের ইকুইপমেন্ট যদি ঠিক থাকে, তাহলে আবারও আমাদের অর্থনীতি গড়ে ওঠবে।’ তার ভাষ্য— এবারের বাজেট করোনাভিত্তিক অথবা মানুষ বাঁচাও-ভিত্তিক হওয়ার কথা। কিন্তু যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, তাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয় বলে জানান আমিনুল ইসলাম।

‘এবারে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, এটার আকার এতটাই বড় যে এর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, এই করোনাকালীন সময়ে এর খবর অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টারা মনে হয় জানেন না, বলে মন্তব্য করেছেন এমপি মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট একটা উচ্চাবিলাষী বাজেট। এত বড় বাজেটের অর্থের উৎসটা কোথায় সেটা কিন্তু অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেননি তার বাজেট বক্তৃতায়। বাজেটের উদ্দেশ্য যদি জনগণের উন্নয়ন হয়ে থাকে, তাহলে এই বাজেটে আরও অনেক কিছু যোগ করা প্রয়োজন ছিল।’

সংসদ সদস্য জাহেদুর রহমান বলেন, ‘উন্নয়ন বাদ দিয়ে মানুষের জীবনকে রক্ষা করাই হচ্ছে এখন বড় কথা। সরকারে  উচিত হবে এখন মানুষকে বাঁচানো। এটাই হওয়া উচিত মানুষের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু মানুষ বাঁচানোর লক্ষ্যে কোনও বাজেট হয় নাই। যেকোনও সরকার ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন তো হবেই। কিন্তু দেশের জনগণের প্রতি না তাকিয়ে, এই মুহূর্ত জনগণের যা প্রয়োজন সেই দিকে না তাকিয়ে, আজকে যদি উন্নয়নের দিকে সরকার চলে যায়, তাহলে সেটার মাশুল আমাদের দেশের জনগণকে চরমভাবে দিতে হবে।’

সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি— এই বাজেট সেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই বাজেট অধিবেশন আমরা ভার্চুয়ালি করার আহ্বা জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার সে প্রস্তাব মিডিয়াতে আসছে, সব জায়গায় প্রচার হয়েছে— তারপরেও সংসদ ভার্চুয়ালি করা হয়নি। কিন্তু এর ফল যেটা হলো, সম্পূরক বাজেট ঘোষণার একদিন পরেই সংসদ মুলতবি হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ২৩ জুন বাজেটের ওপর আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বাজেটের মতো জরুরি সেশন কেবল একদিনে আলোচনা করে বাজেট পাস হওয়ার নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই।’

এ প্রসঙ্গে রুমিন আরও যোগ করেন, ‘করোনার মতো একটা সংকটের মধ্যে যে বাজেট দিয়েছে, সমালোচনা হবে, সেটা সরকার আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। সরকার চাইলেই একমাসব্যাপী ভার্চুয়ালি এই অধিবেশন চালাতে পারতো। যাতে করে সংসদ সদস্যরা মন খুলে তাদের মতামত দিতে পারতেন। মূলত সরকারের ভুলগুলো ঢাকা দেওয়ার জন্যই একদিনের মধ্যে বাজেটের আয়োজন করেছে তারা।’ 

 

/এসটিএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা