করোনাভাইরাস মহামারি সারাবিশ্বে তার করাল থাবা বাড়ানোর শুরু থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল অর্থনীতির এক মহামন্দা। এটি এখন আর আশঙ্কার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্ব অর্থনীতি বিশাল মন্দার মধ্যে পড়েই গেছে। খেলার মাঠেও করোনা ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের ভবিষ্যৎ বিপন্ন। ফুটবলের একটি পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের একটি নির্বাচিত একাদশই এই করোনা সংকটে ১.৬ বিলিয়ন অর্থাৎ ১৬০ কোটি পাউন্ড মূল্য হারিয়েছে।
একাদশে নির্বাচিত খেলোয়াড়েরা হলেন রাহিম স্টার্লিং (ম্যানচেস্টার সিটি), কেভিন ডি ব্রুইনা (সিটি), হ্যারি কেন (টটেনহাম), মোহামেদ সালাহ ( লিভারপুল), সাদিও মানে (লিভারপুল), ট্রেন্ট-আলেক্সান্ডার আরনল্ড (লিভারপুল), এনগোলো কান্তে (চেলসি), ভার্জিল ফন ডাইক (লিভারপুল), বার্নার্ডো সিলভা (সিটি), লেরয় সানে (সিটি) ও পল পগবা (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)।
সাইট ব্যবহারকারীদের অনুমিত হিসাব এবং নানারকম উপাত্ত নিয়ে ট্রান্সফারমার্কট নামের ওয়েবসাইটটি ফুটবলারদের মূল্যমান নির্ধারণ করেছে। ফুটবলারদের ব্যাপক মূল্যহ্রাসের ভবিষ্যদ্বাণী করেছে সাইটটি, আর দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ২২৫ মিলিয়ন আর্থিক ক্ষতির শিকার হবে নাকি ম্যানচেস্টার সিটি। ‘শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। অনেক ক্লাবই আর্থিক অস্বচ্ছলতায় ভুগবে, সঙ্গে নানা অনিশ্চয়তায় দলবদল পরিকল্পনা পড়তে পারে মুখ থুবড়ে’- বলেছেন সাইটটির প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিয়াস সেইডেল।
ট্রান্সফারমার্কট তাদের নানা উপাত্তের মধ্যে ফুটবলারদের বয়স, চুক্তির মেয়াদ ও আগের ট্রান্সফার ফি বিবেচনা করেছে। এরপর সাইট ব্যবহারকারী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ফুটবলারদের একটি অনুমিত মূল্যমান দাঁড় করিয়েছে। করোনাভাইরাস যেহেতু ক্লাবগুলোর রাজস্ব কমিয়ে দেবে, তাতে অনেক ক্লাবের দললবদল পরিকল্পনাও যাবে থমকে। বড় আঘাতটা আসতে পারে ফুটবলারদের ট্রান্সফার ফি-তে। ১৯৯৮ সালের আগে যেসব ফুটবলারের জন্ম, তারা মূল্য হারাবে শতকরা ২০ ভাগ। আর ১৯৯৮ সালের পরে জন্ম নেওয়া ফুটবলারদের মূল্য কমবে ১০ ভাগ। এর কারণ ২২ বা তার চেয়ে কম বয়সী ফুটবলারদের মূল্য তাদের চেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি। সুতরাং যে দলে ২২ বছরের বেশি বয়সী খেলোয়াড় বেশি, সেই ক্লাব মূল্যও হারাবে বেশি।
ট্রান্সফারমার্কটের নিরীক্ষা অনুযায়ী রাহিম স্টার্লিংয়ের মূল্য সবচেয়ে বেশি ২৯ মিলিয়ন কমে দাঁড়াবে ১১৫ মিলিয়ন পাউন্ডে। ডি ব্রুইনা, কেন, সালাহ ও মানের মূল্য ২৭ মিলিয়ন পাউন্ড করে কমে দাঁড়াবে ১০৮ মিলিয়ন পাউন্ডে। আরনল্ডের মূল্য ১০ মিলিয়ন কমে হবে ৮৯ মিলিয়ন পাউন্ড। কান্তে, ফন ডাইক, সিলভা, সানে ও পগবা মূল্য হারাবেন ১৮ মিলিয়ন পাউন্ড করে এবং এদের প্রত্যেকেরই মূল্য হবে ৭২ মিলিয়ন পাউন্ড।
দল হিসেবে ১১০০ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে সবচেয়ে বেশি ২২৪ মিলিয়ন পাউন্ড হারিয়ে সিটির স্কোয়াডের মূল্য দাঁড়াবে ৯১৭ মিলিয়ন পাউন্ড। প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে থাকা লিভারপুল তাদের স্কোয়াডের মূল্য হারাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
ফুটবলার এবং ক্লাবের মূল্য কমে যাওয়ার এই ধরনটা আসলে গোটা বিশ্বেরই পেশাদার ক্লাব ফুটবলই অনুসরণ করবে। ট্রান্সফারমার্কটের প্রতিষ্ঠাতা সেইডেলের বিশ্বাস হয় না যে ফুটবলারদের টান্সফার ফি নিকট ভবিষ্যতে আগের মতো বাড়বে, ‘এই মুহূর্ত এটা কল্পনা করাও কঠিন যে আগের বছরগুলোর মতো ফুটবলারদের ট্রান্সফার ফি নিকট ভবিষ্যতে বাড়বে।’
