X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কো-ওয়ার্কিং স্পেস: অন্যের অফিসে নিজের ঠিকানা

হিটলার এ. হালিম
১১ এপ্রিল ২০২০, ১৩:০০আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৫৪

 

নতুন ধরনের ব্যবসার জন্য নিজের অসাধারণ একটা আইডিয়া আছে, অল্প টাকাও আছে কিংবা নেই। তবে একটা জায়গা দরকার, যেখানে বসে আইডিয়াকে ব্যবসায়ে বা নতুন উদ্যোগে রূপ দেওয়া যাবে। কিন্তু বাসা- বাড়িতে বসে সেটা করলে তো সংশ্লিষ্ট খাতের লোকজনকে দেখানো যাবে না, বলাও না। সেজন্য প্রয়োজন যুতসই একটা জায়গা যেখানে সব আছে— চেয়ার টেবিল, ইন্টারনেট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, মানে একটা অফিসে যা থাকে আরকি। এমন একটা অফিসে গিয়ে কাজ করা, আর মাস গেলে অফিসিয়াল সুবিধা নেওয়ার বিনিময়ে সার্ভিস চার্জ প্রদান করা। এই যে অন্যের অফিসটাকে নিজের অফিসের মতো ব্যবহার করার সুবিধা, এরই নাম হলো কো-ওয়ার্কিং স্পেস। এ যেন অন্যের অফিসে নিজের একটা ঠিকানা খুঁজে নেওয়া।

কিছুদিন হলো দেশে এই কো-ওয়ার্কিং স্পেস বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি দুই উদ্যোগেই কো-ওয়ার্কিং স্পেস চালু হয়েছে। তবে বেসরকারি উদ্যোগটা প্রথমে নেওয়া হয়েছে। কিছুদিন হলো চালু হয়েছে সরকারি উদ্যোগে কো-ওয়ার্কিং স্পেস। এরইমধ্যে একাধিক উদ্যোগ (স্টার্টআপ) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশের সবচেয়ে বড় কো-ওয়ার্কিং স্পেস হলো রাজধানীর গুলশানের দুই নম্বরে অবস্থিত ডেভোটেক। অন্যদিকে কনটেন্ট নির্মাতা ও অ্যাপস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমসিসি লিমিটেডও কো-ওয়ার্কিং স্পেস সেবা চালু করেছে। এছাড়া রয়েছে হাব ঢাকা, ওয়ার্ক স্টেশন-২১, কো-স্পেস নামের কো-ওয়ার্কিং স্পেস।

এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘সিলিকনভিত্তিক অনেক স্টার্টআপের যাত্রা শুরু হয়েছে কো-ওয়ার্কিং স্পেসে। বলা যেতে পারে উবারের কথা। সেইসব উদাহরণকে সামনে রেখে আমাদের দেশেও শুরু করেছি কো-ওয়ার্কিং স্পেস সংস্কৃতি। দেশে এটার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ২০১৬ সালে। তবে ২০১৪-১৫ সালেও এটার অস্তিত্ব ছিল।’ প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের অনেকগুলো সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে স্টার্টআপদের জন্য রয়েছে কো-ওয়ার্কিং স্পেস। নতুন নতুন স্টার্টআপগুলো প্রক্রিয়া মেনে এখানে যুক্ত হতে পারে। তিনি জানান, দেশে বর্তমানে পাঁচ হাজারের বেশি স্টার্টআপ রয়েছে।

সেবা এক্সওয়াইজেড

পলক বলেন, ‘এখন প্রতিযোগিতার সময় নয়, সময় এখন সমন্বয়ের। সবকিছু সমন্বয় করে আমাদের চলতে হবে। সবকিছু এখন শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে চলে আসছে। আর সেখান থেকেই এসেছে কো-ওয়ার্কিং স্পেস ধারণা। দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান এরইমধ্যে সফল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, যাদের শুরুটা হয়েছিল কো-ওয়ার্কিং স্পেসে। বেসরকারিভাবে তৈরি হওয়া কো-ওয়ার্কিং স্পেসগুলোর উদ্যোক্তাদের তিনি সাধুবাদ জানান। 

স্টার্টআপদের সহযোগিতার জন্য আই্সিটি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ’কে লিমিটেড কোম্পানি করা হয়েছে। এরইমধ্যে কোম্পানির একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, কোম্পানি করার ফলে এখন এটাকে নিয়ে আরও বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি স্টার্টআপদের এই ঠিকানায় (www.startupbangladesh.gov.bd) যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছেন।

ডেভোটেক টেকনোলজি পার্ক

 এমসিসি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এস এম আশ্রাফ আবীর জানান, তার প্রতিষ্ঠানে স্টার্টআপদের (নতুন ব্যবসায় উদ্যোগ) জন্য এখনও এই সুবিধা চালু আছে। টেবিল চেয়ারসহ অফিস করার জন্য যা যা প্রয়োজন সবই আছে তাদের কলেজগেটের অফিসে। যে কেউ চাইলে সেই সুযোগ নিতে পারেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকটি স্টার্টআপ একেবারে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে খুব ভালো করছে প্রেনিউর ল্যাব এবং ফ্লো-ডিজিটাল। আশাকরি, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে এমন প্রতিষ্ঠান আরও বের হবে।’

কো-ওয়ার্কিং স্পেস ‘কো-স্পেস’ কিছুদিন হলো চালু হয়েছে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে। ৬ হাজার ২০০ বর্গফুটের এই অফিসে ধারণক্ষমতা ১৫০ জনের (১৫০টি সিট অর্থাৎ এখানে ১৫০ জন নিজেদের অফিস করতে পারেন)। বর্তমানে ১৭টি স্টার্টআপ এখানে কাজ করছে বলে জানা গেছে, যাদের বেশির ভাগই বিদেশি কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ ইবনে ওয়াহাব বলেন, ‘আমাদের যাত্রা সবে শুরু হয়েছে। ভালো সাড়া পাচ্ছি।’ তিনি জানালেন, দেশে এখনও কো-ওয়ার্কিং স্পেস বিষয়ে কোনও নীতিমালা নেই। নেই কোনও গাইডলাইন। এটা থাকা দরকার। তিনি আরও জানান, সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, ফ্রিল্যান্সার, ফ্যাশন ডিজাইনার, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এ দেশীয় অফিসে যাদের এক বা দুইজন কর্মী আছে, মূলত এসব স্পেস তাদের কাছে আকর্ষণীয়।

মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশনস

কো-ওয়ার্কিং স্পেসে নিজেদের স্টার্টআপ শুরু করে বর্তমানে সফল একটি প্রতিষ্ঠান— সেবা ডট এক্সওয়াইজেড। শুরুর পর থেকে (২০১৭ সালের ডিসেম্বরে) প্রায় দুই বছর রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরের ডেভোটেকের কো-ওয়ার্কিং স্পেসে প্রতিষ্ঠানটি অফিস চালু করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। বর্তমানে বনানীতে বড় অফিসে সেবা ডট এক্সওয়াইজেড শিফট করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলমুল হক সজীব বলেন, ‘আমাদের আইডিয়া ছিল। কিন্তু স্টার্টআপ শুরু করতে গেলে যেসব দরকার হতো, যেমন- ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল, অফিস এসব কিছু আমাদের ছিল না। সিড অবস্থায় যে ফান্ড ছিল তা দিয়ে আমরা সেবা চালু করি ডেভোটেক অফিসে। অফিস ভাড়া নেওয়া, অগ্রীম দেওয়া, ফার্নিচার কেনা, ইউটিলিটি বিল, ইন্টারনেট সংযোগসহ আরও যেসব কাজ থাকে অফিস সেটআপ করতে গেলে লাগে, তা আমাদের কিছুই করতে হয়নি। আমরা রেডি অফিসে উঠে কাজ শুরু করেছি। ক্লায়েন্টরা দেখেছেন আমাদের অফিস গুলশানের মতো জায়গায়, লোকেশন ভালো। ফলে আমাদের সম্পর্কে শুরুতেই একটা ইতিবাচক ধারণা ক্লায়েন্টরা করেছেন— যা আমাদের ব্যবসা বড় করতে সহায়তা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাস শেষে আমাদের ভাড়া গুনতে হয়নি। আমরা সিট অনুযায়ী ‘পে’ করেছি ডেভোটেককে। কো-ওয়ার্কিং স্পেসে বড়, ছোট সব ধরনের মিটিং রুমের আয়োজন থাকে। ফলে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি কখনও।’

কো-ওয়ার্কিং স্পেস

সরকারের নিজেরও এমন উদ্যোগ রয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) আইডিয়া প্রকল্পের অধীনে রয়েছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ নামের একটি উদ্যোগ। এটি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে অবস্থিত। এখানে রয়েছে ৫৩টি সিট। আইটিভিত্তিক স্টার্টআপরা এখানে সিটের জন্য আবেদন করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট কমিটি সেই আবেদন যাচাই-বাছাই করে যোগ্য আবেদনকারীর জন্য সিট দিতে সুপারিশ করেন। সাধারণত ছয় মাসের জন্য এখানে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যদি কারও সময় বেশি প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা হয়— আদৌ তাদের আরও সময় প্রয়োজন কিনা। প্রয়োজন হলেই সেই মতে সময় বাড়ানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এখানে এখন ৫০টির মতো সিট পূর্ণ হয়ে আছে। নির্দিষ্ট সময় পর পর আবেদনকারীদের আবেদনের ভিত্তিতে এখানে স্টার্টআপগুলোকে জায়গা দেওয়া হয়। মূলত একটি প্রতিষ্ঠানের ইনকিউবেশন অবস্থা অবধি এখানে অফিস করার জায়গা দেওয়া হয়।

রাজধানীর কাওরানবাজারের জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে শতাধিক স্টার্টআপ কাজ করছে। বিভিন্ন স্টার্টআপ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের এখানে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয় উপহার হিসেবে। যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ৫০টি স্টার্টআপ কাজ করছে। রাজশাহীতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চালু হয় বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক। এই পার্কে রয়েছে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন ও ট্রেনিং সেন্টার। এখানে শুধু স্টার্টআপের জন্যই বরাদ্দ রয়েছে একটি ফ্লোর। এরইমধ্যে ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন