X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন বিসিবি প্রধান

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:০৭আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৪৪

জরুরি বোর্ড সভায় প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন সোমবার হঠাৎ করে আন্দোলনে মাঠে নামলেন জাতীয় দল থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটাররা। যখন ভারত সফরের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলা দরকার, ঠিক তখন সাকিব-তামিমদের এই ১১ দফা দাবির যৌক্তিকতা-অযৌক্তিকতা নিয়ে জরুরি বোর্ড সভা ডাকতে হলো নাজমুল হাসান পাপনকে। মঙ্গলবার প্রায় দেড় ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট-

বিস্মিত বোর্ড সভাপতি

আজকে হঠাৎ করে এখানে বসার কারণটা বুঝতেই পারছেন। কালকে টিভি ও পত্রপত্রিকায় দেখলাম খেলোয়াড়রা কিছু দাবি দাওয়া দিয়েছে, যেটা খুবই ন্যাচারাল। এটা দিতেই পারে এবং একই সঙ্গে তারা আরেকটা কাজ করেছে- সব খেলা থেকে স্ট্রাইকে গেছে। প্রথম কথা হচ্ছে, আপনাদের সঙ্গে জানাশোনা অনেক দিনের, নতুন তো নয়। আসলে এটা শকিং। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না, এখন পর্যন্ত বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আমাদের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে এরকম কিছু হতে পারে। এর পেছনে নিশ্চয় একটা কারণ আছে।

ক্রিকেটারদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক

ওদের সঙ্গে আমার একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। যে খেলোয়াড় আছে, মনে হয় না তাদের সঙ্গে আমার চেয়ে এত বেশি যোগাযোগ কেউ মেইন্টেইন করে। ব্যক্তিগত সমস্যা, যখন যে সমস্যা, তারা কিন্তু আমাদের জানায়। এবং এটা স্বাভাবিক। আমি চেষ্টা করি সমাধান করতে। এটা হতেই থাকে, শেষ নেই। একেকজনের একেকটা সমস্যা। একবার বাচ্চা অসুস্থ দেখে ইমরুল রাতে ফোন করলো। বাচ্চার অবস্থা খুব খারাপ। অ্যাপোলো হাসপাতাল কিছু করতে পারছে না। সিঙ্গাপুর নেওয়াই লাগবে। বললাম নাও, বললো ভিসা নেই। টিকিট কেটে নিতে বললাম, একদিনের মধ্যে ভিসা করে দিলাম সবার।

তামিম ইকবালের কথা বলি, আমি এনসিএল দেখি। কে কেমন পারফর্ম করছে সেটা খেয়াল রাখি। এই যে দ্বিতীয় রাউন্ডে, তামিমকে ওই দিন দেখলাম ব্যাটিং করছে না। আমি বললাম কী হয়েছে তোমার? সে বললো, তেমন কিছু না। চার-পাঁচদিন বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে।

সাকিব- ও যখন সিপিএলে ছিল, আমি তাকে দুইদিন ফোন দিয়েছিলাম। কবে আসছ জানতে চেয়েছি। সে যখন ফিরলো দেশে তখন তাকে ভারত সফরের দল নিয়ে কী ভাবছে সেটা নিয়েও মতামত শুনতে চেয়েছি। একজন খেলোয়াড়ের ব্যাপারে জানতে চাইলাম, যে ফর্মে নেই তাকে কেন দলে নিতে চাচ্ছ? সে বললো, না ওকে আমার চাই। এদের সঙ্গে কথাবার্তা সবসময় আমার আছে। একজন-দুজন না, সবার সঙ্গে। আমি তো দূরে থাক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওদের প্রবেশাধিকার আছে।

খেলোয়াড়দের বেতন-ভাতা

আগে খেলোয়াড়দের বেতন ছিল দেড় লাখ, আমরা যখন এসেছি- বাড়িয়ে করেছি আড়াই লাখ। শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরের লাউঞ্জে মাশরাফি-সাকিব আমাকে বললো ভাই বেতন তো বাড়ালেন না। আমি বললাম, বাড়িয়েছি তো। একজন বললো একটু বেশি করে বাড়ান। আরেকজন বললো ৫০ হাজার টাকা বাড়ান। আলোচনা করে ওখানে বসেই আমি তাদের বেতন করলাম চার লাখ। আমাদের মধ্যে এমন সম্পর্ক।

একজন খেলোয়াড়ও বলতে পারবে না যে ওরা আমাদের কাছে চেয়েছে, কিন্তু আমরা দেইনি। একজনও না। আমি বুঝতে পারছি না মিডিয়াতে তারা কী বলছে। ২৪ কোটি টাকা ওদের আমরা বোনাস দিয়েছি, এই ১৫ জনকে। এতটা কেউ দেয় নাকি। কী পরিমাণ সুযোগ সুবিধা ওদের বাড়ানো হচ্ছে প্রায় সময়, তারপরও টাকার জন্য তারা খেলা বন্ধ করে দেবে। এটা আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।

এমন যদি হতো আমাদের কাছে বলেছে, আমরা রাজি হইনি- মতপার্থক্য রয়েছে। কোনোদিন বললো না, জানলাম না, যদিও এদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ। কাউকে কিছু বললো না, জানালো না। এটা তো একেবারে আশ্চর্য ব্যাপার। অবাক না হওয়ার কারণ নেই। সাকিবের সঙ্গে শেষ যখন দেখা হলো, তখনও সে টাকার কথা বলেছে। বিশ্বকাপে ভালো করলাম বোনাস দিলেন না, টাকা দেন। আমি বললাম, ঠিক আছে আলাপ আলোচনা করে একটা অনুষ্ঠান করে স্বীকৃতি দেই। কোনোদিন তো এসব ব্যাপারে বললো না।

খেলোয়াড়দের দাবি দাওয়া নিয়ে

তার চেয়ে বড় কথা, আমি শকড হওয়ার কারণ বলছি। দেখেন যে দাবিগুলো তারা দিয়েছে, একেক করে যদি বলি। প্রথম দাবি এসেছে কোয়াব নিয়ে। প্রথম কথা হচ্ছে কোয়াবের সঙ্গে বিসিবির কিছু করার নেই। এটা সম্পূর্ণ আলাদা। আগে আমরা খেলোয়াড়দের সংগঠন স্বীকৃতিই দিতাম না। এরা আসার পর আমাদের বলতে বলতে এই প্রথম আমরা তাদের স্বীকৃতি দিলাম। এরা আসার পর কী কী ইলেক্টেড বডি, এর কী কী করছে সেটা জেনে আমরা অনুমোদন দিলাম। এরপর এখানে কে প্রেসিডেন্ট হবে, সেক্রেটারি হবে, সেটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও কারণ নেই। তাই প্রথম দাবির সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা তো পরিষ্কার, হোয়াট ক্যান উই ডু? আমি যদি বলি একে প্রেসিডেন্ট বানাও, ওকে ওটা বানাও- সেটা কি আমি করতে পারবো? না, পারি না। তখন তো ফিকা আমাকে ধরবে। তাই এই দাবি কেন করলো, জানি না।

দ্বিতীয় দাবি, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আগের মতো করতে হবে। আমাদের সময় লাগছে এগুলো আপনাদের বোঝাতে। তারপর আপনারা কী লিখবেন বা বলবেন সেটা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু আমি মনে করি দেশবাসীর কিছু জিনিস জানার দরকার। প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে এক মাস আগে আমাদের সঙ্গে সিসিডিএম বসেছিল। ওরা এসে বললো ওরা এটা-ওটা চায়। আমি ওখানেই বললাম, করে দাও। ওন দ্য স্পট, এসব সিদ্ধান্ত নিতে আমি দেরি করি না। ওরা যা চায় করে দাও। ওরা বলছিল- প্লেয়ার্স বাই চয়েজ উঠিয়ে দিতে। আমরা কখনও না করিনি। প্লেয়ার্স বাই চয়েজ, মানে ড্রাফটে যা হয়- অধিকাংশ ক্লাবই খেলোয়াড়দের প্রথম সিজনে টাকা দিয়ে পরে দিতো না। কিন্তু আমরা আসার পর থেকে বকেয়া সব পরিশোধ করেছি, গতবারের সহ সবগুলো পরিশোধ করা হয়েছে। শুধু একটা ক্লাব বাকি আছে। গতবার যারা দেয়নি, তাদের বিসিবি টাকা দিয়েছে। এখনও তো পরের বিপিএল হতে তিন মাস বাকি আছে। এটা তো বিসিবির দেওয়ার কথা না। কিন্তু আমরা করছি এটা। বুঝতে পারছি না সমস্যা কোথায়?

আরেকটা দাবি, এই বছরের পর থেকে বিপিএল আগের ফরম্যাটে যেতে হবে। এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএল। এরপর আবার ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বিপিএলে চলে যাব। এটা তো সবারই জানা আছে, বারবার বলেছি। আর বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে স্থানীয়দের পারিশ্রমিকে সামঞ্জস্য। এটা আমরা করলে করতে পারি, ফ্র্যাঞ্চাইজি পারবে না। তারা কত দাম দিয়ে খেলোয়াড়দের নেবে সেটা আমরা কীভাবে বলবো। আইপিএলে যে নিলাম হয়, সেটা আপনি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন। এখন যদি বলা হয় সব খেলোয়াড়কে এক কোটি করে টাকা দিতে হবে, তাহলে হবে? আমি বুঝতে পারছি না কী বলা হচ্ছে। বিপিএল নিয়ে এমন দাবির কারণ আমি খুঁজে পাই না। এটা তো ঘোষণা করা হয়ে গেছে।

চুক্তিভিত্তিক ক্রিকেটারদের সংখ্যা ও বেতন বাড়ানো নিয়ে যে কথা, আমার জানামতে চুক্তিভিত্তিক ক্রিকেটারের সংখ্যা অনেক বেশি। এখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমরা ৮০ জনকে চুক্তি করে টাকা দিচ্ছি। এরকম তো কেউ করে না। আরও বাড়াবো, দুই তিনশ জন খেলোয়াড় বাড়াবো, আর মাসে মাসে টাকা দিবো! আমরা কী খারাপ দিচ্ছি। মিডিয়াতে টক শো দেখে মনে হচ্ছে আমরা শেষ করে দিলাম ওদের। আমরা কী করেছি? সুযোগ সুবিধা ছাড়া আমরা কিছু করেছি, কেউ বলতে পারবে! আমরা আম্পায়ারদের গত মাসেই বেতন বাড়িয়েছি, গ্রাউন্ডসম্যানদের বেতনও। ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছি। যেগুলো আমরা করেছি সেগুলো তো দাবি হতে পারে না!

আপনারা বলছেন ফ্যাসিলিটি বাড়াতে হবে। জিমনেসিয়াম করলাম, এতগুলো মাঠ আর অ্যাকাডেমি তৈরি করেছি। এতদিন কোনও আন্দোলন না। এখন শুরু হয়ে গেলো! এমন করছে, যেন আমরা কিছুই করছি না। এটার পেছনে অবশ্যই কোনও কারণ আছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন ২৫ থেকে ৩০ হাজার, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার করেছি। এমন ভাব যে কিছুই করছি না। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কী আচরণ চায়। ওরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বাচ্চা নিয়ে খেলে, প্রধানমন্ত্রী ওদের বাচ্চাদের নিয়ে খেলে। আর কেমন ট্রিটমেন্ট চায় ওরা। কেউ বলতে পারবে ওদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। হ্যাঁ, দোষ করলে শাস্তি হয়েছে। এত কিছু করার পরও? কার ভাইকে কে মেরেছে, এসপি না ডিসি। রাতে ফোন করে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে। কাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, কোন খেলোয়াড়কে। বিদেশ থেকে ফোন করেছি থামানোর জন্য। আরেকজনের খালা-মামার জমি দখল করে নিয়েছে, উত্তরায় আমি গিয়ে উদ্ধার করি। মুশফিকের বাবা, মিরাজের খালা- কে কাকে মারছে, আমি সমাধান করি। কী হচ্ছে এগুলো। বিশ্বাস করতে পারছি না। আপনাদের কাছে মনে হতে পারে এগুলো স্বাভাবিক, কিন্তু আমি শকড।

বোর্ড প্রধানের ‘সন্দেহ’

এখানে যে দাবি দাওয়া হয়েছে, সেখানে এমন কিছু নাই যে ওরা জানে না এগুলো আমাদের বললে আমরা সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিবো। বললো না কেন? আপনাদের কাছে দুটি প্রশ্ন- তাদের সঙ্গে এত যোগাযোগ থাকার পরও আমি তো দূরের কথা, আমাদের কাউকে না বলে আপনাদের বললো? কেন আমাদের বললো না সেটা তো জানি। বললে যে আমরা দাবিগুলো মেনে নিবো, তাহলে তো ওদের খেলা বন্ধ করতে হবে না। দ্বিতীয় প্রশ্ন, আমাদের না বললে মিডিয়াকে কেন বললো? এতে কী হলো? সারা বিশ্ব জেনে গেলো, আমাকে তো আইসিসি-এসিসি ও বিভিন্ন বোর্ড থেকে ফোন করা হচ্ছে, লেখালিখি হচ্ছে যে বাংলাদেশের ক্রিকেটে গণ্ডগোল হচ্ছে। এটাই তারা জানাতে চেয়েছিল, তারা সফল হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিরুদ্ধে যেতে।

তারপর কী হলো! প্রথমে সম্মেলন করলো, হঠাৎ করে দাবি দেওয়ার পর যদি না শুনি, কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকে, মনঃপুত না হয় তাহলে আন্দোলন করতে পারতো। কিন্তু তা না। আমাদের কাছে দাবি দেওয়া না দিয়ে, কোনও যোগাযোগ না করে আগে খেলা বন্ধ করে দিলো। তাও আবার কোন সময়। কাল থেকে ফিটনেস ক্যাম্প শুরু হচ্ছে, ২৫ তারিখ থেকে জাতীয় দলের কোচিং। কোচরা আসছে নতুন, আরেকজন আসছেন ড্যানিয়েল ভেট্টরি। কিন্তু তাদের পছন্দ না। ওরা তো আপনাদের বললো কোচের দরকার নাই। দেশি কোচ চায়, হয়তো বিদেশি কোচ চায় না। ওরা যদি কোচও পছন্দ করে নিতে চায় তাহলে কী? কিন্তু প্রত্যেকবার কোচ নিয়োগ দেওয়ার সময় সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করি।

বলতে চাচ্ছি, খেলা বন্ধ করে দিলো কোন সময়। যখন কোচরা আসছে, তারা যেন ক্যাম্পে না যায়। এসব প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটাররা করতে পারে, কিন্তু জাতীয় দল। তাও আবার কোন ট্যুর, ভারত সফর। প্রত্যেকটা বিষয় খেয়াল করতে হবে, এটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ। খেলোয়াড়রা নয়, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আমাকে বলেছে ভারতে একটা সিরিজের ব্যবস্থা করেন। বুঝতে হবে, কোন সফরে বাংলাদেশ যাচ্ছে। আপনারা বলেছিলেন, অন্তত একটা ম্যাচ একদিন খেলান। কিন্তু যেনতেন সিরিজ নয়, এখানে শুরু হচ্ছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। আমি যখন ক্রিকেট বোর্ডে আসি, তখন প্রথম দুই দিনের বোর্ড সভায় বাংলাদেশ আর জিম্বাবুয়েকে টেস্ট থেকে বাদ দেওয়ার চিন্তা করেছিল। কিন্তু আমি অনেক বুঝিয়ে বাংলাদেশকে রেখে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলাতে যাচ্ছি। ঠিক এই সময় ধর্মঘট ডাকা, ক্যাম্পে না যাওয়া- আমাদের বুঝতে বাকি নাই আসলে কী হচ্ছে। ক্রিকেটের উন্নতির কথা বলছে, অথচ উন্নয়নের কোনও লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না।

