X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিক বিভক্তি দূর করার স্বপ্ন দেখেছিলেন ড. এমাজউদ্দীন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ জুলাই ২০২০, ১৯:৫৭আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২০, ২১:১৮

 

স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও অন্য আলোচকেরা

খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষহীন ছিলেন বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র নেতা ও বিশিষ্ট একাধিক নাগরিক। তারা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য কখনও নিরপেক্ষতার ভান ধরেননি। তিনি উদার-আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছেন আজীবন। সমাজের বিভক্তি দূর করতে না পারলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র নানা দিক থেকে সমস্যায় পড়বে বলে মনে করতেন তিনি। তিনি এই দেশের নাগরিক বিভক্তি দূর করার স্বপ্ন দেখেছিলেন বলে জানান আলোচকরা।

শুক্রবার (২৪ জুলাই) বিকালে বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত ‘উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী এমাজউদ্দীন আহমদের’ এর প্রয়াণে স্মরণসভায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট একাধিক নাগরিক এসব মত প্রকাশ করেন। সভায় এমাজউদ্দীনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানায় বিএনপি।

গত ১৭ জুলাই অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৭ বছর। আলোচনায় প্রয়াত অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, ড. সা’দত হোসাইনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রসঙ্গও  উঠে আসে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ জাতীয় অভিভাবক ছিলেন। যারা স্বাধীনতা, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাদের কাছে তার মৃত্যু অনেক দুঃখের। তার কর্মজীবন ও শিক্ষাজীবন অনেক সাফল্যে পরিপূর্ণ। গণতন্ত্রের জন্য যারা সংগ্রাম করছেন, তাদের কাছে তিনি অনুপ্রেরণাদায়ক। আজন্ম তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। কথা বলার স্বাধীনতা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি মাঠেও নেমেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন।’

স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী ও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের অংশ নেওয়ার কথা স্মরণ করে তার নামে একটি ‘জাতীয় স্মৃতি পরিষদ’ গঠন এবং তার লেখা পুস্তকগুলো জাতীয়তাবাদী দলের অনুসারীদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।  তিনি বলেন, ‘তার যে রাষ্ট্রচিন্তা ছিল, সেটা ছিল দেশ, সমাজ, জাতি, রাজনীতি, গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এর সমন্বয়ই তার চিন্তা-চেতনা। এগুলোকে সমন্বয় করে তিনি তার বইগুলো রচনা করেছেন, পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এমাজউদ্দীন আহমদ একজন নিবেদিত জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী ছিলেন। বাংলাদেশে অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন, বুদ্ধিজীবীর অভাব নেই। কিন্তু তার মতো উঁচুমানের বুদ্ধিজীবী এখন খুব বিরল, নাই বললেই চলে। এমাজউদ্দীন সাহেব গত ১৩ বছর মনের মধ্যে অনেক দুঃখ নিয়ে বেঁচে ছিলেন। গণতন্ত্রের প্রতি তার একটা কমিটমেন্ট ছিল। সেই গণতন্ত্র, ব্রেকডাউন অব ডেমোক্রেসির জন্য মিলিটারি ইন্টারভেনশনের দরকার নেই, রাস্তায় কোনও ট্যাংক নামানোর দরকার নেই, কোনও গোলাবারুদের দরকার নেই, কোনও মার্শাল ল জারি করার দরকার নেই। এখন ব্যালট বাক্স ব্যবহার, ভোটকে ব্যবহার করে, গণতন্ত্রকে ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদী সরকার, স্বৈরাচারি সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর। এই যে গণতন্ত্রের মৃত্যু হচ্ছে ধীরে ধীরে- তিনি মনের মধ্যে এই দুঃখটা নিয়ে চলে গেছেন বলে আমি মনে করি।’

এমাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে ১৯৪৮ সালে কলকাতা থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেন সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমির উদ্দিন সরকার আইন ও হিস্ট্রি নিয়ে পড়েন এবং এমাজউদ্দীন আহমদ পড়েন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। শুক্রবার তার স্মরণসভায় বিএনপির প্রবীণ নেতা, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ উপমহাদেশের খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি দ্বিমত পোষণ করলেও সহনশীলতার সঙ্গে করতেন। কোনও সময় তাকে রাগ করতে দেখেনি। গণতন্ত্র, রুল অব ল, সার্ক ইত্যাদি বিষয়ে তার অবস্থান ছিল খুবই দৃশ্যমান। সবাইকে সমানচোখে দেখতেন তিনি।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বিরলপ্রজ মানুষদের একজন ছিলেন। তিনি একজন মৃতুঞ্জয়ী মানুষ।’

অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘সমাজ ও ধর্ম নিয়ে কাজ করেছেন এমাজউদ্দীন আহমদ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তাও তার দখলে ছিল। বিশদভাবে দেশের সমাজ ও রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করেছেন প্রয়াত এই অধ্যাপক। তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হোক বাংলাদেশে।’ রাষ্ট্রের ভেতরে যে নাগরিক বিভক্তি রয়েছে, সেগুলো এমাজউদ্দীন আহমদ দূর করার স্বপ্ন দেখেছিলেন বলে আলোচনায় উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক দিলারা চৌধুরী।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে একসঙ্গে কথা বলেছি। আজকে তার অনুপস্থিতি আমাদের ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। তার বিরুদ্ধেও দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এসেছিল, আজকে আমরা কোন দেশে বাস করছি।’

এমাজউদ্দীন প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তার মতো মানবিক মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল হবে।’

‘এমাজউদ্দীন আহমদ এককভাবে কিছু করার পক্ষপাতি ছিলেন না’ বলে মন্তব্য করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতিতে তিনি প্রভাবান্বিত ব্যক্তি ছিলেন। তার চিন্তায় তিনি সবাইকে যুক্ত রাখার চেষ্টা করতেন।’ জ্ঞানের সঙ্গে তিনি অনেক বিনয়ী মানুষ ছিলেন বলেও স্মৃতিচারণ করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘এমাজউদ্দীন আহমদের জীবন ছিল সাফল্যে ভরা। তার সবচেয়ে বড় দিক ছিল গণতন্ত্রের জন্য জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন।’

 

/এসটিএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট