X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মা স্পোর্টস ভিলা’য় তৈরি সোনার ছেলে

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:১৯আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:৪৩

সোনা জয়ী আল আমিন নেপালের সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে কারাতের কুমি ইভেন্টে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সোনা এনে দেন আল আমিন। সেনাবাহিনীর এই খেলোয়াড়ের বাড়ি রাজশাহীর উত্তর নওদাপাড়া কালুর মোড় এলাকায়। আজ (বুধবার) দুপুরে পরিবারের অনুভূতি জানতে পথেই এই প্রতিবেদক জানতে পারে, সোনা জয়ী আল আমিনের পদকটা প্রাপ্যই ছিল!

কেন? আল আমিনের বাড়িকে ছোটখাটো ক্রীড়াঙ্গন বললে ভুল হবে না। ছোট চাচা শরিফুল ইসলামের হাত ধরে তারা হয়ে উঠেছে ‘ক্রীড়া পরিবার’। বাড়ির নামকরণটাও যথার্থ- ‘মা স্পোর্টস ভিলা’। এবারের এসএ গেমসে এই বাড়ি থেকে আল আমিন একা যাননি, উশু ইভেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন ছোট ভাই মিলন আলীও।

আল আমিনের বাবা বাবর আলীর চার ভাই। সবার ছোট শরিফুলের হাত ধরেই সাফল্যের যাত্রা শুরু এই সোনা জয়ীর। জাতীয় উশু প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করা শরিফুলের প্রচেষ্টায় উশু ও কারাতে মিলিয়ে এই পরিবারের ছয়জন চাকরি করছেন সেনাবাহিনীতে।

এখানে অনুশীলন করেই পথচলা শুরু আল আমিনের ‘মা স্পোর্টস ভিলা’য় প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে বড় একটি ঘর, যেখানে আল আমিন-মিলনদের সঙ্গে স্থানীয় অনেকেই কারাতে ও উশু অনুশীলন করেন। বাড়িতে ট্রফি ও পদকের ছড়াছড়ি। যেখানে-সেখানে পড়ে আছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জেতা শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে সবচেয়ে আলো ছড়াবে নেপাল থেকে আসা সোনার পদকটি। আল আমিনের পরিবারের উচ্ছ্বাসটাও তাই আগের সববারের তুলনায় অনেক বেশি।

মঙ্গলবার সকালে আল আমিন যখন সোনা জেতেন, তখন মাঠে কাজে ব্যস্ত ছিলেন বাবা বাবর আলী। বাড়ি ফিরতেই শোনেন সুসংবাদ। সেই সময়ের অনুভূতি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তিনি ভাগাভাগি করেছেন এভাবে, “বাড়ি ফিরতেই সবাই বলে উঠলো, ‘আমাদের নয়ন ভাই (আল আমিনের ডাক নাম) গোল্ড জিতেছে।’ এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। যার রক্ত-মাংসে খেলাধুলা মিশে গেছে, সেই দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। এর চেয়ে বড় খবর আর কী হতে পারে।”

আনন্দের সঙ্গে আক্ষেপও মিশে থাকলো বাবর আলীর কণ্ঠে, ‘রাজশাহীর ক্রীড়াঙ্গনের কেউ কোনও খোঁজ-খবর কিংবা আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য আসেনি, এমনকি ফোনও দেয়নি।’

বাড়িতে পদকের ছড়াছড়ি সোনা জয়ের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মা শরিফা বেগমের সঙ্গে নেপাল থেকে কথা হয় আল আমিনের। ছেলের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, এমন প্রশ্নে শরিফা বেগম বললেন, “ছেলে আমাকে বলেছে, ‘তোমাদের দোয়ায় তোমার সোনার ছেলে এবার গেমসে সোনার পদক জিতেছে। ৫ ডিসেম্বর সোনার পদক নিয়ে দেশে ফিরে আসব। তোমার ছোট ছেলের জন্যও দোয়া করো।”

বড় ছেলেকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই মা শরিফার, ‘আমি গর্বিত, আমার ছেলে এলাকায় যেমন সবাইকে সম্মান করে, ঠিক সেভাবেই সোনার পদক পেয়ে নেপালে দেশের পতাকা উচুঁ করে ধরেছে। মা হিসেবে এমন সন্তানকে গর্বে ধারণ করে সত্যি আমি গর্বিত ও আনন্দিত।’

শ্রেষ্ঠত্বের স্মারকে ভরপুর ‘মা স্পোর্টস ভিলা’ চাচাতো ভাই রকিবুল ইসলামও একসময় জাতীয় পর্যায়ে উশু খেলতেন। কিন্তু ইনজুরির কারণে বেশিদূর যেতে পারেননি। তবে ক্রীড়া পরিবারের অন্য সদস্যের মাধ্যমে একদিন অলিম্পিক পদক জয়েরও স্বপ্ন দেখেন রকিবুল, ‘আমাদের ভাইয়েরা দেশ-বিদেশে খেলতে গেলে একটা না একটা পদক নিয়ে আসবেই। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আশা করছি, একদিন আমাদের পরিবার থেকেই হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিক থেকে দেশের হয়ে পদক ছিনিয়ে আনবে।’

যার হাত ধরে শুরু হয়েছিল আল আমিনের পথচলা, সেই শরিফুলও ভাতিজার সাফল্যে গর্বিত। এই জাতীয় উশু প্রশিক্ষকের বক্তব্য, ‘ও ছোট থেকেই খুব পরিশ্রমী ও জেদি ছিল। তাই সাফল্য পেতে ঝুঁকি নিতে কখনও পিছ পা হতো না। খুব ভালো লাগছে। নেপালে পদক পাওয়ার পর জাতীয় সঙ্গীত বেজেছে ও লাল-সবুজের পতাকা উঠেছে— একজন ওস্তাদ হিসেবে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে।’

এরপর শোনালেন ক্রীড়া পরিবার হয়ে ওঠার গল্প, ‘ছোট থেকেই আমি আত্মরক্ষার জন্য মার্শাল আর্ট পছন্দ করতাম। একসময় আমার দেখাদেখি ভাতিজা-ভাতিজিরাও ট্রেনিং করা শুরু করলো। কিন্তু বড় ভাইদের দ্বিমত ছিল। এগুলো শিখে কী হবে- এই ধরনের প্রশ্ন তাদের মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে। কিন্তু যখন তারা দেখলো খেলার মাধ্যমে সবাই চাকরি পাচ্ছে, তখন থেকে তারাও উৎসাহ দিতে থাকতো। এভাবেই আমাদের ক্রীড়া পরিবার গড়ে ওঠে।’

ট্রফিকেসেও সাফল্যের ছাপ রাজশাহীর স্থানীয় কারাতে কোচ আহসান কবির বাবু জানিয়েছেন, আল আমিন ছাড়াও রাজশাহীর আরও কয়েকজন খেলোয়াড়ের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে। যাদের পথ তৈরি করে দিয়েছেন আল-আমিন। আহসান কবিরের বক্তব্য, ‘আল আমিন সহ রাজশাহীর চার ছেলের মধ্যে সম্ভাবনা ছিল। তারা খুবই সাহসী। তাদের টেকনিক দেখে আমরাই আলোচনা করতাম, এরাই একদিন দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে। আল আমিন রাজশাহীর ছেলে হিসেবে সে পথটা দেখালো।’

/কেআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা