X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনিয়ম রোধে ‘হস্তক্ষেপ’ করবে বিটিআরসি

হিটলার এ. হালিম
০৮ এপ্রিল ২০১৬, ০৯:৪৮আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০১৬, ১০:০১

মোবাইল ব্যাংকিং মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবাকে সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক ও নিরাপদে জনগণের আরও কাছে নিতে এবার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। যদিও কমিশনের এই উদ্যোগকে অনেকেই হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখতে চান, তবে বিটিআরসি বিষয়টিকে নেতিবাচক ভাবতে রাজি নন। তারা মনে করছেন, এই উদ্যোগের ফলে এ খাতে বিরাজমান অনিয়ম দূর হয়ে জবাবদিহির পরিবেশ তৈরি হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাকে লাইসেন্সিংয়ের আওতায় আনতে সব ধরণের আর্থিক সেবা বিটিআরসির অধীনে আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে মোবাইলফোন অপারেটর ও বিটিআরসির মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি।  

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিলেই চলতো। এখন সেই প্রক্রিয়ায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়টি। যৌক্তিক কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, মোবাইলফোনের মাধ্যমে কোনও ধরণের সেবা দিতে হলে তা টেলিযোগাযোগ খাত সম্পর্কিত  খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকবে, কিন্তু কমিশনের কোনও অনুমোদন থাকবে না এবং মোবাইলফোন কোম্পানির কোনও সমস্যা হলে কমিশনে যোগাযোগ করা হবে, তা হতে পারে না। বরং একটি জবাবদিহিমূলক সংস্কৃতি চালু করতেই এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।  

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে প্রতিদিন সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে।       

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিটিআরসির সচিব সরওয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে কথা হতে পারে। কারণ এই সেবার সঙ্গে মোবাইলফোন অপারেটররা জড়িত। তিনি জানান, বিষয়টি আগে বিভিন্ন ফোরামে উঠবে, কমিশনেও (বৈঠকে) আলোচনা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের কাজ চলেছ। এই কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা আরও নিরাপদ হবে। কারণ বাজারে অবৈধ সিম থাকার কারণে (বিশেষ করে অনিবন্ধিত) এখনও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। প্রতারকরা বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, সিম স্পুফিংয়ের মাধ্যমে এজেন্টদের হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে অপরাধ করছে। সিম নিবন্ধন না থাকায় অপরাধীচক্র এসব করে পার পেয়ে যাচ্ছে। সিম নিবন্ধন করা থাকলে সহজেই তাদের চিহ্নিত করা যাবে এবং মোবাইল সংক্রান্ত অপরাধ কম হবে। এ কারণে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সবচেয়ে বেশি সুফল পাবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমও বারবার এ বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন হলে মোবাইল আর্থিক সেবাসহ মোবাইলফোন ভিত্তিক সব ধরণের সেবা শতভাগ নিরাপদ করা সম্ভব হবে।

মোবাইল ব্যাংকিং নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ অক্টোবর সচিবালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিটিআরসি, মোবাইল সেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও), মন্ত্রণালয় ও ডট (ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকম)-এর প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। তাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে বলা হয়। প্রয়োজন হলে এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেল) –এর প্রতিনিধিও রাখা যেতে পারে বলে বৈঠকে মন্তব্য করা হয় এবং বিষয়টি নিয়ে অ্যানালাইসিস করতে বলা হবে। ওই বৈঠকে দুটি বিষয়ে জোর দিতে বলা হয়। এক. রাজস্ব, ও দুই.অপরাধ।


আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়ে বলা হয়, কস্ট মডেলিংয়ের ইস্যুতে পিটিডি কাজ করলে তা খুবই হেল্পফুল হবে। আর ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপারে বিটিআরসিকে গাইডলাইন তৈরির ব্যাপারে বলা হয়।   

বর্তমানে গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারেটেলের নেটওয়ার্কে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পরিচালিত হচ্ছে। বাদ ছিল টেলিটক ও সিটিসেলের নেটওয়ার্ক। সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইলফোন অপারেটর টেলিটকও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। জানা গেছে, কিছুদিনের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কে এই সেবা চালু করা হবে। তবে টেলিটক এই নিয়মের বাইরে থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এম. রায়হান আখতার জানান, টেলিযোগাযোগ আইন অনুসারে টেলিযোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যেকোনও ধরণের সেবা দিতে হলে বিটিআরসির অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বেলায় সে ধরণের কোনও অনুমোদন নেওয়া হয় না। মোবাইল ব্যাংকিং লাইসেন্সিংয়ের আওতায় এলে তা দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে থাকবে। তখন ব্যাংকিং বিষয়গুলো দেখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং টেলিযোগাযোগ বিষয়গুলো দেখবে বিটিআরসি।

তিনি আরও বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে নতুন গাইডলাইন তৈরি করা হবে এবং ওই গাইডলাইনে লাইসেন্সিং বিষয়টি ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী সব প্রতিষ্ঠানকে বিটিআরসি থেকে পারমিশন বা অ্যাপ্রুভাল নিতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, মোবাইলফোন অপারেটরদের কোনও একটা অনুমতি তো বিটিআরসি থেকে নিতেই হবে। তা না হলে মোবাইল ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হবে টেলিযোগাযোগ নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

/এইচএএইচ/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন