দেশীয় ই-কমার্সের সুষ্ঠু বিকাশ, টিকে থাকা এবং শিল্প হয়ে উঠতে নেট নিউট্রালিটি (নিরপেক্ষতা) ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ চেয়েছেন এখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। দেশের সম্ভাবনাময় ই-কমার্স খাতের উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ ও সম্মিলিতভাবে খাতটিকে এগিয়ে নিতে এখনই টেলিকম কোম্পানির আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানানা তারা। শনিবার রাজধানীর কাওরান বাজারের বেসিস মিলনায়তনে বেসিস ও বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্স আয়োজিত দেশীয় ই-কমার্স শিল্পের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা: নেট নিউট্রালিটি ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এমন দাবি জানান তারা।
বেসিস সভাপতি মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, সহ-সভাপতি এম রাশিদুল হাসান, পরিচালক উত্তম কুমার পাল, মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল, বেসিসের ডিজিটাল কমার্স সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দা কামরুন আহমেদ, আজকের ডিলের পরিচালক ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর, ব্যারিস্টার এবিএম হামিদুল মিসবাহ, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মাদ কামাল, বিকাশের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদির, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক আলী কামরান আল জাহিদসহ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্টেকহোল্ডাররা।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশে ই-কমার্সের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ৩৫০ কোটি টাকা। ই-কমার্স কোম্পানিসহ এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ধরণের ৫ হাজার উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতে ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশের খুচরা বাজারগুলোর ২ থেকে ৩ শতাংশ অনলাইনে আনা সম্ভব হলে অনলাইন বাজারের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। যেখানে অন্তত ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
বক্তারা দুঃখ করে বলেন, সম্ভাবনাময় এই খাতে ইতিমধ্যে বড় বড় কোম্পানি বিশেষ করে টেলিকম অপারেটরের সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু হয়েছে। তারা টেলিকম সেবাদানের অনুমোদন পেলেও এই খাতে ব্যবসা শুরু করছে, যা দেশের তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ এসব কোম্পানির অত্যধিক বিনিয়োগের ফলে বাজারে একটি অসম প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে। তারা নিজেদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সম্ভাব্য ভোক্তাদের বিনামূল্যে সাইট ভিজিট করতে দিচ্ছে। এছাড়া লোভনীয় নানা অফার তো থাকছেই। তাদের উপস্থিতির ফলে দেশীয় কোম্পানিগুলোর টিকে থাকা দায় হবে।
বক্তারা আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এমনকি পার্শ্ববতী দেশ ভারতে এ ধরণের সুযোগ নেই। কোনও টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া, বিদেশি ই-কমার্স সাইটগুলো দেশীয় পণ্য বিক্রি করতে পারবে না এমন নানা উদাহরণ রয়েছে। যথাযথ গাইডলাইন না থাকার কারণে টেলিকম অপারেটররা সরাসরি বিনিয়োগ করে বাজারকে অস্থির করে তুলছে। দেশের উদ্যোক্তাদের রক্ষা করতে ও সম্ভাবনাময় খাতকে টিকিয়ে রাখতে যথাযথ আইন বা নীতিমালা করে টেলিকম কোম্পানিকে দেশের ই-কমার্স বাজারে প্রবেশে প্রতিহত করতে হবে। এছাড়া কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হলে দেশীয় কোম্পানির সঙ্গে অন্তত ৫০ শতাংশ শেয়ারে কাজ করতে পারবে।
দেশে ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট না থাকায় টেলিকম অপারেটররা এ ধরনের সুযোগ নিচ্ছে বলেও বক্তারা অভিযোগ করেন। এই আইন থাকলে ডাটা (ইন্টারনেট) নিয়ে যেকেউ কেকোনও ধরনের কাজে ব্যবহার করতে পারত না। বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এ ধরনের অসম প্রতিযোগিতা শুরু হলে টেলিকম অপারেটরগুলো তাদেরগুলো ছাড়া বাকি ই-কমার্সগুলোর (দেশীয়) গতি ধীর করে দিতে পারে, ব্লকও করে দিতে পারে। তারা ডাটা ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গ্রাহকের অবস্থান, রূচি, চাহিদা আগে থেকেই নিরূপণ করে বাজারে একটি অসাম্য অবস্থা তৈরি করতে পারে যা দেশীয় ই-কমার্সের জন্য হুমকিস্বরূপ। এজন্য তারা ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ –এরও দাবি জানান। এজন্য ই-কমার্স নীতিমালা ও গাইডলাইন থাকা প্রয়োজন এবং তা প্রণয়নে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণেরও দাবি করেন।
গোলটেবিল বৈঠক থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি), সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি দফতরগুলোতে বৈঠকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে খসড়া নীতিমালা প্রদান করা হবে বলেও বেসিস ও বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
/এইচএএইচ/
অারও পড়তে পারেন: রাউটার দিয়ে নজরদারি!
