ফাহামিদুল ও হামজা চৌধুরীর সঙ্গে শামিত সোমের বাংলাদেশ দলে অন্তর্ভুক্তি দেশের ফুটবলে অন্যরকম আমেজ তৈরি করেছিল। দীর্ঘ সময় পর ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপচে পড়া ভিড় ছিল লক্ষণীয়। এমন ম্যাচে স্বাগতিক দর্শকরা জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে চেয়েছিল। কিন্তু আশা জাগিয়েও পয়েন্ট উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং হার মেনেছে তারা। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ২-১ গোলে জিতেছে সিঙ্গাপুর।
বাংলাদেশের দাপটের মুখে প্রথম আক্রমণটা ছিল সিঙ্গাপুরের। ৯ মিনিটে হ্যারিস হারুনের লম্বা থ্রো-ইন থেকে জটলার মধ্যে কেউ ক্লিয়ার করতে পারেননি। দ্বিতীয় পোস্টের পাসে সং উই ইয়াং পা ছোঁয়ালেও লক্ষ্যভ্রষ্ট।
১৫ মিনিটে বাংলাদেশের শাকিল আহাদ তপুর ক্রসে রাকিব হোসেনের আলতো প্লেসিং এক ডিফেন্ডারের পা হয়ে গোলকিপারের হাতে। পরের মিনিটে সিঙ্গাপুর সুযোগ পায়। সতীর্থের ক্রসে ইকসান ফান্ডির জোরালো হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট।
২৮ মিনিটে প্রতিপক্ষের একজনের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে তারিক কাজী চোটে পড়েন। তবে আশার কথা একটু পরই খেলতে নামেন এই ডিফেন্ডার।
দুই মিনিট পর সিঙ্গাপুরের ফান্ডির শট ঝাঁপিয়ে আটকান মিতুল মারমা।
একটু পর কয়েকজনের মাঝ দিয়ে শমিত সোমের বুদ্ধিদীপ্ত রক্ষণচেড়া পাসে বলের গতি একটু বেশি থাকায় রাকিব কিছু করতে পারেননি। গোলকিপার দৌড়ে এসে তালুতে নেন।
৩৫ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে হামজা চৌধুরীর শট অল্পের জন্য ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়।
৩৯ মিনিটে হৃদয়ের দারুণ এক পাস থেকে ফাহামিদুল বক্সের প্রান্তে এক ডিফেন্ডারকে ডজ দিয়ে লক্ষ্যে শট নিলেও তা আরেক ডিফেন্ডার ব্লক করেন।
৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ পেছনে পড়ে গেলো। গ্যালারির গর্জন থামিয়ে উল্লাসে মাতে সিঙ্গাপুর।
হারিসের শট এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বল উঁচুতে উঠে যায়, মিতুল মারমা পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ক্লিয়ার করেন। তবে তা ঠিকঠাক হয়নি। হ্যারিসের ক্রসে উই ইয়াং সাইড ভলিতে জাল কাঁপান।
যোগ করা সময়ে বাংলাদেশ সমতায় ফেরার সুযোগ হারায়। শমিতের কর্নারে তপু দৌড়ে এসে হেড নিলেও তা গোলবার ঘেঁষে যায়।
গোলশূন্য থেকে বিরতিতে যাওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু প্রথমার্ধে নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে তারা গোল হজম করেছে। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে হাফটাইমে যায় সিঙ্গাপুর।
ম্যাচের আগে জেফার ও মোজা গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন। খেলার বিরতিতে হয় লেজার শো। স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট বন্ধ। এসময় গ্যালারিতে সব মোবাইল ফোনের লাইট জ্বল ওঠে। কয়েক মিনিটের লেজার শো হয়।
বিরতির পর বাংলাদেশ দলে একটি পরিবর্তন আসে। সৈয়দ কাজেম শাহের জায়গায় নামেন শাহরিয়ার ইমন।
৪৮ মিনিটে রাকিবের ক্রসে শাহরিয়ার ইমন বলের নাগাল পাননি।
৫৮ মিনিটে সিঙ্গাপুর আবারও এগিয়ে যায়। বক্সের বাইরে থেকে হামিন শায়িনের জোরালো শট মিতুল মারমা ঠিকঠাক প্রতিহত করতে পারেননি। বল পড়ে সামনে থাকা ইকসান ফান্ডির কাছে। তার বুদ্ধিদীপ্ত শট হৃদয়ের ফাঁক গলে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ায়।
এসময় মিতুল পা বাড়ালেও কিছু করতে পারেননি। ওই সময়ে ফাহামিদুলের জায়গায় নামেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম।
৬৭ মিনিটে বাংলাদেশ এক গোল শোধ দেয়। গর্জনে ফেটে পড়ে পুরো স্টেডিয়াম। হামজার থ্রুপাস ধরে বক্সের প্রান্ত থেকে রাকিব হোসেন প্লেসিং করে দেন। বল সময় নিয়ে জালে আশ্রয় নেয়।
৭৩ মিনিটে বাংলাদেশের আরও দুই পরিবর্তন। আক্রমণে আরও জোর দেন কাবরেরা। শেখ মোরসালিন ও আল আমিন নামেন। হৃদয় ও তপু উঠে যান।
একটু পর হামজার ফ্রিকিক সিঙ্গাপুর ক্লিয়ার করে। মোরসালিনের প্রচেষ্টাও সফল হয়নি।
৭৯ মিনিটে শাহরিয়ার ইমনের শট সোজা চলে যায় গোলকিপারের হাতে।
এরপর সিরিজ কর্নার। চতুর্থবারের চেষ্টায় হামজার কর্নারে তপুর হেড এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করেন।
যোগ করা সময়ের খেলা চলছে। বাংলাদেশ মুহুর্মুহু আক্রমণ করেও সফলতা পাচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে হামজার শট পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। এরই সঙ্গে আক্ষেপও বাড়ে।
একদম শেষ দিকে মোরসালিনের ক্রসে তারিক কাজীর হেড অল্পের জন্য গোল হয়নি। ফিলিপাইনের রেফারির শেষ বাঁশির সঙ্গে নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের হারও।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ‘সি’ গ্রুপে দ্বিতীয় ম্যাচে তিন পয়েন্টের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ।