X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘মৌলবাদের অর্থনীতির বার্ষিক নিট মুনাফা ২, ৪৬৪ কোটি টাকা’

ঢাবি প্রতিনিধি
১২ মার্চ ২০১৬, ০৩:০১আপডেট : ১২ মার্চ ২০১৬, ০৩:০৬

বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতির বার্ষিক নিট মুনাফা আনুমানিক দুই হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা বা ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারাকাত। তিনি আরও জানান,এ মুনাফার সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ আসে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮.৮ শতাংশ আসে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে, ওষুধ শিল্প ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে আসে ১০.৮ শতাংশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসে ৯.২ শতাংশ, রিয়েল এস্টেট থেকে ৮.৫ শতাংশ, সংবাদ মাধ্যম ও তথ্য প্রযুক্তি থেকে ৭.৮ শতাংশ ও পরিবহন-যোগাযোগ ব্যবসা থেকে আসে ৭.৫ শতাংশ টাকা।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘দক্ষিণ এশিয়ার মৌলবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও নারী-প্রতিরোধ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী তৃতীয় দক্ষিণ এশীয় সম্মেলন ২০১৬ এর উদ্বোধনী দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘মৌলবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিচার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় মূল বক্তার বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ তথ্য জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। পর্যালোচনামূলক বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক ড. রতন খাসনবিশ, ড.বিনায়ক সেন,হায়দার আকবর খান রনো প্রমুখ।
সভায় আবুল বারকাত বলেন,মৌলবাদী অর্থনীতির বিগত চার দশকের নিট মুনাফার পরিমাণ আনুমানিক প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। যার ব্যাপকাংশ এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ প্রলম্বিত করতে ব্যয় করা হচ্ছে। এছাড়া,বিদেশি লবিস্টদের ভাড়া করার কাজে, জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নে,নতুন ক্যাডার বাহিনী গঠনে ও সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে এ অর্থ ব্যয় করা হয়।
দেশে মৌলবাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ সরাসরি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন,গত তিন দশকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ।আর দাখিল মাদ্রাসা বেড়েছে ৮ গুণ। প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বেড়েছে দ্বিগুণ।আর দাখিল মাদ্রাসায় বেড়েছে ১৩ গুণ।সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক পর্যায়ে একজন ছাত্র-ছাত্রীর মাথাপিছু রাষ্ট্রীয় ব্যয় যেখানে তিন হাজার টাকা, সেখানে সরকারি মাদ্রাসা খাতে সে ব্যয়ের পরিমাণ ৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশে এখন প্রতি ৩ জন ছাত্রের ১ জন মাদ্রাসার ছাত্র। দেশে মোট মাদ্রাসার সংখ্যা ৫৫ হাজারের বেশি। যার মধ্যে ৭৩ শতাংশ কওমি মাদ্রাসা। আর এসব মাদ্রাসা পরিচালনায় বছরে ব্যয় হয় আনুমানিক ১৪০০ কোটি টাকা। অথচ দেশে মাদ্রাসা পাশদের বেকারত্বের হার ৭৫ শতাংশ।
দেশে আর্থ সামাজিক শ্রেণি কাঠামো যেভাবে বদলে যাচ্ছে তা সাম্প্রদায়িক জঙ্গিত্ব ও মৌলবাদ বিকাশের অনুকূল দাবি করে তিনি আরও বলেন,বাংলাদেশে এখন ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১০ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ দরিদ্র যা মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ। একই সঙ্গে দেশে ৫ কোটি ১ লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণির (৩১.৩ শতাংশ) ও বাকি জনসংখ্যার ৪৪ লাখ মানুষ ধনী (২.৭ শতাংশ)। গত ত্রিশ বছরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ। দরিদ্র জনসংখ্যার এই বৃদ্ধি জাতীয় উন্নয়নের ব্যর্থতারই বহিঃপ্রকাশ, যা দেশে ধর্মের প্রভাব এবং ধর্মীয় উগ্রতাকে উৎসাহিত করার ভিত্তি মজবুত করেছে।

মৌলবাদের সঙ্গে জড়িতদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথম ১০ বছরে ধৃত জঙ্গিদের প্রায় সবাই দরিদ্র-নিম্ন-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এদের মধ্যে যারা শিক্ষিত তাদের প্রায় সবাই মাদ্রাসা থেকে এসেছে। যারা কোনও না কোনওভাবে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিল বা আছে। এছাড়া ইদানীং ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে দেখা যাচ্ছে উগ্রজঙ্গিবাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও সক্রিয়ভাবে জড়িত ধনী ঘরের সন্তান এবং ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যাদের বয়স ১৬ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।

সভায় পর্যবেক্ষণমূলক বক্তব্যে নারী জাগরণ দিয়ে মৌলবাদকে প্রতিহত করা সম্ভব- জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, বাংলাদেশে এখন নারী জাগরণ চলছে। কিন্তু মৌলবাদীরা নারী জাগরণ সমর্থন করে না। তাই নারী জাগরণ ব্যাপক মাত্রায় করতে পারলে মৌলবাদীদের সংখ্যা কমানো যাবে। কারণ এদের অন্যতম টার্গেট হল নারীরা।বিশেষত গ্রামীণ নারীরা। বাংলাদেশের গ্রামের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে কোরআন শিক্ষার নামে নারীদের মধ্যে মৌলবাদী চেতনার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। তাই বিপুলসংখ্যক গ্রামীণ নারীদের মধ্যে জাগরণ ঘটাতে পারলে মৌলবাদ প্রতিহত করা সম্ভব।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এতে উপস্থিত ছিলেন, ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের প্রণেতা ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম প্রমুখ। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন আগামীকাল শনিবার দুপুর ২টায় শুরু হবে।

 

এসআর/এমএসএম

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন