গত জুন মাসে ভারত সাগর বেষ্টিত দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট উপকূলে হঠাৎই প্রচণ্ড ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বয়ে গেল। শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী এবং বর্তমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মাহিন্দানন্দা আলুথগামাগা বলে ফেললেন, তিনি বিশ্বাস করেন ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল ভারতের কাছে ‘বিক্রি’ করা হয়েছিল, না হলে শ্রীলঙ্কাই শিরোপা জিততো। তিনি এটির ফৌজদারি তদন্ত চেয়ে গোটা দেশে ঝড় তুলে ফেললেন। ফৌজদারি তদন্ত শুরুও হলো। কিন্তু পাতানো ম্যাচের পক্ষে উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে পুলিশ তদন্ত শেষ করে দিলো। তদন্ত শেষ হওয়ার এতদিন পর ২০১১ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা বললেন, এটা ছিল তার কাছে খুব হতাশাজনক একটা বিষয়। তবে উল্টো দিক থেকে তার মনের মধ্যে একটা আশাবাদ জাগে যে খেলাটার জন্য শেষ পর্যন্ত এটি মঙ্গলও বয়ে আনতে পারে।
‘ফাইনাল বিক্রি’ বা পাতানো ম্যাচের তদন্তে নেমে শ্রীলঙ্কার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে ২০১১ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা, সহ-অধিনায়ক মাহলো জয়াবর্ধনে, ওপেনার উপুল থারাঙ্গা ও সেই সময়ের প্রধান নির্বাচক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট কিংবদন্তি অরবিন্দ ডি সিলভাকে। ম্যাচ পাতানোর দাবি প্রতিষ্ঠা করা করা যায়, এমন কোনও প্রমাণ না পেয়ে, এই তদন্ত চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন বলে পুলিশ তদন্ত প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেয় ২ জুলাই। আর এ নিয়েই কুমার সাঙ্গাকারা ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে দেওয়া সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিষয়টি তার কাছে ছিল ‘হতাশাজনক’, তবে এটি ক্রিকেটের ‘ভালো’ও করতে পারে ভবিষ্যতে।
সাঙ্গাকারা বলেন, ‘কখনও কখনও হতাশাজনক কিছু বিষয়ের সঙ্গে মজার ব্যাপারও চলে আসে। সম্প্রতি যেমন সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী একটা অসার দাবি করলেন, যার দরুণ আমাদের ডাক পড়লো এবং কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো।’
তবে ক্রিকেট আইনের রক্ষক মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করা শ্রীলঙ্কার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মনে করেন এতে ভবিষ্যতে ক্রিকেটের ভালোও হতে পারে, ‘সত্যিটা বললে, আমিই হই বা নির্বাচক, মাহেলা বা অন্য কেউ, এভাবে যাওয়া ও প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া এবং যা বলা হয়েছে সেটি খেলাটির জন্যই স্বাস্থ্যকর। আমি মনে করি খেলাটা যে কত সম্মানের তা মানুষের বোঝার জন্য এই প্রক্রিয়াটি সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
সাঙ্গাকারা পরিষ্কার বলে দিয়েছেন রাজনৈতিক স্বার্থেই বিষয়টিকে ব্যবহার করেছেন মন্ত্রী আলুথগামাগে, ‘ক্রিকেট খেলাটিতে সেই মানুষদের প্রয়োজন যারা সৎ এবং মন থেকে সত্যটা বলতে ভয় পায় না। কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় আপনি কিছু লুকোবেন না। রাজনীতির কথা যদি বলেন যেখানে রাজনৈতিকভাবে ও নৈতিকভাবে দুর্নীতিপরায়ণ লোকের অভাব নেই এবং তাদের কেউ কেউ যখন ক্রীড়াঙ্গনে সরকারি দায়িত্ব নিয়ে আসে তখন আপনি বুঝতে পারবেন কোত্থেকে এসব আসছে। এবং দ্বিতীয়বার না ভেবেই নির্ভয়ে আপনি বলে দিতে পারবেন তাদের উদ্দেশ্য কী।’
প্রসঙ্গত, ভারতের মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ভারত জিতে নেয় তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা। ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ের ২৮ বছর পর।