পূর্বপরিকল্পিত আন্দোলন

যা যা চাইলেই ওরা পাবে, সেগুলোর জন্য আমাদের কাছে আসেনি। এখন যদি বলি ওরা আসছে না কেন? আসলে ওরা আসবেও না। এখন পর্যন্ত আমাদের কেউ কিছু বলেনি। এমনকি, ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করলেও ফোন কেটে দিচ্ছে নয়তো বন্ধ রাখে। এটা আসলে পূর্বপরিকল্পিত। তারা আমাদের না বলে মিডিয়াকে এসব বলেছে, এটার নিশ্চয় কোনও কারণ আছে। আমরা শুনবো কি শুনবো না সেই সুযোগ না দিয়েই তারা খেলা বন্ধ করে দিলো। এসব কিছুই পরিকল্পনার অংশ।

আপনারা সবই জানেন, দেশের মানুষ জানে। আমার তো কম লোকের সঙ্গে কথাবার্তা হয় না, সবাই তো মতামত জানাচ্ছে। যদিও আমার ফেসবুক নাই। এসব শুরু হয়েছিল যেদিন আমাদের এক ডাইরেক্টর গ্রেফতার হয়। পরের দিন থেকে বিসিবির বিরুদ্ধে কথা হচ্ছে। ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে অনেক মিথ্যা কথা ছড়ানো হচ্ছে, এসব নিয়ে আমি উত্তর দিতে পারি। কিন্তু দিবো না। আমি ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে আসছি।

ষড়যন্ত্রের আভাস

আমার ধারণা এখনও বেশির ভাগ খেলোয়াড়রা ক্রিকেটকে ভালোবেসে, দেশকে ভালোবাসে। বেশির ভাগ দেশবাসীরাও ক্রিকেট অনেক ভালোবাসে, আপনাদের অনেকেই ক্রিকেট ভালো বোঝেন, ভালোবাসেন। আমি আপনাদের বলছি, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটা চক্রান্ত চলছে। এটা সবাই বোঝে, এটা সরকার থেকে শুরু করে এমন কেউ নেই যে জানে না। কারা বা কে কে করছে সেটাও আমরা জানি। ওরা প্রথমে ভেবেছিল বিসিবিকে আক্রমণ করে, অন্য ডাইরেক্টদের আক্রমণ করে বাইরে পাঠাবে। আইসিসি থেকে আমাদের নিষিদ্ধ করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে- ছয় মাস বা এক বছর। ওটা যখন পারেনি, তখন বিকল্প হিসেবে এই ভারত সফর বয়কট করার চিন্তা করেছে। কোনোভাবে না যেতে পারলেই তো আইসিসির রিয়্যাকশন আসবে। যেটা তারা চাইলেই পাবে, তারা চাচ্ছে না কেন? কেন সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ ওরা খেলা বন্ধ করলো, ক্যাম্পেও যাবে না বলেছে। অবশ্যই এসবের পেছনে কারণ আছে। এটা ওই যড়যন্ত্রের অংশ।

আমি আরও বলতে বাধ্য হচ্ছে, সবাই যে জেনেশুনে করছে আমার মনে হয় না। হাতে গোনা দুই একজন হতে পারে, বাকিরা তাদের সঙ্গে এসেছে। এখন সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, কারা দেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদের খুঁজে বের করা। বাইরের কারা আছে তাদের আমরা চিনি, তবে দলের ভেতরে কেউ আছে কিনা যারা দেশের ধ্বংস চাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আপনাদের কাছে আমি কিছুদিনের সময় চাচ্ছি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমরা তাদের সামনে আনতে পারবো।

ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসতে রাজি

খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে বলবো- তোমরা যদি খেলা না খেলো, খেলতে না চাও আমার কী করার আছে। খেলবে না। তাতে তাদের লাভটা কী হবে? আমি বুঝতে পারছি না। ক্রিকেটের উন্নয়নের কথা বলছেন, আমরা যে কারো সঙ্গে কথা বলতে রাজি, আপনারা আসেন।

কী পরিমাণ কাজ করা হচ্ছে! খেলার মান, গত বছর চালু করলাম প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগ। আমরা এনসিএলে ক্যামেরা বসিয়েছি সব মাঠে, আমরা তো কোনও অভিযোগ পাইনি। এবার সিসিডিএম বলেছে, আমাদের প্রেসিডেন্টে বলেছে সব জায়গায় আমরা ক্যামেরা বসাবো। কাউকে কোনও ছাড় দেওয়া নয়। এগুলো যখন করছি, তখন এত কথা হচ্ছে কেন। আমার তো মনে হচ্ছে এগুলো কোনও দাবি নয়, আর দাবি যদি হয়েও থাকে তখন আমরা সবকিছু করার পরও কেন সুযোগ না দিয়ে খেলা বন্ধ কীভাবে আগে আসে। না মানলে বলতে পারে যে খেলবো না। এটা একটা চিন্তার বিষয়। কোনওভাবে এটা কাম্য নয়। আমাদের ক্যম্প শুরু হচ্ছে, তারা গেলে ভালো, না গেলে নাই। আমার কিছু বলার নেই। আমাদের সঙ্গে বসতে চাইলে বসতে পারে। আপনাদেরকে, দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করে সম্পূর্ণ ভুল তথ্য দিচ্ছে। জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা এত টাকা পায়, তারপরও বলে তারা কিছু পায় না। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ফি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার করা হলো। আমরা সবকিছুর দিকে নজর দিয়ে উন্নতি করেছি। তারপরও এসব বলে। আগে কোনও কিছু ছিল না, তখন অভিযোগ ছিল না। এই ছিল আমার বক্তব্য, এখন বের করতে হবে আসলে এটার পেছনে কী কারণ আছে।

স্টাফদের বেতন কম! অথচ তাদের কোনও অভিযোগ নেই। ফিফটি পার্সেন্ট বাড়ানো হয়েছে। আর এসবের কারণে খেলা বন্ধ করে দিতে হবে? এটা ষড়যন্ত্রের অংশ। যাই হোক, আমার এসব বোঝা যদি ভুল হয় তাহলে তো আমি খুশিই। এটা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে।’

ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ ফিক্সিং

আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্ট হার ধরলে তো আমরা খেলতামই না। আমি আপনাদের প্রথমে ব্যাকগ্রাউন্ডের কথা বলি। প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা ছিলো। ওটা আমরা সমাধান করেছি। প্রথম বিভাগ থেকে তৃতীয় বিভাগে আমরা ক্যামেরার ব্যবস্থা করেছি। কী করবো? আম্পায়ার ছাড়া খেলাবো? এটাতো রিপোর্ট করতে হয়। কথায় তো হবে না, আমাদের প্রমাণ লাগবে। তারপরও আমরা কী করেছি, সবখানে আমরা ক্যামেরা বসিয়েছি যেন কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আসলে আমরা তা প্রমাণ করতে পারি। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া কিসের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিবো। প্রমাণ না পেলে কিসের ভিত্তিতে নিবো। এখন যখন নানামুখী ব্যবস্থা নিচ্ছি, তখন অভিযোগ আসছে। এর আগে তো কারও কোনও অভিযোগ ছিলো না।

প্লেয়ার্স বাই চয়েজ নিয়ে সমস্যা

ক্লাবগুলোর বড় একটা দাবি ছিল। ওরা বলছিল, যে পরিমাণ খরচ বাড়ছে যে খেলোয়াড়কে ১২/১৫ লাখ করে খেলাচ্ছে, তারাই দ্বিতীয় বছরে দাবি করছে ৬০ লাখ টাকা। এমন হলে তারা টিম চালাতে পারবে না। তাদের দাবির প্রেক্ষিতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আরেকটা ছিল প্লেয়ারদের পেমেন্ট। সব খেলোয়াড় এসে অভিযোগ করতো পেমেন্ট নিয়ে। সেই কারণে আমরা বলেছিলাম ওই বছর প্লেয়ার্স বাই চয়েজের মাধ্যমেই দল বদল হবে। এরপর কেউ কিছু আমাদের বলেনি। এক মাস আগে ইনাম (বিসিবির পরিচালক) আমাকে বলেছিল খেলোয়াড়রা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দল বদল চায়। তখন আমি বলেছিলাম ঠিক আছে করে দাও।  এখন তো আমাদের টাকা দিয়ে দিতে হয়, আদায় হোক আর না হোক। আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। আমার ধারণা এটা করে ক্রিকেটের ভালো হবে না। হাতে গোনা ১২ জন খেলোয়াড় সুবিধা হবে, বাকিরা ক্ষতিগ্রস্তই হবে। তারা যেহেতু চাচ্ছে, আমার কোনও আপত্তি নেই।

এটায় তো কোনও সমস্যা হয়নি ক্লাবগুলোর। আমাদের কাছে তো ক্লাবগুলো কিংবা ক্রিকেটাররা আসেনি। দাবিগুলো কখনও করেনি, আমাদের কাছে খেলোয়াড়রা সব সময়ই বলেছে? কিন্তু এর আগেও তো টাকা পায়নি, ডাহা মিথ্যা। চ্যালেঞ্জ। আমি যা বলি ওপেন বলি। আমি তো এর উত্তর দিলাম। এর আগেরবার টাকা পায়নি। আমরা টাকা পরিশোধ করেছি। এবার আবার প্রিমিয়ার লিগ শুরুর পর আমরা পরিশোধ করবো। কিন্তু আমাদের চেষ্টা তো করতে হবে ক্লাবের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার। নয়তো সব ক্লাবই এখন থেকে টাকা দেবে না। সব বিসিবির দেওয়া লাগবে। আমরা তো ওদেরকে ফেভার করছি। পরবর্তীয় ডিপিএলের আগে টাকা পেলেই তো হলো।

তৃতীয় বিভাগের ম্যাচে চারজন বিতর্কিত আম্পায়ার

আমার তো জানা মতে মাঠে ক্যামেরা বসার কথা। যদি ওরা অভিযোগ করে তাহলে দেখবো। আম্পায়ারদের কী যে সুবিধা দিয়ে রেখেছে আইসিসি, ওদের কিছু বলারই কোনও পথ নেই। যেটা করতে পারি, ওকে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব না দিতে পারি। এখন তো সিস্টেম তৈরি করলাম। এত দিন করিনি, এখন করলাম আর দাবি উঠলো।  

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারাদের চুক্তি

খেলা পারে না। বাজে খেলে, তাদের টাকা দিবো নাকি। আমরা জানি ঘরোয়া ক্রিকেটে কিছু খেলোয়াড় আছে যাদের অবদান আছে। কিন্তু আমরা তাদের জাতীয় দলে নিতে পারছি না, যেমন- তুষার ইমরান। তার কিন্তু টাকা বাড়ানো হয়েছে। আমাদের এখানে ৭৯ জন চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার আছে। ১৮ জন আছে জাতীয় দলের ক্রিকেটার, একশ প্লাস হয়েছে। আমি ২০০ নিতে পারি। কিন্তু তাতে ক্রিকেটের কী উন্নয়ন হবে? যারা ভালো খেলবে তারা আসবে, প্রতিযোগিতা করে আসতে হবে। 

জাতীয় লিগের ম্যাচ ফি কম বাড়া

কত দিনের ব্যবধানে টাকা বাড়ছে, খেয়াল করেন। যদি মনে হয় কম, তাহলে বাড়াবো। এটা বলেনি কেউ কখনও। বাড়েনি এমনতো কোন ঘটনা নয়। ৫ লাখের ওপর তো কোনও খেলোয়াড়কে দিতেই পারি না। সেদিন কতো দিলাম.... ১৫ লাখ না? হুম ১৫ লাখ। দেই না, করি না। এমন একটা আওয়াজ তোলা হলো মার্কেটে। বাইরে থেকে বলছে, তোমরা নাকি দেড় হাজার টাকা দাও, ডলারে কত?  আমি বুঝতে পারছি না কি যাচ্ছে বাইরে দেশে। মানুষজন ওখান থেকে জানতে চায় …ডলার করে তারা বলে, এই দাও তোমরা ক্রিকেটারদের? কী বলবো.. যাই হোক। তারা সফল এই একটা জায়গায়। বাইরে একটা ধারণা দেওয়া যে, আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের টাকা দেই না।

অ্যাকশনে যাওয়া নিয়ে

ওয়েল ডু। এখন যদি আমি বেশি কিছু করতে চাই। আসল কারা কারা আছে বের করতে পারবো না, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে কারা। আস্তে আস্তে সব বের হয়ে আসবে। বাংলাদেশ ছোট জায়গা। প্রত্যেকেই জানে কারা করতে পারে।

জাতীয় ক্রিকেট লিগের তৃতীয় রাউন্ড না খেললে কী ব্যবস্থা?

না গেলে খেলা হবে না। ওগুলো (ব্যবস্থা) পরে। আমি আগে দেখতে চাই কে কে খেলতে যায়, আর কে কে যায় না। ক্যাম্পে কে কে আসে? এগুলো তো আগে জানতে হবে। শুরু না হলে তো বলতে পারছি না। আমি অবশ্যই আশাবাদী ক্যাম্প চলবে, ভারত সিরিজ হবে। আমাদের এখানে বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই ক্রিকেটকে ভালোবাসে এবং ক্রিকেটের উন্নয়ন চায়। ৫ হাজার টাকা বাড়লো কিনা এর জন্য দেশের ক্রিকেটের বারোটা বাজিয়ে দিবে-এটা আমার বিশ্বাস হয় না। দেখি সামনে কী হয়!

ইনডোরে এসি বসানো

ইনডোরে আমরা এসি লাগাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অবকাঠামোর ত্রুটির কারণে সেখানে এসি বসানো সম্ভব হয়নি। আমরা তো চেষ্টা করছি, আস্তে আস্তে। আমাদের মাথায় আছে। সাত বছর আগে তো আরও অনেকেই ক্ষমতায় ছিলো, তারা কী করেছে! আমি তো বলেছি, আমি আপনাদের একটা কথা বলে রাখি, প্রথম মনোযোগ ছিলো ম্যাচ জেতা। কারণ তখন আমাদের হারের সংখ্যা ছিল বেশি। এরপর আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিলাম বিশ্বকাপে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। ওটা শেষ হওয়ার পর আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় আসলাম। এগুলো উন্নতি করার চেষ্টা করছি আমরা।

/আরআই/এফএইচএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
পানিতে ডুবে ভাইবোনসহ ৩ শিশুর মৃত্যু
পানিতে ডুবে ভাইবোনসহ ৩ শিশুর মৃত্যু
‘এমপি হতে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এটা তুলবো, এটুকু অন্যায় করবো-ই’
‘এমপি হতে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এটা তুলবো, এটুকু অন্যায় করবো-ই’
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
সর্বাধিক পঠিত
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা