ফেসবুক মূলত পৃথিবীর বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি অংশকে কোনও না কোনওভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে তারা চায় না অন্যকোনও প্রতিষ্ঠান এসে এই জায়গাটি দখল করুক। সেজন্য তাদেরকে বিভিন্ন পরিকল্পনা করতে হয়।
ফেসবুকের ডেভেলপারদের নিয়ে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সেটাই এফ-৮ সম্মেলন হিসেবে পরিচিত। এতে ফেসবুকের বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবারের এফ-৮ সম্মেলনেও ফেসবুক সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এখানেই বলা হয় গোটা বিশ্বকে শাসনের পরিকল্পনার কথা।
সম্মেলনে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বলেন, আমরা পৃথক সম্প্রদায় থেকে একটি বৈশ্বিক সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছি। আর ফেসবুকের লক্ষ্য হলো পুরো পৃথিবীকে এক করতে সহায়তা করা।
বর্তমানে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা নজিরবিহীন। মাসে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ দশমিক ৬ বিলিয়নের ওপর। অন্যদিকে ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি এবং ফটো শেয়ারিং সাইট ইনস্টাগ্রামের ব্যবহারকারী রয়েছে ৪০০ মিলিয়ন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সবচেয়ে বড় এই সাইটটি ২০১৫ সালের শেষ তিন মাসে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার আয় করে। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু অসংখ্য ব্যবহারকারীর জন্য নয় বরং ব্যবহারকারীরা ফেসবুকে যে সময় ব্যয় করে সেজন্য। যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়স্করা প্রতি মাসে গড়ে ৩০ ঘণ্টা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে। এর মধ্যে ২৬ ঘণ্টা তারা ব্যয় করে ফেসবুকে।
প্রত্যেক ব্যবহারকারীর প্রতিটি ক্লিক, লাইক, কমেন্ট এবং প্রতিটি সংযোগ একটি উন্নত প্রোফাইল তৈরি করে। আর তারপর বিভিন্ন ব্র্যান্ড ফেসবুককে অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে এসব প্রোফাইলের বয়স, স্থান, রিলেশনশিপ ইত্যাদি বিবেচনা করে তাদের কাজ করে যায়। এভাবেই ফেসবুক আয় করে থাকে।
ফেসবুকে সবাই আকৃষ্ট হয় এর কন্টেন্টের কারণে। এর প্রথম ধাপটি হলো- পার্সোনাল, যেখানে প্রত্যেকের নিজস্ব স্ট্যাটাস আপডেট, চিন্তা-ভাবনা, আবেগ-অনুভূতি ইত্যাদি প্রকাশ পায়। দ্বিতীয় ধাপটি হলো- ফটোজ। এই ধাপটি বিকশিত হয়েছে স্মার্টফোনের ব্যাপক প্রসারের কারণে। এখন সবার পকেটেই একটি করে স্মার্টফোন তথা ক্যামেরা থাকে। আর সেটা দিয়ে ব্যক্তি তুলে নিতে পারে ছবি। কখনও কখনও একটি ছবি হাজার হাজার শব্দের একটি প্রবন্ধের চেয়েও বেশি কার্যকর।
এর তৃতীয় ধাপটি হলো- গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নির্মিত ভিডিও, ছবি, প্রবন্ধ ইত্যাদি শেয়ার করা। ফেসবুকের মাধ্যমে বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে এসব ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
এগুলো ছাড়াও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বুকমার্কিং, ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও, কাস্টমার সার্ভিস রোবটস, পেমেন্টস এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অনন্য সব সুবিধা রয়েছে। এই দিকগুলোতে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চেয়ে ফেসবুক অনেক বেশি এগিয়ে আছে। ফলে অন্য যেকোনও সাইটের চেয়ে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি।
ফেসবুক যখন বুঝতে পারলো যে, মানুষ তাদের কথোপকথন গোপন রাখতে চায় তখন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মেসেঞ্জারকে স্বতন্ত্র একটি অ্যাপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলো এবং বেশ সফলতার সঙ্গে তারা এটা করতে সক্ষম হয়েছে। যখন ফটো শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রাম মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছে ঠিক তখনই ফেসবুক এটা কিনে নেয়। অর্থাৎ এখানে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দূরদর্শীতা লক্ষ্যণীয়।
ফেসবুকের নতুন ফিচার লাইভ ভিডিও টুলও বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। সব সংবাদ প্রতিষ্ঠানের ওপর ফেসবুকের এক অবিশ্বাস্য ক্ষমতা এবং প্রভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্যতম একটি বৈশ্বিক গণমাধ্যমের একজন ডেভেলপার। তিনি আরও বলেন, গত দুই বছরে সংবাদ প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ত্বরান্বিত হয়েছে ফেসবুক এবং গুগলের মাধ্যমে।
ফেসবুকের এই এফ-৮ সম্মেলনে মেসেঞ্জার বটস উদ্বোধন করা হয়েছে। এটা এমন একটা প্রযুক্তি যার ফলে বিজনেস এবং ডেভেলপারদের সার্ভিসগুলো মেসেঞ্জারের চ্যাট অপশনে সহজলভ্য হবে। এই প্রযুক্তি চালু হওয়ার আগে বিভিন্ন সেবা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করতে হতো কিন্তু মেসেঞ্জারে নতুন অপশন যুক্ত হওয়ার পর এই অ্যাপস থেকেই বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে।
ফেসবুক ৩৭টি দেশের জন্য বিনামূল্যে কয়েকটি সেবা চালু করেছে। এই সার্ভিসের আওতায় মোবাইলফোন ব্যবহারকারীরা কতগুলো অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন।
ফেসবুকের পথে অন্যতম একটি কাঁটা হলো স্ন্যাপচ্যাট। প্রতিদিন এর সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা থাকে ১০০ মিলিয়নের ওপর। সেজন্য ফেসবুক ২০১৩ সালে ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে স্ন্যাপচ্যাটকে কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু স্ন্যাপচ্যাট সে প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। পরবর্তীতে ফেসবুক স্ন্যাপচ্যাটের মতোই একটি মেসেঞ্জার সার্ভিস চালু করতে চেয়েছিল যার নাম স্লিংশট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর চালু করা হয়নি।
এ সম্পর্কে ফেসবুকের সাবেক কর্মকর্তা পল অ্যাডামস বলেন, ফেসবুকের জন্য স্ন্যাপচ্যাট কোনও হুমকি নয়। তবে এটা মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপের জন্য হুমকি হতে পারে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
/এইচএএইচ/
আরও পড়তে পারেন: ইউটিউব ব্যবহারের মজার কিছু কৌশল