X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘করোনা একদিক দিয়ে আমার জন্য আশীর্বাদ’

হিটলার এ. হালিম
০২ নভেম্বর ২০২০, ১৫:১১আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২০, ১৫:১৭

সানজিদা খন্দকার ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে নারীদের জন্য সহজ করতে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘দ্য টু আওয়ার জব’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। যেখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অনেক নারী নিবন্ধন করেছেন। ঘরে বসে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে করা সম্ভব এমন কাজ রয়েছে সাইটে। যেকোনও প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগও দিতে পারে বিভিন্ন কাজের জন্য। তবে এটি ফুল টাইম নয়, পার্ট টাইম কাজ। এখানে এন্টারপ্রাইজ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কনটেন্ট লেখা, লিগ্যাল সার্ভিস, লোগো ডিজাইন, মার্কেটিংসহ বিভিন্ন সেবা দিচ্ছে দ্য টু আওয়ার জব। এসব নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী সানজিদা খন্দকার। তিনি বলেন, আমাদের সাইটে এখন রাইটার, ডিজাইনার থেকে শুরু করে ইয়োগা ট্রেইনার, ডায়েটিশিয়ান পর্যন্ত আছেন। বিস্তারিত জানিয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনকে।  

নামটা দ্য টু আওয়ার জব কেন?

সানজিদা খন্দকার: এই নাম দেওয়ার পেছনে একটা গল্প আছে। আমি ট্রান্সকমের ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ২০১১ সালে আমার প্রথম বেবির জন্ম, তখন আমি চাকরিটা ছেড়ে দিই। আমার প্ল্যান ছিল পরে আবার চাকরিতে ফিরবো। তার দু’বছরের মাথায় আমার সেকেন্ড বেবি হয়। সব মিলিয়ে তিন বছরের একটা গ্যাপ হয়ে যায়। তখন চিন্তা করলাম  নয়টা-পাঁচটা অফিস করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এখন এমন একটি চাকরি বেছে নিতে হবে, যা আমার জন্য উপযোগী। আমি বিবিএ পড়েছি। অলওয়েজ ড্রিম ছিল ভালো একটি করপোরেট জব করবো। সেই ভাবনা থেকে ওয়ার্কিং আওয়ার কম হবে কিন্তু তা হতে হবে পেশাদার, যা বাসায় বসেই করা যাবে, এমন কাজ। তখন গুগলে সার্চ করলাম দুই তিন ঘণ্টার জন্য কোনও জব আছে কিনা। মনে হয়েছিলো, গুগলে যেহেতু সবই পাওয়া যায়, দেখি খুঁজে। দেখলাম টু আওয়ারের কোনও জব গুগলে নেই। তখন খুব জেদ হলো, এটা নেই তো কি হয়েছে- এটা তৈরি করেই আমি কাজ করবো। সেই থেকেই নামটা হয়ে গেলো ‘দ্য টু আওয়ার জব।’

টু আওয়ার জব আসলে কি?

সানজিদা খন্দকার: যদি এভাবে বলি, এখনকার মেয়েরা অনেকেই শিক্ষিত। কেউ আর্কিটেকচার পড়ে এসেছে, কেউ ইংরেজি, কেউ ফিজিক্সে পড়াশোনা করেছে। কিন্তু বিবাহিত, চাকরি বা ব্যবসা করছে না। এরা যদি কাজ করতে পারতো। বাচ্চা হওয়ার পরে অনেকেই মনে করেন, আমি একজন ভালো আর্কিটেক্ট ছিলাম, করপোরেট জব করতাম। এখন বেবি হওয়ার পরে বসে আছি। এসব ভেবে আমার এবং সবার কথা মাথায় রেখে গড়ে তুলি দ্য টু আওয়ার জব। এখানে ঘরে বসে কাজ করে সব ধরনের ভার্চুয়াল ডেলিভারি করা সম্ভব

এটার যে একটা মার্কেট আছে, এটা কিভাবে বুঝলেন?

সানজিদা খন্দকার: প্রথমত, বলতে পারেন আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা থেকে। মার্কেটকে দেখে বোঝার একটা বিষয় আছে। দ্বিতীয়ত, আমরা একটা গবেষণা করেছিলাম, এই গবেষণাটা ছিল ঘরে বসে থাকা মায়েদের নিয়ে। প্রথমে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডদের এই কাজে আমি হায়ার করেছিলাম। তাদের কাছে  প্রশ্ন পাঠিয়ে দেওয়া হলো। পরে আরও সাড়ে ৩০০ মেয়ের কাছে এই প্রশ্নগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ জরিপে দেখা গেল, এদের মধ্যে অনেকেই আছে টুকটাক কাজ করছেন। এর মাধ্যমে ওর মাধ্যমে কাজ করছেন। জরিপে দেখা গেছে তারা টুকিটাকি সবার অনুরোধে কাজ করছেন। যেহেতু আত্মীয় স্বজন -তাই পেমেন্ট পাচ্ছে না। এটাই যদি প্রফেশনালি করেন তাহলে তিনি আয় করতে পারবেন। ছোট ও মধ্যম মানের খুচরা জবগুলো (কাজ) করোনার আগেই বাড়ছিল, করোনার সময় আরও বেশি বেড়ে গেছে।  

সানজিদা খন্দকার ও দ্য টু আওয়ার জব এধরনের মার্কেট আসলে রেডি থাকে না, মানুষ বুঝতেও চায় না। বোঝাতে অনেক সময় লাগে। কিভাবে করলেন?

সানজিদা খন্দকার:  শুরুতে আমরা দুইটা চ্যালেঞ্জে পড়েছি।  একটা হচ্ছে, দূর থেকে কাজ করলে সেটা ভালো হতে পারে। যাদেরকে নিয়ে আমরা কাজ করি তারাতো আবার মেয়ে, আবার করপোরেট ড্রপ আউট। পেশাগত কারণে একটা প্রতিষ্ঠানে যখন ছেলে মেয়ে কাজ করে, তখন মেয়েরা একটু কম সুযোগ পায়, ছেলেরা একটু বেশি সুযোগ পায়। সেই কাজগুলো যে ঘরে বসে করছেন তিনি কিন্তু মা। অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন তারা। এটা বিশ্বাস করাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। সেই জায়গাতে মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করাতে অনেক কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু করোনার সময়ে আমাদের এগুলো আরও সহজ করে দিয়েছে। মানুষ ভার্চুয়াল ওয়ার্কপ্লেস এই বিষয়টি মেনে নিয়েছে। দূরে থেকেও করা যায় এবং অবশ্যই সেটা সম্ভব। করোনা একদিক দিয়ে আমার জন্য আশীর্বাদ। আরেকটা বিষয়, ভার্চুয়াল ওয়ার্ক প্লেস বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম- যেটাতে কিন্তু পুরুষ মহিলা এই জেন্ডার বিষয়টি থাকে না। এটা খুবই ইতিবাচক দিক।  

টু আওয়ার জব- আসলেই মানুষ কি দুই ঘন্টা কাজ করে?

সানজিদা খন্দকার: আসলে; মানুষ বলে না- দাঁড়াও তোমার সাথে দুইটা কথা আছে। এরকম একটা জিনিস মাথায় নিয়ে আমাদের শুরু। যখন আমার বন্ধু বা বিভিন্ন মায়েদের ওপর জরিপ করেছি তখন কিন্তু সবাই দুই-তিন ঘণ্টা জবের কথাই বলেছে। সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে- এই জবগুলোর কথা বলত। এখান থেকে আমাদের নামটা পিক করা।

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটা মেয়ের পক্ষে এতগুলো মানুষের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং করা। যেটা একটা ছেলের জন্য সহজ, মেযের জন্য মোটেই সহজ নয়। বিশেষ করে বিবাহিত একটা মেয়ের জন্য এতো সুযোগই নেই। বাড়তি অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।  তবে আমি যেটা মনে করি নিজেকে খুব শক্ত করে ধরে রাখা দরকার।  নিজে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি, সেই উদ্দেশ্যের দিকেই মনোযোগী থাকা দরকার।

উদ্যোক্তা হলেন কেন?

সানজিদা খন্দকার: আসলে উদ্যোক্তা কোনও পরিকল্পনা করে হইনি।  বাই চান্সে হয়ে যাওয়া আরকি। প্রথমে আমার পরিকল্পনা ছিল একটা ভালো করপোরেট অফিসে চাকরি করব, সেখান থেকে উন্নতি করব। কিন্তু এই কাজটা যখন আমি শুরু করি তখন জানতাম না শেষ পর্যন্ত এটি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে। বলতে পারেন অনেকটা জেদ থেকে শুরু করা। শুরু করেছি, শেষ করবো- এই থেকেই আমার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা।

চাকরি কি উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কোনও সাহায্য করেছে?

সানজিদা খন্দকার: অবশ্যই, অনেক সাহায্য করেছে। যেকোনও পরিস্থিতি হ্যান্ডেলিং করতে পারা। আমার অভিজ্ঞতাটা ছিলো মার্কেটিং বেজড। কারণ একটা প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে আমি ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়া করাবো এটা আমার জন্য সহজ ছিল। কিন্তু বাকি কাজগুলো সহজ ছিলো না। এজন্য যে কমিউনিটির সঙ্গে কাজ করা, একটি স্টার্টআপকে কিভাবে শুরু থেকে উঠিয়ে আনা, এ পর্যন্ত নিয়ে আসা; তবে এটা আমার একার কমিটমেন্ট আমি বলবো না। আমার সঙ্গে যারা ছিল, আমার মেন্টর যারা ছিলেন, গুরুজন যারা ছিলেন তারা আমাকে অনেক জায়গায় সহযোগিতা করেছেন। 

আমাদের দেশে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা কম। সেখান থেকে আপনি কিভাবে উঠে এলেন। চ্যালেঞ্জগুলো কি ছিল?

সানজিদা খন্দকার:  আমি যখন কাজ শুরু করি আমার কাছে দুটো বিকল্প ছিল। কারণ আমার বাচ্চারা অনেক ছোট।  যে কারণে ফুলটাইম তো আমি আমার এই কাজে দিতে পারছিলাম না।  যতটুকু সময় আমার ছিলো, হয় কাজ করতে হবে; না হয় ফান্ডের পিছনে দৌঁড়াতে হবে।  এই কারণে প্রথমে আমি ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলির মধ্যে প্রথম আমার কাছের একজনকে বোঝাতে সক্ষম হই। ফ্যামিলি আমাকে অনেক বড় সাপোর্ট দিয়েছে। ফান্ডিং পাওয়ার পরে প্রথম চ্যালেঞ্জটা পার হয়। এরপর ভাগ্যক্রমে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভাই আমাদের পাশে ছিলেন। যে কারণে রাস্তাটা অনেক সহজ হয়ে গেছে।

এরপর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটা মেয়ের পক্ষে এতগুলো মানুষের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং করা। যেটা একটা ছেলের জন্য সহজ, মেযের জন্য মোটেই সহজ নয়। বিশেষ করে বিবাহিত একটা মেয়ের জন্য এতো সুযোগই নেই। বাড়তি অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।  তবে আমি যেটা মনে করি নিজেকে খুব শক্ত করে ধরে রাখা দরকার।  নিজে যে উদ্দেশ্য নিয়ে আসছি, সেই উদ্দেশ্যের দিকেই মনোযোগী থাকা দরকার। যাওয়ার পথে অনেক কিছুই দেখা কিন্তু যাবে সেদিকে না তাকিয়ে সোজা গন্তব্যে চলে যাওয়াই উত্তম। যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমি এগিয়েছি সেটার পেছনেই আমি থাকবো। এটাই দরকার। মেয়েরা খুব সহজে ভেঙ্গে পড়ে।  সেই সময় তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আসলেই একজন লোক দরকার।

টু আওয়ার জবের প্রধান নির্বাহী সানজিদা খন্দকার

প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ কেমন?

সানজিদা খন্দকার:  প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ অনেক কম।  তবে আগের চেয়ে অনেক ভালো।  ডাক্তার হওয়াটা মেয়েদের জন্য ভালো, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছেলেদের জন্য, আমাদের দেশে এই পেশাগত শ্রেণিবিন্যাসটা আছে।  সব দিক থেকে দেখলে বোঝা যায় যে, আইটিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ কম।প্রযুক্তিতে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের ঝোঁক অনেক বেশি। তবে এখন আমি বলবো, আগের থেকে অনেক নারী এগিয়ে এসেছেন প্রযুক্তিতে। মেয়ে মানে যে শিক্ষক বা ডাক্তার হবে এই জায়গা থেকে অভিভাবকরা অনেকটা সরে এসেছেন। একটি মেয়ে কিন্তু খুব ভালো একজন আইটি স্পেশালিস্টও হতে পারে।

যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজটি শুরু করেছেন সেটি কেমন করছেন?

সানজিদা খন্দকার: শুরুর দিকে বেশ চ্যালেঞ্জ ছিল। শুরুটা আমাদের অনেক হতাশায় গেছে। সেটা ছিল ২০১৯ সাল। কিন্তু এখন আমাদের চিত্র বদলে গেছে। গ্রোথটাটা খুব ভালো। বলা চলে এখন পুরো মার্কেট বা ওয়ার্ল্ড’র জন্য আমরা প্রস্তুত।

শ্রুতি লিখন: রাসেল হাওলাদার

 

 

 

/এইচএএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো