কলম্বিয়ার গোলকিপার রেনে হিগুইতার কথা মনে আছে? শুধু গোল ঠেকানো নয়, গোল করতেও দক্ষ হিগুইতা যখন-তখন বেরিয়ে আসতেন পোস্ট ছেড়ে। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ক্যামেরুনের বিপক্ষে বক্সের অনেক বাইরে বেরিয়ে রজার মিলার চাতুর্যের কাছে পরাস্ত হয়েও ‘শিক্ষা’ হয়নি তার। বসুন্ধরা কিংসের গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো অবশ্য হিগুইতার মতো এতটা ‘সাহসী’ নন। তবে গোল ঠেকানোর পাশাপাশি গোল করে তিনি এখন দেশের আলোচিত ফুটবলার।
একই নাম হলেও ব্রাজিলের কিংবদন্তি স্ট্রাইকারের মতো আক্রমণভাগের ফুটবলার নন জিকো। তিনি বেছে নিয়েছেন গোলরক্ষণের কঠিন দায়িত্ব। গোলকিপার হয়েও সদ্যসমাপ্ত স্বাধীনতা কাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠেছে তার হাতে। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফর্ম করা জিকো ঢাকা আবাহনীর বিপক্ষে সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে দুটো শট ঠেকানোর পর দলের জয় নিশ্চিত করা গোলও করেছেন। বসুন্ধরার শিরোপা জয়ে তার বিশাল অবদান।
সেরা খেলোয়াড় আর শিরোপার উচ্ছ্বাস নিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়ায় গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটাচ্ছেন জিকো। সেখান থেকে ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘ভাবতেও অবাক লাগছে আমি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছি। সাধারণত ফরোয়ার্ড কিংবা ওপরে খেলা ফুটবলার এই পুরস্কার পায়। গোলকিপার হয়ে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে আমি উচ্ছ্বসিত। এখনও চিন্তা করতেই যেন কেমন লাগছে!’
সেমিফাইনালে অমন চমকজাগানো পারফরম্যান্সের আগে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তিনটি দুর্দান্ত সেভ করেছেন জিকো। ফাইনালেও অন্তত তিনটি চমৎকার সেভ করে দলকে বিপদে পড়তে দেননি। টুর্নামেন্ট সেরার লড়াইয়ে তাই তার তেমন প্রতিদ্বন্দ্বীই ছিল না।
স্বাধীনতা কাপে জিকোর স্মরণীয় মুহূর্ত নিঃসন্দেহে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে গোল। তিনি নিজেও দলকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তটা নিয়ে রোমাঞ্চিত, ‘টাইব্রেকারে দুটো শট ঠেকানোর পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। সাডেন ডেথে দলের অষ্টম শট নেওয়ার সময় আমি নিজেই এগিয়ে যাই। সতীর্থরা আমাকে এগিয়ে যেতে দেখে অবাক হলেও থেমে যাইনি। আবাহনীর গোলকিপার সোহেল ভাইকে পরাস্ত করে দলকে জয় এনে দিয়েছি।’
অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগেও একাদশে সুযোগ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন জিকো। বসুন্ধরা কিংসের প্রথম ম্যাচে তো মাঠে নামারই সৌভাগ্য হয়নি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পাওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
অনুশীলনে শুধু গোলরক্ষণ নয়, পেনাল্টি আর ফ্রি-কিক থেকে গোল করার চেষ্টা করেন তিনি। কঠোর পরিশ্রমের সুফল পেলেন স্বাধীনতা কাপের সেমিফাইনালে। টুর্নামেন্ট সেরা হয়ে আত্মবিশ্বাসী জিকোর চোখ এখন জাতীয় দলে। সাফ ফুটবল আর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ দলে থাকলেও মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। এবার আক্ষেপটা ঘোচাতে চান জিকো, ‘এক সময় বসুন্ধরা কিংসের তিন নম্বর গোলকিপার ছিলাম। একাদশে জায়গা করে নিয়ে স্বাধীনতা কাপের সেরা খেলোয়াড় হলাম। এবার আমার সামনে জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামার চ্যালেঞ্জ। জানি কাজটা সহজ নয়। তবে পরিশ্রম করলে একদিন সুযোগ আসবেই।’